আগামী ৪-৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে আমন্ত্রিত অনেক অতিথি সশরীরে অংশ নিতে পারছেন না। তবে তারা ভাচ্যুয়ালি যুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। সম্মেলনের প্রস্তুতির সর্বশেষ আপডেট জানাতে আয়োজিত গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- আসন্ন বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অতিথির আসা স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে ইউরোপের অনেক অতিথিও সশরীরে উপস্থিত হতে পারছেন না। তবে তারা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের আসারও কথা ছিল। নতুন বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তাদের আসা স্থগিত করা হয়।
শেষ সময়ে এসে অতিথি তালিকায় কাটছাঁট হওয়ার পরও ৩০ দেশের ৫৭জন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি ঢাকায় সম্মেলনে সশরীরে হাজির হচ্ছেন। আর অনলাইনে হাইব্রিড ফর্মেটে আর ২০ দেশের ৪০ জন অতিথি যুক্ত হবেন। যার মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আরব লীগের সাবেক মহাসচিব আমর মূসা, বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভু, নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী, ইউনেসকোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তংসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগ দেবেন। তাছাড়া বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে নিয়োজিত বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট আব্দুুল হামিদ শনিবার শান্তি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আর ৫ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে দুইদিনের ওই শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠেয় ওই মেগা আয়োজনকে ঘিরে ঢাকায় সেমিনার, প্রীতি ম্যাচসহ সিরিজ অনুষ্ঠানাদি হচ্ছে। সম্মেলনকে সফল করার জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে সদস্য সচিব করে গত মার্চেই ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর নিবেদিত ভূমিকা এবং তার দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধান ও পররাষ্ট্রনীতিকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে পরিচয় করানো এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্ব্বল করাই ওই সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্য। আয়োজক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই উদ্দেশ্য হাসিলে সফল হবে বলে আশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭৩ সনে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে প্রেরিত বার্তায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্বে শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সাম্র্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যের শিকড় সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন অস্ত্রের ঝনঝনানি কেবল শান্তির পথে অন্তরায় নয়, বরং অপ্রতুল সম্পদের বিরাট অপচয়। বৈশ্বিক শান্তিতে ভূমিকার জন্য সেই বছরেই বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’- শান্তিপদক প্রদান করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতির পিতার দেশ ও বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানকে আন্তর্জাতিকীকরণকে সরকার অগ্রাধিকারে রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতাই হচ্ছে আসন্ন ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’।
গুলি ছাড়াই শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিতে বিশ্বাসী। সে কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছি। আমরা কোনো গুলি ছাড়াই শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনতার অধিকার আদায়ের পাশাপাশি বিশ্বে সাম্য ও মানবাধিকারের দীপশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’-এর মাধ্যমে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধে জাতিসংঘের অপরিহার্য ভূমিকার পাশাপাশি মানবসভ্যতার উত্তরণের লক্ষ্যে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা থেকে মুক্তির অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেন। এজন্য ১৯৭৩ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করার সময় তাকে ‘শান্তির প্রতীক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শান্তি নিয়ে কাজ করছেন। জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির যে রেজ্যুলেশন এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা থেকে এসেছে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান, সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’- গৃহীত হবে।
‘ওমিক্রন’ রোধে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে: সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’রোধে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর গত এক মাসে দেশটি থেকে ২৪০ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ওমিক্রন ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রবাসীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা আমাদের মিশনগুলোতে চিঠি দিয়েছি। তবে কেউ যদি আসেন, তাহলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যাত্রী আসা আপাতত বন্ধ। আগে যারা এসেছেন তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা আফ্রিকা দূতাবাসে বার্তা পাঠিয়েছি। এতে সেখানে যারা আছেন তাদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আসলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ওই দেশের লোক আসে না। আসে তো আমাদের লোক। আমাদের লোকদের প্রতি আমরা কিছুটা সংবেদনশীল থাকবো। তবুও আমরা বলেছি, কিছুদিন পরে আসেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।