× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কাওরান বাজারের চিঠি / জনগণের সমিতি কোথায়?

মত-মতান্তর

সাজেদুল হক
৯ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করিয়াছি;’

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় এভাবেই জনগণকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অষ্টম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবনাকেও সংবিধানের অংশ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তো সেই জনগণের অবস্থাটা এখন কেমন? বুঝে নেয়া দরকার অজান্তে বড়লোক হয়ে জনগণের কথা বলছি না। তাদের কথা আলাদা। এবং নিশ্চিতভাবেই এটা বলা যায় তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তো আজ সকাল সকাল সংবাদপত্রে হেডলাইন দেখলাম, ‘বলিরপাঁঠা সাধারণ মানুষ।’ কয়দিনে কী খেলাটাই না হয়ে হয়ে গেলো তাদের নিয়ে।

গত বুধবার রাতে জানা গেল, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ টাকা। এ নিয়ে কিছুদিন ধরেই অবশ্য আলোচনা চলে আসছিল।
প্রধান যুক্তি দেয়া হচ্ছিল, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। সুতরাং আমাদেরও বাড়াতে হবে। করোনার তীব্র প্রতাপের সময় বিশ্ববাজারে যে তেলের দাম তলানিতে ঠেকেছিল তখন কি আমাদের দেশে তেলের দাম কমেছিল। সে প্রশ্ন তোলা নিষেধ! বারবার এটাই বলা হচ্ছে যে, আর লোকসান দেয়া সম্ভব নয়।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘৫ মাসে ১ হাজার ১৪৭ কোটি লোকসান হলে, তার আগে বিপিসি অনেক লাভও করেছে। সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার বেশি। ট্যাক্স-ভ্যাটের বাইরে যা শুধুই মুনাফা। ট্যাক্স-ভ্যাট তো নির্ধারিত। সরকার ট্যাক্স-ভ্যাট থেকে প্রতিবছর ৯-১০ হাজার কোটি টাকা পায়। সরকারের সব রাজস্ব আয়ের মতো এই টাকাও কেন্দ্রীয় কোষাগারে চলে যায়।’ সূত্র: ডেইলি স্টার

তো যা বলছিলাম, ডিজেলের দাম বাড়ার খবরে বাস-ট্রাক মালিকরা এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেননি। তারা ঘোষণা ছাড়াই সব বন্ধ করে দেন। এই এক অলৌকিক ধর্মঘট। পুরনো ফর্মুলা অনুসরণ করে জিম্মি করে ফেলা হয় সাধারণ মানুষকে। তারা অসহায়। তাদের কোনো সমিতি নেই। আসরে নামেন সাবেক মন্ত্রী, পরিবহন সেক্টরের অন্যতম প্রধান নেতা শাজাহান খান। আমরা বোকা জনগণ। তিনি আমাদেরকে বলেন, ‘মালিক বা শ্রমিকেরা পরিবহন ধর্মঘট ডাকেনি। পরিবহন ধর্মঘট বলে আমি কিছু জানি না। পরিবহন ধর্মঘট কে ডেকেছেন, তা আমার জানা নেই।’
শাজাহান খান না জানলেও কী এক অদ্ভুত কারণে সড়ক পরিবহন সমিতির নেতাদের সঙ্গেই বৈঠকে বসেন সরকারের প্রতিনিধিরা। প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তই আসে সেখান থেকে। বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয় ২৭ শতাংশ।

বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। ধর্মঘট না ডেকেও তারা কীভাবে তা প্রত্যাহার করে নিলেন সে প্রশ্নের অবশ্য মীমাংসা হয় না।
ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও জনগণের মুক্তি মিলেনি। কাগজে-কলমে ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু বাসে বাড়তি ৫০ শতাংশ ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। নিরুপায় মানুষ। কোথায় যাবে তারা। আগেই বলেছি তাদের কোনো সমিতি নেই। তো আজকের পত্রিকার শিরোনামগুলোতে একবার চোখ রাখা যায়, ‘পরিবহন ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য।’ ‘খুশিমতো বাড়িয়ে নিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়’। ‘বাড়তি ভাড়ায় নৈরাজ্য, ক্ষুদ্ধ যাত্রীরা।’ ‘নতুন বাস ভাড়ায় পুরনো নৈরাজ্য’।

জনগণের এই জিম্মিদশা অবশ্য হঠাৎ করে আসেনি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এটা চলে আসছে। নানা সমিতি আর অল্পকিছু মানুষের ইশরাতেই চলছে সব। সাধারণ মানুষের যেন বলার কিছু নেই। অথচ তাদের নিয়েই তো এই দেশ। তারাই তো এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর