× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সরজমিন বরংগাইল হাট / সার বিক্রিতে প্রতারণা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে
২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার

মানিকগঞ্জের কৃষিনির্ভর শিবালয় উপজেলায় কৃষকদের সঙ্গে সার নিয়ে চলছে প্রতারণা। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে টিএসপি সারের দাম হাঁকানো হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত বেশি। পাশাপাশি ইউরিয়া, পটাশ ও ডিএপি সার বেচাকেনাতেও নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। বেশি দামে সার ক্রয় করতে না পেরে অনেক কৃষক এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিলারসহ খুচরা সারের দোকানে। আবার অনেকে নিরুপায় হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে সার নিচ্ছেন। কৃষকদের অভিযোগ বাড়তি টাকায় সার পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমন চিত্র দেখা গেল শিবালয় উপজেলার বরংগাইল হাটে। সরজমিন সোমবার দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেল, তিনজন সারের ডিলার প্রকাশ্যেই কৃষকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে সার বিক্রি করছেন।
এই রমরমা বিকিকিনির এক সাব-ডিলার মেসার্স নিজাম বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. নিজাম উদ্দিন। সব সময়ই কৃষকের ভিড় থাকে দোকানে। কৃষকদের সঙ্গে সারের দরদাম নিয়ে চলে বাকবিতণ্ডা। মো. নিজাম উদ্দিন মহাদেবপুর ইউনিয়নের সাব-ডিলার। কৃষকদের মুখে অভিযোগের একই সুর সারের বাড়তি দাম। তবে বেশি দামে সার বেচাকেনার  কথা অকপটে স্বীকার করেছেন সাব-ডিলার মো. নিজাম উদ্দিন নিজেই। ইউরিয়া, পটাশ ও ডিএপি সার প্রতিবস্তা সরকার নির্ধারিত দাম থেকে অল্প টাকা বেশি বিক্রি করলেও মূলত টিএসপি সার বিক্রিতে চালাচ্ছেন বড় ধরনের প্রতারণা। বস্তাপ্রতি টিএসপি সার ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বেশি নিচ্ছেন। যেখানে সরকার প্রতি বস্তা টিএসপি সার নির্ধারণ করে দিয়েছে ১১শ’ টাকায়। বেশি দামে সার বেচাকেনার ফলে কৃষকদের কাছে বিক্রীত সারের লিখিত কোনো রিসিটও দেয়া হচ্ছে না।  বরংগাইল হাটে সরকারের তালিকাভুক্ত তিনটি সারের দোকানে সোমবার দেখা যায়নি কোনো কৃষি অফিসারকে। এ নিয়েও কৃষকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মো. নিজাম উদ্দিনের দোকানে সার নিতে আসা কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, দুই বস্তা টিএসপি সার নিয়েছি ২৭শ’ টাকা দিয়ে। এক বস্তার দাম পড়েছে সাড়ে ১৩শ’ টাকা। অথচ সরকারি রেট প্রতি বস্তা ১১শ’ টাকা। দুই বস্তা সারে ৫শ’ টাকা বেশি নিয়েছে। একই গ্রামের কৃষক মো. আলমাছ মিয়া বলেন, জমি থেকে পানি নেমে গেছে, এখন ফসল আবাদ করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ১১শ’ টাকা বস্তার টিএসপি নিলাম ১৩৫০ টাকায় আর ৭৫০ টাকা বস্তার  পটাশ  নিলাম ৯০০ টাকা দিয়ে। সব মিলে ১০ বস্তা সার নিয়েছি। ইচ্ছেমতো এভাবে সারের দাম বাড়ানো হলে কৃষক কোথায় যাবে?
শিমুলিয়া ইউনিয়নের কাছিধারা গ্রামের কৃষক জামাল খান বলেন, দুই বস্তা পটাশ সারের জন্য বরংগাইল হাটের সাব-ডিলার নিজামের দোকানে গেলে সংকট দেখিয়ে আমাকে সার দেয়নি। আসলে সাংবাদিকদের সামনে দাম বেশি চাইতে না পারায় আমাকে সে বলেছে পটাশ সার নেই। আমাদের মতো দরিদ্র অসংখ্য কৃষক সার নিতে এসে প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার হলেও দেখার কেউ নেই। সাংবাদিকরা যখন বরংগাইল হাটে সারের দাম নিয়ে ডিলার এবং সাব-ডিলারের সঙ্গে কথা বলতে চায় তখন শুরু হয় নানা টালবাহানা। সাব-ডিলার নিজাম উদ্দিন সাংবাদিক দেখামাত্র কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠেন। পাশাপাশি কৃষকদের সাফ সাফ জানিয়ে দেন কৃষি কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া এখন থেকে এক কেজি সারও বিক্রি হবে না। এ কথা  শোনার পর পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপস্থিত কৃষকেরা। ওই সাব-ডিলারের নিজের মনগড়া ও বানানো নিয়মের কোনো ভিত্তি নেই এবং এমন নির্দেশনা আমার কাছে নেই বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন।
সার বেচাকেনায় অনিয়ম নিয়ে সাব-ডিলার নিজাম উদ্দিন বলেন, টিএসপি সার সংকট হওয়ায় সেই সার বাড়তি টাকা দিয়ে কিনে এনেছি। তাই বাধ্য হয়ে দাম বেশি নিতে হচ্ছে। এক বস্তা টিএসপি সার বিক্রি করছি ১৩৫০ টাকা। সরকারি রেট ১১শ’ টাকা, আপনি কেন বেশি নিচ্ছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ডিও’র মালামাল না থাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্য উপায়ে বেশি টাকা দিয়ে টিএসপি সার আনার কারণেই দাম বেশি নিতে হচ্ছে। দাম বেশি নেয়া হলেও সেটা কৃষকের কাছে বলেই নেয়া হচ্ছে। এই কথার কিছুক্ষণ পরেই সুর পাল্টে ফেলেন নিজাম উদ্দিন। কৃষকদের উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের সামনেই বলে উঠেন, সরকার যে দামে সার বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন সে দামেই বিক্রি করবো। তবে এখন থেকে কৃষি কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া এবং মহাদেবপুর ইউনিয়নের বাইরের কারও কাছে সার বিক্রি করবো না। শিবালয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (বরংগাইল ব্লক) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে কিনা এ নিয়ে প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করা হয়। তবে সোমবার প্রশিক্ষণ থাকায়  বরংগাইলে যেতে পারিনি। লাল শালুর কাপড়ে লেখা সারের দামের তালিকা প্রতিটি ডিলার ও সাব- ডিলারের দোকানে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে।
কৃষকদের বলেছি- সঠিক দাম দিয়ে সার ক্রয় করতে। আমরা থাকাকালীন সময়ে দাম বেশি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, সারের দাম নিয়ে এর আগে কয়েকজন কৃষক আমাকে অবগত করেছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি সেই সাব-ডিলারদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম। এখন যদি কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে সারের দাম নিয়ে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাই সেক্ষেত্রে আমি কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আর আমার লোকজন যখন বাজার মনিটরিংয়ে যায় তখন সঠিক দামেই সার বিক্রি করে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট চালানো হবে। সার সংকট আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক ডিলার ও সাব-ডিলারের কাছে আমাদের অফিসার পাঠিয়েছিলাম। তথ্য অনুযায়ী ডিলার ও সাব-ডিলারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সার রয়েছে। কেউ যদি সংকটের কথা বলে সেক্ষেত্রে কাগজপত্র ঘাঁটলেই বেরিয়ে আসবে সংকট আছে কিনা। আর যদি কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে  তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি কার্ড দিয়ে সার নেয়ার কোনো বিধান আছে কিনা সে সম্পর্কে  কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান বলেন, এ নিয়ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ছিল। সেটা এখন অ্যাকটিভ নেই। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো নির্দেশনা নেই যে, সার পেতে কৃষি কার্ড লাগবে।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর