× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বন্ধ হয়নি সিটি সার্ভিস / ভাড়া তালিকায় শুভঙ্করের ফাঁকি

শেষের পাতা

নূরে আলম জিকু
১ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করে আসছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া আদায় করার কথা থাকলেও অধিকাংশ বাসে তা মানা হচ্ছে না। ভাড়া আদায় হচ্ছে গণপরিবহনের চালক-স্টাফদের ইচ্ছানুযায়ী। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে গত ৭ই নভেম্বর বিআরটিএ’র রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি ঢাকা মেট্রো এলাকায় ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। তালিকায় প্রতি কিলোমিটারে যাত্রী প্রতি ২.১৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বাসে সর্বনিম্ন্ন ভাড়া রাখা হয়েছে ১০ টাকা। তবে কাগজে- কলমের এই হিসাব মানা হচ্ছে না।
শুরু থেকেই বিআরটিএ ও সরকারের একাধিক সংস্থা বাস ভাড়ার চার্টের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও বাস ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। তাতেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।
ভাড়া নির্ধারণের ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো গণপরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এদিকে ওয়েবিল ও সিটিং সার্ভিস ব্যবস্থা বন্ধের কথা পরিবহন মালিকরা বলে এলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি রুটে ওয়েবিল ব্যবস্থা সচল রয়েছে। বাসের স্টাফরা ওয়েবিলের নামে যাত্রীদের মাথা গুনে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে স্টাফদের বাকবিতণ্ডা লেগেই আছে। কখনো কখনো হাতাহাতি ও চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। ওয়েবিলের কারণে ১ কিলোমিটার রাস্তাও যেতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
গণপরিবহণবিজ্ঞরা বলছেন, বাস মালিকদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারের কর্মকর্তারা জড়িত। তাদের ইচ্ছানুয়ায়ী গণপরিবহনে ভাড়ার নৈরাজ্য চলছে। সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করলে, গণপবিহন বন্ধ করে ধর্মঘট পালনের হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। সড়কে বাসের চালক ও হেলপারদেরে দিয়ে বাসের মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নেন। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের পকেট কেটে ভাড়া আদায় করে। যাত্রীদেরকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ’র যথেষ্ট জনবল নেই। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার গণপরিবহন ঢাকায় চলাচল করে। অথচ বিআরটিএ ৭ থেকে ৮ জন নিয়ে রাস্তায় অভিযান চালায়। শতাধিক রুটের জন্য এতো অল্পসংখ্যক লোকদিয়ে  গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। আইনের যথাযথ প্রযোগ করতে হবে।
সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় বাসেই ভাড়ার তালিকা রাখা হয়েছে। তবে তালিকা অনুসারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। আগের মতোই বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। কিলোমিটার হিসেবে তালিকা প্রকাশ করা নিয়েও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা রাখা হলেও কাছাকাছি কয়েকটি স্টপেজ ২ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া অধিকাংশ গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা অস্পষ্ট। যেভাবে ভাড়ার তর্ালিকা তৈরি করা হয়েছে তা বুঝতে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়েন। যাত্রী ও গণপরিবহনের শ্রমিকরা বলছেন-বিআরটিএ যে তালিকা তৈরি করেছে তা অনেক পুরনো। আগের তালিকাই কপি-পেস্ট করে ভাড়া বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তালিকায় নেই প্রতিটি স্টপেজ নাম। ফলে দূরবর্তী কোনো স্টপেজের ভাড়াতেই মধ্যবর্তী কোনো স্থানে নামতে হচ্ছে। বিআরটিএ’র তালিকা অস্পষ্ট থাকার কারণেই ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা আরও বাড়ছে।  
এদিকে, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া থেকে গাজীপুর রুটের বাস ভাড়ার চার্টে দেখা যায়, ৯টি স্টপেজের নাম ও ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় প্রায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজ উল্লেখ করা হয়নি। ফলে এসব স্থানে ভাড়াও নির্ধারণ না করায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এনিয়ে ভোগান্তিরও শেষ নেই। বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জি:) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ ও সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল আলম সরকার স্বাক্ষতির তালিকায় ফুলবাড়ীয়া থেকে কাকরাইল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার। এতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা।  ফুলবাড়ীয়া থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটারও ১০ টাকা ভাড়া।  ফুলবাড়ীয়া থেকে মহাখালী পর্যন্ত ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও মধ্যবর্তী সাতরাস্তা, নাবিস্কোর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে এসব স্থানেও ২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যদিও কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা ১৪ থেকে ১৫ টাকা। গুলিস্তান থেকে কাকলী পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের ভাড়া ২৪ টাকা, এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ টাকা। মধ্যবর্তীস্থানে এমইএস, কুড়িল বিশ্বরোড ও নিকুঞ্জ এই তিনটি স্টপেজের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে এসব স্থানের যাত্রীদের বিমানবন্দর স্টপেজের বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এমইএস ও নিকুঞ্জ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারের ভাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী এই পথে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১৯ টাকা। যাত্রীরা কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া পরিষোধ করতে চাইলেও বাসের স্টাফরা তা মানতে নারাজ। তারা তালিকা হিসাবে ভাড়া আদায় করছেন। এ নিয়ে বাসে বাসে বাকবিতন্ডা লেগেইে আছে। যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে মিরপুর ১২ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। আগে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। সম্প্রতি বাড়া বৃদ্ধির পর নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। যদিও কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া আসে ২১ টাকা ৫০ পয়সা। বাড়তি ৮ টাকা ৫০ পয়সা বাড়তি আদায় করে আসছেন এই রূপে চলাচলকারী বাসের চালক হেলপাররা। বিমানবন্দর থেকে মিরপুর ১২ নম্বরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। সরকারের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী বাসের ভাড়া ২৬ টাকা। এই রুটে চলাচলকারী বসুমতি, পরিস্থান ও প্রজাপতি পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। নতুন ভাড়া নির্ধারণের আগেও এই রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা আদায় করেছিল। বর্তমানে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা সরকার নির্ধারণ করলেও পরিবহন শ্রমিকরা নিচ্ছে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। অন্যদিকে, সাইনবোর্ড থেকে নবীনগর রুটে বাস বাড়ার নৈরাজ্য দেখা গেছে। এই রুটে চলাচল করা গণপরিবহনগুলোকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছে স্বয়ং বিআরটিএ। লাব্বায়েক ও ওয়েলকাম পরিবহনে সাভার থেকে শ্যামলী ও সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা। এই রুটে পরবর্তী স্টপেজ আসাদ গেট পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজ আসাদ গেটের দূরত্ব ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার। কিলোমিটার হিসেবে ৩ টাকা হলেও বাড়তি নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। পরিবহন শ্রমিকরা ওয়েবিল দেখিয়ে বাড়তি ১৫ টাকা আদায় করছেন। যদিও ১৫ টাকায় যাতায়াত করা যায় পরীবাগ পর্যন্ত। ফার্মগেট, কাওরান বাজার ও বাংলামোটরও একই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
মক্কা পরিবহনে কামাল নামের এক যাত্রী বলেন, সরকারের নির্ধারিত তালিকা বাসে থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বাসের কন্ডাক্টর আগের বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া আদায় করছেন। প্রায় প্রতিটি বাসের স্টাফদের সঙ্গেই এখন যাত্রীদের বাকবিতন্ডায় জড়াতে হচ্ছে। যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব দেখেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দিন দিন পরিবহন শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া হচ্ছেন। চার্ট দেখে ভাড়া দিতে চাইলেও তা মানতে চাচ্ছে না।
ওয়েলকাম পরিবহনের যাত্রী কবির হোসেন বলেন, পরিবহন মালিকরা ঘোষণা দিয়েছেন সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল বন্ধ। বাস্তবে সবই চলছে। নিদিষ্ট স্থান পরপর বাসে ওয়েবিল হয়। ওয়েবিলটি মালিক শ্রমিকদের একটা কৌশল। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পারছে। তারা কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নিতে নারাজ। মিরপুরের যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ফার্মগেট থেকে আগারগাওঁ পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। এই পথে বাসে ভাড়া আদায় হচ্ছে ২০ টাকা। এই টাকায় মিরপুর ১২ নম্বর পর্যন্ত যাওয়া যায়। ওয়েবিলের নাম করে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কোনো যাত্রী ফার্মগেট থেকে আগারগাঁও কিংবা মিরপুরে আগে নেমে গেলে নতুন করে আবারো যাত্রী তোলা হয়। এতে করে ফার্মগেট থেকে মিরপুর পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া পাচ্ছে বাসের মালিকরা।
বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জি:) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ মানবজমিনকে বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির পর নতুন করে প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা  দেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী যাত্রীরা ভাড়া দেবেন। তালিকার বাহিরে বাড়তি ভাড়া বাসের মালিক শ্রমিকরা আদায় করতে পারবেন না। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র অভিযান চলমান আছে। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বাড়তি ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট বাসের জরিমানা করে বিআরটিএ। কোনো বাসে বাড়তি ভাড়া চাইতে আমাদেরকে কিংবা সরকারের হেল্প লাইনে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Nurun Nabi
১ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ১০:২৯

Petrol price has gone down Internationally. Why Bus Fare is not going down ?

Mizanur Rahman
৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৬:২৬

What is the duty of Traffic police? Only catching Private car, Motor bike and CNG ? Why not they check public bus?

অন্যান্য খবর