× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রতি বছরই নিতে হবে করোনাভাইরাসের টিকা

এক্সক্লুসিভ

বিবিসি
৪ ডিসেম্বর ২০২১, শনিবার

মানুষের আগামী বহু বছর ধরে প্রতি বছর কোভিডের টিকা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে বিবিসিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের প্রধান। ওই সাক্ষাৎকারে ড. আলবার্ট বুর্লা বলেছেন যে ‘খুবই উঁচু মাত্রার সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর টিকা নেয়ার প্রয়োজন হবে।
ফাইজারের প্রধান নির্বাহী বিবিসিকে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগে। তিনি এই সাক্ষাৎকার দেয়ার আগেই বৃটেন ২০২২ এবং ২০২৩ সালের জন্য অতিরিক্তি ১১ কোটি ৪০ লাখ কোভিড টিকা কেনার চুক্তি করেছে, যার মধ্যে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টিকা বৃটেন কিনবে ফাইজার থেকে, আর বাকি ৬ কোটি মডার্না থেকে।
ড. বুর্লা বলেন, করোনাভাইরাসের বেটা ভ্যারিয়েন্ট- যেটিও প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যা প্রথম ধরা পড়ে ভারতে, সেগুলো মোকাবিলায় ফাইজারের টিকা কার্যকর করার পদক্ষেপ তারা ইতিমধ্যেই নিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, ওই দুটি ধরন মোকাবিলায় তাদের টিকায় তেমন কোনো বদল ঘটাতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর করার কাজ এখন তারা করছেন এবং আগামী ১০০ দিনের মধ্যে তাদের টিকা হালানাগাদ করার কাজ শেষ হবে।
‘টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে’
ড. বুর্লা মনে করেন যে মহামারির সময় টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, এবং এই টিকা না হলে ‘আমাদের সমাজের মূল কাঠামোই ঝুঁকির মুখে পড়ত’। ফাইজার আশা করছে যে এ বছর শেষ হবার আগেই তারা তাদের এমআরএনএ টিকার তিনশ’ কোটি ডোজ সরবরাহ করতে পারবে এবং আগামী বছর তাদের পরিকল্পনা রয়েছে চারশ’ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বলেন, মানুষেকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে একটা প্রতিযোগিতা চলছে, তবে ২০২২ সালে দেশগুলো ‘যত প্রয়োজন তত ডোজ টিকা পাবে’।
শেয়ারের দাম
বিশ্বে স্বাস্থ্য বিষয়ক যেসব দাতব্য সংস্থা আছে, তারা বলছে যে ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মডার্না এই মহামারির সময় যে পরিমাণ অর্থ বানিয়েছে তা অনৈতিক। এ বছর কোভিডের টিকা বিক্রি থেকে ফাইজার আয় করবে ৩৫ বিলিয়ন বা সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। তাদের শেয়ারের দামও এখন আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এরপরও পৃথিবীর অনেক দেশে বেশিরভাগ মানুষ অন্তত কোভিডের এক ডোজ টিকা পেলেও আফ্রিকার অনেক দেশের মানুষ টিকা প্রায় পায়ইনি- এসব দেশে প্রতি ২০ জনে একজনেরও কম মানুষ টিকা পেয়েছে।
মুনাফা লাভের প্রশ্নে কোনোরকম দুঃখ প্রকাশ করেননি ড. বুর্লা।
তিনি বলেছেন, ‘মূল কথা হলো, লাখ লাখ জীবন রক্ষা পেয়েছে। ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতিকে আমরা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আগামী মহামারি রুখতে উদ্ভাবনের কাজে এটা জোরালো অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে’- এই মন্তব্য করেন তিনি। মহামারিকে কাজে লাগিয়ে লাভ করার অভিযোগ তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ধনী দেশগুলোর জন্য এই ব্যয় ‘সস্তার খাবার কেনার খরচের সমান’, তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে টিকা বিক্রি করা হয়েছে কোনো মুনাফা না রেখে। তিনি বলেন, ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মজুত রাখার বিষয়টা অনেক দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বিশেষ করে সেসব দেশে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফাইজার এক মাস বা তার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে নতুন ফর্মুলার টিকা বাজারে ছাড়বে, যা তিন মাস পর্যন্ত সাধারণ ফ্রিজে মজুত রাখা যাবে। বিশেষ করে আফ্রিকায় সাহারার দক্ষিণের দেশগুলোর জন্য এটা ‘বিরাট একটা পরিবর্তন’ আনবে।
ফাইজার প্যাক্সলোভিড নামে মুখে খাবার একটি অ্যান্টিভাইরাল বড়িও বের করেছে, যার ব্যবহার হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমায় বলে ট্রায়ালে দেখা গেছে। আমেরিকা কিছুদিনের মধ্যেই এই ওষুধ অনুমোদন করবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং বৃটিশ সরকার আড়াই লাখ রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ এই ট্যাবলেট কেনার জন্য চুক্তি করে ফেলেছে। ফাইজারের প্রধান বলেছেন তার প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জন্য কোভিড টিকার ট্রায়াল চালাচ্ছে। তিনি বলেন, যেহেতু স্কুলের পরিবেশে কোভিড সংক্রমণ খুব বেশি ছড়াচ্ছে, তাই শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে ভবিষ্যতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই তিনি মনে করেন। ফাইজার এবং মডার্না উদ্ভাবিত এমআরএনএ টিকার চাহিদা এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে ছাপিয়ে গেছে।
‘সঠিক পদক্ষেপ’
যারা এখনো টিকা নেননি, তাদের উদ্দেশ্যে জোরালো বার্তা দিয়েছেন ড. আলবার্ট বুর্লা। তিনি বলেন, ‘যারা এখন ভয় পাচ্ছেন তাদের বলি, মানুষের মধ্যে যে আবেগটা বেশি জোরালো সেটা ভয় নয়, ভালোবাসা।’
কাজেই আমি সব সময় যে যুক্তি দিই, সেটা হলো- ‘আবার আরেকটা টিকা নেবো কিনা এ বিষয়ে একটা কথা ভেবে দেখুন। এটা শুধু আপনার স্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি নয়, আপনার আশেপাশে যারা আছে, বিশেষ করে যারা আপনার সবচেয়ে প্রিয়জন, যাদের কাছাকাছি আপনি থাকতে চান, তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও এটা জরুরি। কাজেই ভয় ভেঙে সঠিক পদক্ষেপ নিন।’
ভুয়া খবর
সম্প্রতি বেশকিছু ভুয়া এবং উদ্ভট খবরের শিকার হয়েছেন ফাইজারের প্রধান নির্বাহী ড. আলবার্ট বুর্লা। এসব খবরের মধ্যে রয়েছে, জালিয়াতির দায়ে ড. বুর্লাকে গ্রেপ্তার করেছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা এফবিআই এমন অভিযোগ। রয়েছে ফাইজারের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার স্ত্রী মারা গেছেন- এমন খবরও। ড. বুর্লা বলেছেন দুটো খবরই ভুয়া। ‘আমার গ্রেপ্তারের খবর শুনে আমি হেসেছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলার খবরে আমি খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম।’
আমার ছেলেমেয়েদের ফোন করে জানাতে চেয়েছিলাম খবরটা মিথ্যা। ছেলেকে ফোনে ধরতে পারিনি। কী উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্যে যে সময় কেটেছে!
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর