আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর সাবেক বিচারক মোসা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সিজ (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। গতকাল আপিল বিভাগ সাবেক এই বিচারকের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সিজ (প্রত্যাহার) করে আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার অদ্য ২২/১১/২১ তারিখ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সশরীরে উপস্থিত হন। আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১নং ক্রমিকের মামলায় শুনানি অন্তে ওই বিচারকের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সিজ করা হয়েছে- মর্মে আদেশ প্রদান করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পরবর্তীতে প্রকাশ হবে।
গত ১১ই নভেম্বর মোছা. কামরুন্নাহার রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়, সে বিষয়ে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের আলোকে এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
১৩ই নভেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে কামরুন্নাহারের দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেজন্য একটা চিঠি দেবেন তিনি। পরদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই বিচারককে (কামরুন্নাহার) আদালতে না বসতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একইদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোছা. কামরুন্নাহারকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হলো।
সেদিন জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশনের প্রযোজক আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন এক নারী। ওদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। নিম্ন আদালতে জামিনে ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ২০১৯ সালের ১৮ই জুন হাইকোর্ট আসলাম শিকদারকে জামিন দিলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করেন। পরে এই স্থগিতাদেশ বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরেও আসামি আসলামকে জামিন দেন বিচারক কামরুন্নাহার। নিম্ন আদালত থেকে আসলাম শিকদারের জামিন পাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের নজরে এনেছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তখন আপিল বিভাগ বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি আনে। নথি আসার পর তা পর্যালোচনা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এরপর বিচারক কামরুন্নাহারকে গত বছরের ১২ই মার্চ স্থগিতাদেশ থাকার পরও অন্য এক ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ২রা এপ্রিল আপিল বিভাগ তাকে তলব করেছিল। কোন এখতিয়ার বা ক্ষমতাবলে ওই আসামিকে তিনি জামিন দিয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। সেই ফৌজদারি আবেদন ১৫ই নভেম্বর আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিলেন, আদেশ দেয়া হলো। তবে কী আদেশ দেয়া হয়, তা জানা যায়নি। এরপর গতকাল মামলাটি আদেশের জন্য কার্যতালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। এ অবস্থায় সকালে আপিল বিভাগে হাজির হন কামরুন্নাহার।