× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নয়, এটি এখনই সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) নভেম্বর ১২, ২০২১, শুক্রবার, ৪:১৭ অপরাহ্ন

কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে বেশীরভাগ আলোচনাই হচ্ছে ভবিষ্যতের নানা সংকট মোকাবেলা নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে কী সংকটে পড়বে বিশ্ব এবং এ থেকে বাঁচতে কত সালের মধ্যে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এই হচ্ছে আলোচনার বিষয়। বিশ্ব নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজার বন্ধ করা হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। অথচ বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন এখন প্রতিদিনকার বাস্তবতা। তাদেরকে এর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে যত শরনার্থী ও উদ্বাস্তু রয়েছেন তারা যেসব দেশ থেকে এসেছেন তার প্রায় সবগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনের সবথেকে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ। এসব দেশ বন্যা ও ঘূর্নিঝড়ে প্রায় প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছে খড়া ও মরুকরণ।
এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। বুরকিনা ফাসো থেকে বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান থেকে মোজাম্বিক, জলবায়ু পরিবর্তন এসব দেশে দারিদ্রতা, অস্থিতিশীলতা এবং উদ্বাস্তু সংকট বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। তীব্র খড়ার কারণে অনেক জনবহুল এলাকা অনুর্বর হয়ে পড়েছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি মানুষ এখন উদ্বাস্তু হওয়ার পথে। ঘন ঘন বন্যা ও ঘূর্নিঝড় মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলেছে। আর এটিই বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। দশকের পর দশক ধরে এসব দেশে সহিংসতা লেগেই আছে।

আফগানিস্তানে গত ৪০ বছর ধরে সহিংসতা চলছে। দেশটির মানুষ এমনিতেই ঝুঁকিতে আছেন। এরমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন আফগানদের টিকে থাকাকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে খড়ার প্রকোপ বেড়েছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। এ বছর কৃষির উৎপাদন কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। শীতকালীন ফসল উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। দেশটিতে শুধু এ বছরই ৬ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ নিজের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। উন্নত দেশগুলোর মানুষের কাছে এখনো এসব অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কিন্তু ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি গত আগস্ট মাসেই জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ইউরোপে এ বছর ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। চরম তাপ প্রবাহ দেখতে পেয়েছে কানাডা। সাইবেরিয়ার মতো জায়গায় দাবানলে পুড়ে গেছে হাজার হাজার একর বনাঞ্চল। তুরস্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্রই বনে আগুনের খবর পাওয়া গেছে বছরজুড়ে।

বিশ্ব এখন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কিন্তু বর্তমানে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে তাদের পাশে এখনো কাউকে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রাথমিকভাবে যেসব আঘাত আসবে তা হয়তো ধনী রাষ্ট্রগুলো সামলে নিতে পারবে। মোজাম্বিকের মত দেশগুলো কীভাবে এই নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবে? ২০১৯ সালে ঘূর্নিঝড় ইদাইয়ের আঘাতে দেশটিতে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেই ধাক্কাই এখনো দেশটি সামলে উঠতে পারেনি। তাই মোজাম্বিকের মতো দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করা এখন সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব যতো দেরি করবে, তার পরিণতি ততো খারাপ হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখনই যদি কঠিন জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ২০ কোটি মানুষের নতুন করে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এই হার এখনকার তুলনায় দ্বিগুন। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা আর কোনো ভবিষ্যতের বিষয় নয়। এখনই যদি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে শীগগিরই বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে। তাই অঙ্গীকারের আর সময় নেই, বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর