আফগানিস্তানে নারীর অধিকার সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করেছে তালেবান। কিন্তু এতে নারীর শিক্ষা ও কাজের সুযোগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে শুক্রবার জারি করা ডিক্রি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন আফগানিস্তান বিশ্লেষকরা ও দেশটির নারীরা। তারা বলছেন, সশস্ত্র উগ্রপন্থী এই সংগঠনটি মিলিয়ন মিলিয়ন আফগান নারীর ন্যূনতম স্বাধীনতা নিশ্চিতেও আগ্রহী নয়। তালেবান আফগানিস্তান দখলে নেয়ার পর থেকে গত কয়েক মাস ধরে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে আছেন এই নারীরা।
আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থা কী হবে সেদিকে নজর গোটা বিশ্বের। এর মধ্যেই নারীর অধিকার নিয়ে এই ডিক্রি জারি করল তালেবান সরকার। এতে নারীর শিক্ষা ও কাজের অধিকার না দেয়া হলেও তাদেরকে ‘সম্পত্তি’ ভাবার বিরোধীতা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিয়ের আগে নারীর সম্মতি নিতে হবে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই ফরমানের বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, নারী কোনো সম্পত্তি নয়। বরং একজন একজন মহিয়সী এবং স্বাধীন মানবী। শান্তির জন্য কিংবা শত্রুতা অবসানের বিনিময়ে কেউ নারীকে অন্য কারও হাতে তুলে দিতে পারে না। নারীদের বিয়ে এবং তাদের সম্পত্তির অধিকারের নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়ে ডিক্রিতে বলা হয়েছে, নারীদের জোর করে বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং স্বামী মারা গেলে তার সম্পত্তিতে বিধবা নারীদের অংশ থাকবে।
নারী অধিকার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপের মুখে আছে তালেবান। চাপে রাখার কৌশল হিসাবে বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে আফগানিস্তানে তহবিল সহায়তা বন্ধ করেছে। ক্ষমতায় আসার পরপরই তালেবান নেতারা নারী অধিকার সমুন্নত রাখার আশ্বাস দিলেও তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এবার ডিক্রির মাধ্যমে তালেবান নারী অধিকারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিল। কিন্তু এতেও নারীর শিক্ষা বা কাজের অধিকার নিয়ে কোনো কথা নেই। গত দুই দশকে আফগান নারীরা যে অধিকারের জন্য এতো লড়াই করেছে তা পুরোপুরি কেড়ে নিয়েছে তালেবান।
শুক্রবার সিএনএনকে আফগান নারীরা এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ডিক্রির কারণে তাদের জীবনের তেমন কোনো পরিবর্তনই আসবে না। তালেবান নেতারা প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে, ইসলামের আইন মেনে নারীদের অধিকার দেয়া হবে। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা কী বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের অধীনে ছিল। তখনও আফগান নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। এমনকি পুরুষের অনুমতি ছাড়া তারা ঘর থেকেও বের হতে পারতো না।
রাজধানী কাবুলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুঝদা (২০) বলেন, নারীদের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিয়ে কিছুই এই ডিক্রিতে বলা হয়নি। সরকারেও থাকছে না কোনো নারীর অংশগ্রহণ। আফগানিস্তানে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা শুধু চায় নারীরা বাড়িতেই বন্দি থাকুক। তাই যেভাবেই হোক নারীদের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কাজে যাওয়া থেকে আটকাতে চায় তারা।
তালেবান যখন এই ডিক্রি জারি করলো যখন আফগানিস্তানের অর্থনীতি ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। শীগগিরই দেশটিতে মহামারি দেখা যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহকারী পরিচালক হিথার বার বলেন, তালেবান গত সাড়ে তিন মাস ধরে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন এটি তাদের কাছে স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তারা যা চায়, এর জন্য তাদের নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নইলে তালেবানের স্বীকৃতি, বৈধতা, অর্থায়ন কিংবা আটকা অর্থ কোনোটাই মিলছে না। তালেবান নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের অনেক উদারপন্থী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু হিথার মনে করেন জিহাদি গোষ্ঠীটির চিন্তাভাবনা সেই ১৯৯৬ সালের মতোই রয়েছে। এই ডিক্রি আমাদেরকে দেখায় যে, নারীকে তালেবান কীভাবে দেখে। এটা নারীর জন্য অপমানজনক।