সামুদ্রিক সীমানায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণকে সহজ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়েছে। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধন) বিল-২০২১’ শিরোনামের এই বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠান ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯৭৪ সালের ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন’ আইন সংশোধন করে এই বিলটি গত ১৬ই সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত আইনে সমুদ্র দূষণে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। পুরনো আইনে শাস্তি ছিল এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা। নতুন আইনে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন, কন্টিনেন্টাল শেলফ এবং কনটিগুয়াস জোনে অপরাধের জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে।
সাগরে অপরাধ ও ঘটনা প্রমাণে ভিডিও, ছবি, ইলেকট্রনিক রেকর্ডের বিধানও সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের জলসীমায় চলাকালে কোনো বিদেশি জাহাজে অপরাধ সংঘটিত হলে ওই ঘটনায় জড়িত অপরাধী গ্রেপ্তার ও তদন্ত পরিচালনায় এ আইন প্রযোজ্য হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাস হওয়া বিলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি জাহাজ ও সাবমেরিন প্রবেশের ক্ষেত্রে ফৌজদারি এখতিয়ার ও দেওয়ানি এখতিয়ারের বিধানসহ ৩৫টি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে দূর চালিত ডুবো যান, স্বচালিত ডুবো যান এবং মনুষ্যবিহীন ডুবো যানকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এতে সামুদ্রিক সীমানা এবং এর সম্পদের ওপর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুসারে করা হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ায় অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। এ ছাড়া বিলে ওশান গভর্নেন্স, ব্লু ইকোনমি, মেরিটাইম কো-অপারেশন সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক বিধিবিধান সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ করে মেরিন সায়েন্টিফিক রিসার্চের পদ্ধতি ও অনুশাসন সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।