× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাফ ভাড়ার আন্দোলনে উত্তাপ, সমাধান কীভাবে?

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে যাত্রীদের কোনো সংঘবদ্ধ আন্দোলন দেখা যায়নি। ভাড়ার ইস্যুতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বলছেন ভাড়া বাড়ানোয় তারা বিপাকে পড়েছেন। সবকিছুর দাম বেশি। এ অবস্থায় বর্ধিত ভাড়া দেয়া কঠিন। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম করতে হবে।
এজন্য সরকারের তরফে প্রজ্ঞাপন দাবি করে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার তাদের আন্দোলনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি অর্ধেক ভাড়া (হাফ পাস) নিয়ে ঢাকায় বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ঠিকানা বাসে হাফ ভাড়া দিতে চেয়েছিলেন বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের এক ছাত্রী। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয় বাসচালকের সহকারীর সঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয় চালকের সহকারী। পরে ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে গাড়িচালকের ওই সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানীর ইম্পেরিয়াল কলেজের এক শিক্ষার্থী হাফ পাস দিতে চাওয়ায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেন রাইদা পরিবহনের এক চেকার। ১৫ই নভেম্বরের সেই ঘটনায় ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। আটকে দেন রাইদা পরিবহনের ৫০টি বাস। সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এরপর হাফ পাসের অঙ্গীকার মেলার পরই বাস ও সড়ক ছাড়েন তারা। গতকাল বুধবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হাফ পাসের দাবিতে বাস আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ইতিহাস পরিবহনে এক ছাত্রী হাফ ভাড়া দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার সাইন্সল্যাব মোড়ে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। হাফ ভাড়া নির্ধারণে সরকারের তরফে প্রজ্ঞাপন জারি করতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আজ আবার তাদের কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
দেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া দেয়ার কোনো নীতিমালা কখনও ছিল না। তবে বিভিন্ন স্থানে নিয়ম করেই পরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়া হয়ে থাকে। রাজধানীতেও কিছু পরিবহন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিত। পরিবহনে ভাড়া বাড়ার পর কোনো বাসেই হাফ ভাড়া নেয়া হয় না।
৬৯’র আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির মধ্যে ছিল বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া দেবেন। গণঅভ্যুত্থানে এই দাবি মেনেও নিয়েছিলেন তৎকালীন সরকার। অলিখিতভাবে এই নিয়ম  মেনে আসছিল কিছু কিছু পরিবহন। ঢাকায় সিটিং সার্ভিসের নামে যেসব বাস চলে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয় না। এসব বাসে গায়ে ‘হাফ পাস নেই’ বলে নির্দেশনাও লেখা থাকে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। স্মরণকালের বৃহৎ এই আন্দোলনে টনক নড়েছিল সব পক্ষের। এই আন্দোলনের পর সড়ক আইন হলেও শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি ‘হাফ পাস’টি উপেক্ষিতই থেকে যায়। চলতি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা তাদের অধিকার। যাত্রী কল্যাণ সমিতিও বলছে, হাফ পাস তাদের অধিকার। ঢাকা শহরে মোট যাত্রীর মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ। এই স্বল্প পরিমাণ শিক্ষার্থীর কাছে অর্ধেক ভাড়া নিলে মোটেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আর পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিতো আছেই।
আন্দোলনে অংশ নেয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আকমল হোসেন তুষার বলেন, তারা সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করেন সড়কে। তোয়াক্কা করেন না কোনো আইন। আর আমাদের অর্ধেক ভাড়া নিতেই তাদের যতো সমস্যা। হাফ পাস আমাদের আবদার নয়- অধিকার। আমরা অনতিবিলম্বে হাফ পাস চাই।
তরঙ্গ পরিবহনের বাসচালক মো. সাইফুল্লাহ বলেন, আমার ঘরে দুইটা স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া পোলা-মাইয়া। আমিও চাই হাফ পাস চালু হোক। কিন্তু আমাগোর প্যাটে লাথি দিয়া কি লাভ? বাসে এমন অনেক ব্যাটা আছে যারা হাফ ভাড়া দেয় আইডি কার্ড চাইলে গালাগালি করে।
দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামায় প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় বিষয়টির সুরাহা কীভাবে হবে তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না। শিক্ষার্থীদের এই দাবি পূরণ করতে হলে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, তাড়াহুড়ো করে এ বিষয়ে কিছু করা যাবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, হাফ পাস নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। আইনেও নাই। ঢাকায় প্রতিদিন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী চলাচল করে। হাফ পাস দিলে আমাদের সরকার থেকে ভর্তুকি দিতে হবে।
রাজধানীতে চলাচলকারী বিআরটিসি’র বাসেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। বিআরটিসি’র কার্যালয়ে ২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমি নির্দেশনা দিচ্ছি এই মুহূর্ত থেকে বিআরটিসিসহ সকল বেসরকারি বাস শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেবে। না দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন বিআরটিসি’র বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়া হয় না।
অর্ধেক ভাড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটা সমাধানের পথ দেখিয়েছে। সদরঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করে এমন বাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। পরিবহন মালিক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠকে করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর