বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল সকালে ওই বিক্ষোভে বিভিন্ন পোশাক কারখানার প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক অংশ নেন। তারা সড়কে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষোভ চলাকালে শ্রমিকরা তাদের দাবির কথা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ন’টা থেকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে একপর্যায়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে শত শত পোশাকশ্রমিক জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদল শ্রমিক সেখানে থাকা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
তবে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভরত পোশাক শ্রমিকদের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এরপর বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভরত বেশির ভাগ শ্রমিক মিছিল নিয়ে মিরপুর ১৪ নম্বরের দিকে যেতে থাকেন। তখনো অনেক শ্রমিক সড়কে অবস্থান করেন।
দুপুর ৩টার দিকে মিরপুর-১৩ নম্বর থেকে দাবি আদায়ের আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ স্থগিত করেন। দীর্ঘ ৫-৬ ঘণ্টা পর মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বিক্ষোভকারীরা মিরপুর-১৩, মিরপুর-১০, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর এলাকার সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা জানান, আমরা আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত করেছি। দাবি না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
জানা যায়, কয়েকদিন ধরে এসব এলাকার শ্রমিকদের হাজিরা ভাতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে আসছিলেন। তাদের কিছু দাবি মেনে নেয়া হলেও মঙ্গলবার বিক্ষোভের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দুই পোশাক কারখানা শ্রমিককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ মারধরের প্রতিবাদে তারা গতকাল সকাল থেকে আবারও রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় বেতন-ভাতাসহ নানা দাবির কথাও জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এদিকে সকাল ১০টায় বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীর কুড়িলে সড়ক অবরোধ করেছেন আরেকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। কুড়িল কাজীবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ওয়েমার্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানাটির শতাধিক শ্রমিক গতকাল সকাল ১০টার দিকে সড়কে অবস্থান নেন। তারা গত অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে নামার কথা জানান। কুড়িল সড়কে অবস্থান নেওয়া পোশাকশ্রমিকরা জানান, আমরা অক্টোবর মাসের বেতন পাইনি। ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে না পারার কারণে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না বলছেন মালিকপক্ষ। প্রতি মাসের ৫, ৭ বা ১০ তারিখের মধ্যে আমাদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু অক্টোবর মাসের বেতন এখনো দেয়া হয়নি। ফলে আমরা বিপদে পড়েছি।
মিরপুর বিভাগীয় উপ-কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দীন বলেন, পোশাকশ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন। শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসায় মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ১৪ পর্যন্ত পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের অনেক দাবি-দাওয়া। কয়েকদিন ধরে তারা হাজিরা ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এ দাবিটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিক্ষোভের সময় দু’জন শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে আজ সকাল থেকে তারা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে তারা অবস্থান নেন। এর পেছনে পলিটিক্যাল ইন্ধনও থাকতে পারে। কারণ, আন্দোলনকারীদের যারা গাইড করছেন, তাদের মধ্যে বাইরের বিভিন্ন ফেডারেশনের লোকজন রয়েছেন। তারা কেউ শ্রমিক না হয়েও উস্কানি দিচ্ছেন। পুলিশ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।