জীবনে প্রথম দেখলাম ফেরি ডুবির ঘটনা। ২০ বছর ধরে পাটুরিয়া ঘাটে হোটেল ব্যবসা করে আসছি। চোখের সামনে দেখলাম ফেরি আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে ফেরিতে থাকা একেকটি ট্রাক একেকটি ট্রাকের ওপর দুমড়ে-মুচড়ে পড়ছে । বিকট শব্দে হোটেল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই। পরক্ষণেই দেখি ঘাটের সামনে ফেরিটির অর্ধেকাংশ নদীতে ডুবে গেল। চারদিকে মানুষের হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। আমিও তড়িঘড়ি করে দোকান বন্ধ করে সেখানে যাই।
কথাগুলো পাটুরিয়া ঘাট সংলগ্ন হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া নয়টার দিকে এ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আমানত শাহ নামের বড় রো রো ফেরি সতেরোটি পণ্যবাহী ট্রাক ও আট দশটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছিল। সকাল পৌনে দশটার দিকে ফেরিটি পাটুরিয়া ৫ নং ফেরি ঘাটে ভিড়ছে ঠিকই কিন্তু হঠাৎ ফেরির ভিতর পানি উঠে পড়ে। এসময় তড়িঘড়ি করে ফেরিটি পন্টুনের সাথে বেঁধে একটি পকেট খুলে দেয়। এসময় তিন-চারটি ট্রাক ফেরি থেকে চলে আসতে পারলেও নিমিষের মধ্যে ফেরিটি কাত হয়ে ডুবে যায়। এসময় ট্রাকগুলো একটির উপর আরেকটি পড়ে নদীতে পড়ে যায়। সাথে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও নদীতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরপরে সকাল থেকেই চলছে এ ফেরি এবং আর ট্রাকগুলো উদ্ধার তৎপরতার। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা এসেছে। এসেছে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল দলসহ বিভিন্ন টিম। কিন্তু উদ্ধার তৎপরতায় কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। সন্ধ্যা নাগাদ এই জাহাজটি পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন আরিচা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া ওই ফেরিতে ১৭ টি ট্রাক এবং ৫/৬ টি মোটরসাইকেলও ছিলো।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ মানবজমিনকে বলেন, ডুবে যাওয়া ফেরি এবং ট্রাকগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় রওনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর আমাদের কাছে আসেনি। কোন মানুষ নিখোঁজের অভিযোগও পাইনি। তিনি আরো বলেন, কি কারণে ফেরিটি ডুবেছে তা উদঘাটনে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।