× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

'কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?'

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

বাংলাভাষী প্রায়-সকলেরই  ‘আর্দশ ছেলে’ কবিতাটির নাম শুনেছেন বা জানেন। কবিতা ও কবির নাম যারা জানেন না, তারাও এর প্রথম দু’টি ছত্র নিশ্চয় জানেন বা শুনেছেন, যাতে উচ্চারিত হয়েছে এক ঐতিহাসিক সামাজিক সত্য: 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?'
 
কবিতাটিতে উচ্চারিত বক্তব্যকে 'ঐতিহাসিক সামাজিক সত্য' কেন বলা হচ্ছে, তার প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কবিতার রচয়িতার জন্ম তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের বরিশালে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে। কবিতাটি প্রকাশিত হয় শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত 'মুকুল' পত্রিকায় বঙ্গাব্দ ১৩০২, পৌষ সংখ্যায়। চলছি ১৪২৮ বঙ্গাব্দের হিসাবে কবিতাটির বয়স ১২৬ বছর।
 
প্রায় দেড়শত বছরস্পর্শী কবিতায় এমন 'আদর্শ ছেলে' প্রত্যাশা করা হয়েছে, যে 'কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে'। কবিতাটির ঐতিহাসিক সামাজিক তাৎপর্য এখানেই নিহিত। অর্থাৎ শতাধিক বছর আগেও সমাজে 'কাজের চেয়ে কথায় বড়' লোকজন বেশি ছিল। যেজন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন, 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?'
 
অন্যভাবে বললে, সমাজে যে বেশি কথা, বাগাড়ম্বর, সত্য-মিথ্যার মিশ্রণের বন্যা বইছে, তা-ও মোটেই নতুন কিছু নয়, 'ঐতিহাসিক সামাজিক সত্য'।
প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহাসিকভাবেই বেশি কথা বলার বিষয়টি বঙ্গীয় সমাজে প্রচলিত ছিল, যার প্রবলতর প্রভাব ও প্রচলন বর্তমানকালের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও ভয়াবহরূপে পরিলক্ষিত হচ্ছে।  
 
সুনির্দিষ্ট উদাহরণের বোঝা না বাড়িয়েও বলা যায়, চতুর্দিকে 'কাজের চেয়ে কথায় বড়' লোকজনের মচ্ছব চলছে। অপরাধ বা ভুল হয়ে গেছে তো কি হয়েছে? ভুল স্বীকার বা আত্মসমালোচনার বালাই নেই। বরং চলছে বড় বড় কথার ফুলঝুরি। চলছে নিজের দোষ আড়াল করার বা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে বড় বড় কথার কসরত। 
 
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, দ্রব্যমূল্য ও বাজার ব্যবস্থায়, পরিবহণ সেক্টরে নানা ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটছে। তার কোনো সুরাহার নামগন্ধ নেই। আছে বড় বড় কথার বাহার। সবচেয়ে বড় ফেরেববাজ ও চালিয়াত অবলীলাক্রমে টকশো করে বড় বড় কথা বলছে। জালিয়াতকে ধরা দুরস্ত, তার বড় বড় কথার ঠেলায় তিষ্ঠানোই দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
 
রাজনীতির প্রসঙ্গে যত কম বলা যায়, ততই ভালো। যেসব কথা বলা হচ্ছে, আমজনতা তো বটেই, খোদ বক্তাও সেসবের সত্যাসত্য নিয়ে সন্ধিহান। তথাপি চলছেই বড় বড় কথার বহর।
 
এমনকি, ধর্মীয় ওয়াজে কান পাতলেও বড় বড় কথা আর তীব্র বাগাড়ম্বর ভেসে আসে। আত্মপ্রচার, বিষোদাগার, কুৎসিত সমালোচনার বড় বড় কথায় কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম হয় শ্রোতার।
 
অথচ পৃথিবীতে বড় ও মহৎ কাজ হয়েছে নিরবে, বড় বড় কথার মাধ্যমে নয়, প্রকৃত কাজের দ্বারা। এসব শিক্ষা মনে হয় উঠেই গিয়েছে। কাজ নয়, কথাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সমস্যা বা সঙ্কটের অবসানও সম্ভব হচ্ছে না। ফাঁকতালে বড় বড় কথার শব্দ দূষণে মানুষের প্রাণ হয়েছে ওষ্ঠাগত।  
 
বিদ্যমান বাস্তবতা পর্যালোচনা করে এটাই মনে হওয়া সঙ্গত যে, প্রাচীন 'আদর্শ ছেলে' কবিতাটি আবার নতুন করে পড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। শুধু শ্রেণিকক্ষের পাঠ্যপুস্তকে নয়, আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয়, সর্বস্তরেই কবিতায় বর্ণিত  'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?' লাইনগুলো অবশ্য পাঠ্য ও আত্মস্থ করা জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবির মতোই, সবারই প্রত্যাশা এখন এমনই।
 
উল্লেখ্য, আলোচ্য 'আদর্শ ছেলে' কবিতাটির রচয়িতা কুসুমকুমারী দাস, তিনি বাংলা কবিতার উজ্জ্বলতম কবি জীবনানন্দ দাশের মা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর