× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আফগানিস্তান: শুধুই মৃত্যুর পদধ্বনি

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ডিসেম্বর ২, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

এ যেন নরক যন্ত্রণা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আফগানিস্তানের অভুক্ত শিশুরা। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ তারাও দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তবু তারা আবার ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। প্রাণপ্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে চেষ্টা করছেন মা-বাবার মুখে হাসি ফেরাতে। এমন এক মানবিক বিপর্যয়ের আফগানিস্তান। পরিস্থিতি ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে।


এসব নিয়ে অনলাইন বিবিসি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে প্রতিটি মানুষের নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, একজন যুবতী চিৎকার করে চিকিৎসকদের বলছেন, তাকে ও তার সন্তানকে মেরে ফেলতে। সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান প্রসবের সময় ওই মা এভাবে আকুতি জানান আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলের এক হাসপাতালে। তার অপারেশন করছিলেন গাইনি চিকিৎসক ড. নূরী। ওই নারী এই চিকিৎসককে বলছিলেন, জানি না কিভাবে আমি বেঁচে থাকবো। ফলে কিভাবে আমি আরেকটি মানব সন্তান জন্ম দিচ্ছি?

সন্তান জন্ম দিতে যাওয়া এই মা নিজেই ভীষণভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। তিনি নিশ্চিত, সন্তান জন্ম নেয়ার পর তার বুকের দুধ পাবে না। ড. নূরী বলেন, তার এই ওয়ার্ড রোগীতে সয়লাব। ফলে তা স্বাভাবিকভাবেই নোংরা হয়ে আছে। এখানে ওখানে দেয়ালে রক্তের দাগ। ময়লা বিছানার চাদর। কয়েক মাস আগেই হাসপাতালের বেশির ভাগ ক্লিনার চলে গেছে। কারণ, তারা বেতন পান না।

প্রসূতি ওয়ার্ডের অবস্থা আরো খারাপ। অনেক সময় সেখানে একই বেড শেয়ার করতে হয় কয়েকজন নারীকে। আশপাশের বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থান এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এক সময়ের অভিজাত এই হাসপাতালে এখন অন্য সময়ের চেয়ে তিনগুন নারী আসছেন। ড. নূরী বলেন, যেকোনো স্থানে হাসপাতালে সবচেয়ে ভাল বা স্বস্তিদায়ক ওয়ার্ড হলো প্রসূতি ওয়ার্ড। কিন্তু আফগানিস্তানে তা নেই আর। তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বরের দুই সপ্তাহে অনাহারে ৫টি শিশুকে মরতে দেখেছেন তিনি। এ পরিস্থিতি যেন নরক যন্ত্রণা।

একদিকে কমপক্ষে দুই দশকের যুদ্ধ, অন্যদিকে তীব্র খরা, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তালেবানদের ক্ষমতা দখল। এর ফলে আফগানিস্তানের অর্থনীতি দ্রুততার সঙ্গে ধসে গেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর টিকে ছিল অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু আগস্টে এসব সহযোগিতা বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আফগানিস্তান মুমূর্ষু রোগীর মতো অবস্থায় আছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার নারী ও মেয়ে শিশুর মৌলিক অধিকার অগ্রাহ্য করে কঠোর শরীয়া আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান আরোপ করায় বিদেশিরা বা পশ্চিমা দাতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বার বার নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা আফগানিস্তানের কয়েক শত কোটি ডলার অবমুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে আফগান সরকারের প্রতিনিধিরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই শীতে কমপক্ষে এক কোটি ৪০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগবে বলে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘ।

সারা দেশে যেসব হাসপাতাল এসব অনাহারী বা অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা দিতো, তারাও ধসে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। এরই মধ্যে প্রায় ২৩০০ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা চিকিৎসকরা মৌলিক যেসব ওষুধ আছে তার অভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। এমনও হয়েছে ভয়াবহ অসুস্থ একজন রোগীর জন্য একটি প্যারাসেটামল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তিনি চিকিৎসার জন্য ১২ ঘন্টা ব্যয় করে হাসপাতালে গিয়েছেন।
রাজধানী কাবুলে শিশুদের একটি হাসপাতাল দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ অনাহারী মানুষের ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে। বর্তমানে সেখানে সক্ষমতার অধিক অর্থাৎ ১৫০ ভাগ রোগীতে সয়লাব। হাসপাতালটির পরিচালক ড. সিদ্দিকী সেপ্টেম্বরে দেখেছেন মৃত্যুর মিছিল। এ ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা, তহবিল বন্ধ করে দেয়ার পর। এ সময়ে অপুষ্টি অথবা সংশ্লিষ্ট রোগে প্রতি সপ্তাহে ১০ বছরের কম বয়সী চারটি করে শিশু মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, এসব শিশু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই কার্যত মারা গেছে। এমন অনেক ঘটনা আসছে আমাদের কাছে।

হাসপাতালগুলোতে খাদ্য ও ওষুধের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় রোগীর ঢল নামায় পরিস্থিতির সঙ্গে যেন যুদ্ধ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয়ভাবে উষ্ণ রাখার জন্য কোনো জ্বালানি নেই। এ জন্য ড. সিদ্দিকী কাঠের চুলা জ্বালিয়ে হাসপাতালকে উষ্ণ রাখার জন্য স্টাফদের নির্দেশ দিয়েছেন গাছের শুকনো ডাল কাটতে ও তা সংগ্রহ করতে। তিনি বলেন, এসব কাঠ যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন পরের মাস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জানি না এরপর কি করবো।

ড. নূরীর প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়মিত বিদ্যুত থাকে না। এ সময়ে ইনকিউবেটর কাজ না করায় বেশ কিছু অপরিপক্ব শিশু মারা গেছে সেখানে। ড. নূরী বলেন, নিজের চোখের সামনে এভাবে বাচ্চাদের মারা যাওয়া সহ্য হয় না। শুধু তাই নয়। এ সময়ে অপারেশনে থাকা রোগীরও ভয়াবহ জটিলতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, আমরা যখন অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করি, তখন বিদ্যুত থাকে না। ফলে সবকিছু থেমে থাকে। আমি বেরিয়ে সাহায্য করার জন্য চিৎকার করি। কারো হয়তো তখন গাড়িতে তেল আছে। তিনি তা এনে আমাদের দিলেন। ফলে আমরা জেনারেটর চালাই।
এমন কঠির অবস্থায় যখন স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তখন তাদের বেশির ভাগই বেতন পাচ্ছেন না। হেরাত প্রদেশের একটি হাসপাতালের পরিচালক ড. রাহমানি।

তার হাসপাতাল করোনায় আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসায় বিশেষায়িত। তালেবান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠি তিনি বিবিসিকে প্রদর্শন করেছেন। ওই চিঠিটি ৩০ শে অক্টোবর লেখা। তহবিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্টাফদেরকে বিনা বেতনেই কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে এতে। মঙ্গলবার ড. রাহমানি নিশ্চিত করেছেন যে, হাসপাতাল তাকে এখন বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, কোনোই তহবিল নেই তার কাছে। ছবিতে দেখা যায়, স্ট্রেচারে করে রোগীদের বের করে নেয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। এর পর তাদের কি হবে কেউ বলতে পারে না।

কাছেই আরেকটি হাসপাতাল মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেয়। তারাও রোগীদের যত্ন নিতে পারছে না। সেখানে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হেরোইন, আফিম এবং ক্রিস্টাল মেথ পাওয়া যাচ্ছে না। ওই হাসপাতালের পরিচালক ড. নওরোজ বলেছেন, বেডের সঙ্গে অনেক রোগীকে চেইন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আবার কিছু রোগীকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। কারণ, তারা হামলা করে। এসব রোগীর যত্ন নেয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যথাযথ যত্ন ছাড়া আমাদের হাসপাতাল একটি জেলের মতোই।

তার এই হাসপাতালও স্টাফের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। যদি তাই হয়, তাহলে ড. নওরোজ উদ্বিগ্ন এসব রোগীর ভয়াবহ শীতের সময়ের অবস্থা চিন্তা করে। তিনি বলেন, এসব রোগীর জন্য কোন আশ্রয় নেই। তারা সাধারণত কোনো ব্রিজের নিচে, ভগ্ন কোনো ধ্বংসস্তূপ অথবা কবরস্তানে অবস্থান করে।

তালেবান নিয়োজিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. কালান্দার ইবাদ নভেম্বরে বলেছেন, সাহায্য সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে জোরালোভাবে কাজ করছে সরকার। কিন্তু বড় দাতারা অন্য ভয় পাচ্ছেন। তারা মনে করছেন এই অর্থ তালেবানরা অন্য উদ্দেশে ব্যবহার করতে পারে। তা সত্ত্বেও প্রথমবারের মতো ১০ই নভেম্বর জাতিসংঘ আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সরাসরি সরবরাহ দিয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮০ লাখ ডলার ব্যবহার করা হয়েছে ২৩,৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীর বেতন দিতে। তবে বর্তমানে অন্য আন্তর্জাতিক দাতারা একই পথ অনুসরণ করার কথা ভাবছে। কিন্তু সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Alim
৫ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার, ৪:০০

So called civilized nation western, and Europiun country cry for humanity in the world, now thousands of Afghan Children are about to die with starving, not showing any reactions. So we Muslim,what we have help them, specially Middle Eastern Arabian Country. Our humanitarian govt. should do something for them. Another alternative way, pl.open an helping desk to donate some cash and kinds for our Afghan Children.

amir
৩ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৫:০২

ড. নূরী বলেন, তার এই ওয়ার্ড রোগীতে সয়লাব। ফলে তা স্বাভাবিকভাবেই নোংরা হয়ে আছে। এখানে ওখানে দেয়ালে রক্তের দাগ। ময়লা বিছানার চাদর। কয়েক মাস আগেই হাসপাতালের বেশির ভাগ ক্লিনার চলে গেছে। কারণ, তারা বেতন পান না।------তথাকথিত তালেবান সরকারের সামনে এই বকতব্যগুলি বলা উচিত যাতে তারা বুঝে যে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান এনে দিতে পারে।(Dr. Nuri said his ward is full of patients. As a result, it is naturally dirty. Blood stains on the walls here and there. Dirty bed sheets. Most of the cleaners in the hospital left a few months ago. Because, they don't get paid. ------These statements should be made to the so-called Taliban government so that they understand that only an acceptable government can get rid of this problem).

Zulfiquar Ali Haider
২ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৯

requesting Bangladesh Government to support and help Afgan people by sending 'Medecine to run the hospitals as they are running out of medecine.

অন্যান্য খবর