স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে পুরুষদের সংখ্যাকে টপকে গেল নারীদের সংখ্যা। জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা’ (এনএফএইচএস) রিপোর্টে এমন কথা বলা হয়েছে। এনএফএইচএস-এর পঞ্চম নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যায় এখন ‘পুরুষ-নারী অনুপাত’ (লিঙ্গ অনুপাত বা ‘সেক্স রেশিও’) ১০০০:১০২০। অর্থাৎ প্রতি হাজার পুরুষ পিছু মহিলার সংখ্যা ১,০২০ জন। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৭০৭ টি জেলার ৬,৫০,০০০টি বাড়িতে চালানো হয়েছিল ওই নমুনা সমীক্ষা।
ওই রাজ্যগুলির জনসংখ্যা, জন্মহার, শিশুদের স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়গুলিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে দেশের নির্দিষ্ট কিছু রাজ্য বেছে নিয়ে করা ওই নমুনা সমীক্ষার ফল সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য কি না তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ চতুর্থ নমুনা সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দেশে প্রতি হাজার পুরুষে মহিলার সংখ্যা ৯৯১।
সে সময় জন্মহারের নিরিখে পুরুষ-মহিলার অনুপাত ছিল ১০০০:৯১৯। এর পরের পাঁচ বছরে কন্যা সন্তানের জন্মহার বাড়ায় সেই অনুপাত এখন হয়েছে ১০০০:৯২৯। ফলাফল প্রকাশিত হতেই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, "এই ফলাফলের মাধ্যমেই আমরা বলতে পারি যে ভারত উন্নত দেশগুলির দলে নাম লেখাতে চলেছে। এই প্রথম লিঙ্গ অনুপাত হাজার পার করল।"
ভারতের মধ্যে ২৩ টি রাজ্যে পুরুষ অপেক্ষা মহিলার সংখ্যা বেশিই রয়েছে। যেমন- উত্তরপ্রদেশে ১০০০ জন পুরুষ পিছু মহিলা রয়েছেন ১০১৭ জন, বিহারে মহিলার সংখ্যা ১০৯০ জন, রাজস্থানে ১০০৯ জন, ছত্তিশগড়ে ১০০০ জন পুরুষ পিছু মহিলা রয়েছেন ১০১৭ জন ১০১৫ জন এবং ঝাড়খন্ডে মহিলা রয়েছে ১০৫০ জন। তবে বেশ কিছু রাজ্যে এখনও মহিলার সংখ্যা বেশকিছুটা কম রয়েছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায়, তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়।
মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়া থেকে শুরু করে লিঙ্গ ভেদাভেদ দূর করার মতো পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করা হয়। জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ৮৮.৬ শতাংশ শিশুর জন্মই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়। দেশে বর্তমানে ৭৮ শতাংশ মায়েরাই প্রসবের পর স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যে প্রসব পরবর্তী যথাযথ যত্ন পান। আগে এই হার ছিল ৬২.৪ শতাংশ। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যে প্রসবের পর নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুও অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।
প্রসবের সময় জটিলতা এড়াতে সকলেই যেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান, তবে ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের মত রাজ্য যেখানে সেক্স রেশিও বেশ খারাপ ছিল সেখানে এবার বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। আদিবাসী রাজ্য যেমন ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় এবং দক্ষিণের রাজ্য কেরালা, তামিলনাড়ুতে সেক্স রেশিও বেশ ভাল বলে জানিয়েছে এনএফএইচএস।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া