৩৯৬ বছর পর, ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোসে বৃটিশ রাজতন্ত্রের অবসান। বিশ্বের নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্ম হলো সোমবার মধ্যরাতে একটি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ঘড়ির কাঁটায় ১২ টা বাজার সাথে সাথে, রানীর প্রতিনিধিত্বকারী রয়্যাল স্ট্যান্ডার্ড পতাকাটি ব্রিজটাউনের জনাকীর্ণ হিরোস স্কোয়ারে অবনমিত করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ন্যাশনাল কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারল রবার্টস-রেফার বার্বাডোসের নতুন সাংবিধানিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ডেম স্যান্ড্রা ম্যাসন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেয়ার সময় দেশের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে স্কোয়ারে উপস্থিত অতিথিরা করতালি জানিয়ে তাকে অভিবাদন জানান। রাজধানীর চেম্বারলেন ব্রিজে সারিবদ্ধ শত শত মানুষ উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন এবং জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সাথে সাথে ২১ টি বন্দুকের তোপ ছুড়ে স্যালুট জানানো হয়। বার্বাডিয়ান গায়িকা রিহানাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে জাতীয় নায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রিপাবলিক বার্বাডোস তার প্রথম যাত্রা শুরু করলো। ম্যাসন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছেন, “জটিল, ভঙ্গুর এবং অশান্তিপূর্ণ বিশ্বের মাঝে বার্বাডোসকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে।
আমাদের দেশকে অবশ্যই বড় স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেগুলি বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করতে হবে ''। প্রিন্স চার্লস এই রূপান্তরের সাক্ষী ছিলেন। তিনি অনুষ্ঠানে এক বক্তৃতায় বলেন, "বার্বাডোস প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো। আমাদের অতীতের অন্ধকারতম দিনগুলি এবং দাসত্বের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা আমাদের ইতিহাসে চিরকাল এক কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে এবং সেই সঙ্গে এই দ্বীপের লোকেরা যে অসাধারণ দৃঢ়তার সাথে তাদের পথ তৈরি করেছিল তাও বর্ণিত থাকবে ইতিহাসের পাতায়। '' ২০২০ সালে রাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি বলেছেন ''বার্বাডোসের সময় এসেছে ঔপনিবেশিক অতীতকে সম্পূর্ণরূপে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার ''।
''দেশে এতদিন চলমান বৃটিশ রাজতন্ত্র একজন নাগরিকের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে'' , অভিমত বিখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার হিলারি বেকেলস-এর । বেকেলস মনে করেন , অন্যের অধীনস্থ থাকার অর্থ নিজের জাতির সম্মান হ্রাস এবং এমন কিছু সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে আনুগত্যের শপথ নেয়া যারা জনজাতির অংশই নয়। রাজপরিবারের প্রতি বার্বাডিয়ান মনোভাবের একটি বিস্তৃত সমীক্ষা - যার প্রাথমিক ফলাফলগুলি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছে। যাতে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশেরও বেশি বার্বাডিয়ান একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার পক্ষে ছিল। একটি দ্বীপ যার একসময় নাম ছিল "লিটল ইংল্যান্ড", যেখানে লোকেরা এখনও বাম দিকে গাড়ি চালায়, কেনসিংটন ওভালে ক্রিকেট খেলে এবং ব্রাইটন সৈকতে স্নান করে- আদ্যোপান্ত এই বৃটিশ কাঠামোর বাইরে গিয়ে নতুন ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে বার্বাডোসকে। বার্বাডিয়ান নেতারা বরাবরই একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঔপনিবেশিকতা এই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩৯৬ বছরের অপেক্ষার পর বৃটিশ নৌ বীর হোরাতিও নেলসনের মূর্তি অপসারণের মাধ্যমে ২০২০-এর নভেম্বরে বার্বাডোসের স্বাধীন পথচলার শুভ সূচনা হলো।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সময় প্রিন্স চার্লসের উপস্থিতি নিয়ে ব্রিজটাউনে একটি প্রতিবাদ সংঘটিত হবার কথা থাকলেও কোভিড -১৯ এর জন্য তার অনুমতি দেয়া হয়নি । রাজতন্ত্রের প্রতি বার্বাডিয়ান মনোভাবের জরিপ থেকে জানা যায় যে, রানি এলিজাবেথের প্রতি যে কোনো ব্যক্তিগত প্রশংসা ঔপনিবেশিক যুগের দীর্ঘকাল ধরে দ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে সমর্থন করা ছাড়া মানুষের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না । এখন সেসব অতীতে ফেলে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় বার্বাডোস।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান