দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ১৯৭৯ সালের ২২শে নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৪টি বিভাগে ৮জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সোমবার প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে পা রাখলো ১৭৫ একরের এ বিদ্যাপীঠ।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীন রয়েছে ৩৪টি বিভাগ। রয়েছে ৩৯০ জন শিক্ষক ও ১৫ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী এবং ৭৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে প্রায় অর্ধশত বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন এখানে।
সম্প্রতি অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৭ শিক্ষক স্থান পেয়েছেন। এখানে রয়েছে সুবিশাল স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল, চিকিৎসা কেন্দ্র, ব্যয়ামাগার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। রয়েছে ক্যাম্পাস ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদ ও দৃষ্টিনন্দন মফিজ লেক। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খেলার জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে আটটি হল। তবে আবাসন সুবিধার আওতায় মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ইবি আবাসিক উল্লেখ থাকলেও ৪২ বছরে তা পূর্ণতা পায়নি। বর্তমানে পরিবহন পুলে ৪৩টি পরিবহন রয়েছে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় আবাসন ও পরিবহন সুবিধা অপ্রতুল। এদিকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন বিভাগ খোলা হলেও শ্রেণিকক্ষের বন্দোবস্ত হয়নি পূর্ণরূপে। শিক্ষক, ল্যাব ও সেমিনার লাইব্রেরি সংকট নিয়েই চলছে নতুন বিভাগগুলো। অনেক বিভাগে রয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। এছাড়াও পর্যাপ্ত ল্যাব না থাকায় গবেষণাবিমুখ হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞান অন্ষুদীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিভ্রান্তি কাটেনি এখনও। শিক্ষার্থীরা পায়নি প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পার করলেও এসকল সংকট সমাধান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, ৪২ বছরেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ইবি। যার প্রধান কারণ লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি।
বর্তমানে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের অধীন নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৪টি সমাবর্তন পেয়েছে ইবি। যাত্রালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন ভিসি ইবির হাল ধরেছেন। বর্তমানে ১৩ তম ভিসির দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম। তিনি বলেন, করোনা শেষে ক্যাম্পাসের একাডেমিক এবং প্রশাসনিকসহ সব কাজে প্রবাহমানতা তৈরি করার চেষ্টা করছি। সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসন পরিচালনায় স্বচ্ছতা এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলের সহযোগিতায় আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।