সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত রোববার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, বিভিন্ন পেশার আড়লে ডাকাতিই গ্রেপ্তারকৃতদের মূল পেশা। এই ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাক চুরির পর সেই ট্রাক নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে থাকে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে ট্রাক চালায়। এই ডাকাত চক্রটি বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং মার্কেটের দোকান, শোরুম, জুয়েলারি শপে ডাকাতি করে। গতকাল দুপুরে কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- দলনেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৫), আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), আলী হোসেন (৫৬), সুমন মুন্সি (২০) ও হুমায়ুন কবির (৩৫)। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মার্কেট, অফিস ও বাসা-বাড়িতে থাকা নৈশপ্রহরীদের হাত পা ও মুখ বেঁধে মার্কেটে ডাকাতি করতো। গত ৬ই নভেম্বর রাতে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দুর্গাহাটা বাজারে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ট্রাক নিয়ে এসে তিনটি মার্কেটে ডাকাতি করে। তারা মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশপ্রহরীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে তালা কেটে ৯টি দোকানে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতি করে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড় মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে। খন্দকার আল মঈন বলেন, তাদের কাছ থেকে দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের ৩টি রুলির বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ৩টি গলার হার, ৪টি গলার চেইন, ৩ জোড়া কানের দুল, ১টি বড় আংটি, ১টি ছোট আংটি ও ৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠনকৃত বিপুল পরিমাণ বস্ত্র (৬২টি থ্রি-পিস, ১৪১ পিস শাড়ি, ৮৫ পিস গেঞ্জি, ৯ সেট প্যান্টের পিস, ৫টি ধুতি কাপড়, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ) উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, নম্বর প্লেটের সূত্র থেকেই অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিন পিস্তলসহ চার রাউন্ড গুলি, একটি ভল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, ১০টি লাঠি, একটি হাতুড়ি একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। খন্দকার আল মঈন বলেন, বগুড়ায় একটি ডাকাতির ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে শনাক্ত করা হয়। এই দলটি বগুড়া সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, বিভিন্ন পেশার আড়ালে তারা ডাকাতি করতো। ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। তাদের স্থানীয় নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও তারা সাভার ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাস করে এবং এই সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রাখতো। ইতিপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া টাঙ্গাইল, সিংগাইর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে।