সিলেটে যাত্রীবাহী যানবাহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। নগরে চলাচল করে সিএনজি অটোরিকশা। ট্রাফিক আইনের দোহাই দিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতেও ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দ্বিগুণ। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই সিলেটে। যাত্রীরা অভিযোগ তুললেও পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় প্রশাসনও। তুচ্ছ কারণে দেয়া হয় ধর্মঘটের হুমকিও। এই অবস্থায় পরিবহন চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর সিলেটে যাত্রী নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিএনজি অটোরিকশাতে গ্রিল তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলো প্রশাসন।
এরপর থেকে নগরীতেও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা নৈরাজ্য চালাচ্ছে। তারা গ্রিল না লাগিয়ে বিভিন্ন রুটে ৩ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছেন। আর এতে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন- বন্দর টু টুকেরবাজার রুট, বন্দর টু বটেশ্বর রুট, বন্দর টু এয়ারপোর্ট রুট, বন্দর টু দক্ষিণ সুরমা রুট, বন্দর টু বটেশ্বর রুট সব রুটেই সিএনজি অটোরিকশার চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে যেখানে ১০ টাকা ভাড়া ছিল এখন সেখানে ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। শাহপরান এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- গণপরিবহন খুব সীমিত। এখনো গণপরিবহন বলতে সিএনজি অটোরিকশাকেই বুঝায়। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চালকরা লকডাউনের পর থেকে ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানান- সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া প্রশাসন থেকে কখনোই নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে চালকরা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া গ্রহণ করছেন। লেগুনাতেও একইভাবে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এদিকে- সিলেটের আন্তঃজেলার বাসগুলোতে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১ টাকা ৮০ পয়সার বদলে নেয়া হচ্ছে ২ টাকা ৩৬ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ৫৬ পয়সা বেশি করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সিলেট থেকে ঢাকায় পূর্বের ভাড়া ৪৭০ টাকা। বর্তমানে সেখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫৭০ টাকা। সিলেট থেকে ঢাকার দূরত্ব হচ্ছে ২৪১ কিলোমিটার। আবার সিলেট-রংপুরের দূরত্ব হচ্ছে ৫০১ কিলোমিটার। সেখানে পূর্বে ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, বর্তমানে নেয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে অতিরিক্ত ভাড়া হিসাবে নিচ্ছেন ২ টাকা। সিলেট থেকে শেওলা-জকিগঞ্জ ৬০ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া ছিল ৭০ টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকায়, রতনগঞ্জ-আটগ্রাম ৭৪ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া ৮৫ টাকা এখন ১৩৩ টাকা, জকিগঞ্জ-কালিগঞ্জ ৯০ কিলোমিটার সড়কে আগে ১০৫ টাকা ছিল এখন ১৬২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও আগে যেখানে ৮ টাকা ভাড়া ছিল এখন একই দূরত্বের ভাড়া ১৩ টাকা নেয়া হচ্ছে। গ্যাসচালিত ছোট-বড় গাড়িগুলোতেও ভাড়া নৈরাজ্য চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। সিলেট-বিয়ানীবাজার রুট, সিলেট-জাফলং রুট, সিলেট-কানাইঘাট রুট, সিলেট-শেরপুর-নবীগঞ্জ রুট, সিলেট-জগন্নাথপুর রুট, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুট, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ রুটেও একইভাবে বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েকদিন আগে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা জানিয়েছেন- ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন রুটে সিএনজি গ্যাস চালিত যানবাহনেও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের ঝগড়া হচ্ছে। অনেক যাত্রী পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নাজেহালও হচ্ছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করেন; রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা করা হলেও সিলেটে এখন পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত করা হয়নি। এ কারণে পরিবহন শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। সিলেট বিআরটিএ’র কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন- খুব দ্রুত তারা গ্যাস চালিত ও ডিজেল চালিত যানবাহনে স্টিকার দিয়ে দেবেন। এতে বুঝা যাবে গ্যাস চালিত যানবাহন ভাড়া বেশি নিচ্ছে কিনা। যদি ভাড়া বেশি নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে- ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে জকিগঞ্জ যাত্রীকল্যাণ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। জকিগঞ্জ পৌর শহরে কয়েক দফা কর্মসূচি পালনের পর তারা প্রতিবাদ সভা করেছে। গতকাল থেকে গোটা উপজেলাজুড়ে কর্মসূচি চালাচ্ছে। কালিগঞ্জ বাজারে প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শাহগলি বাজার, বাবুর বাজার, আটগ্রাম স্টেশনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।