× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সুখী দেশের গোপন কথা

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
৫ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার

ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ। এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে চান দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন। বিদেশি মিডিয়াকে দেয়া বিরল এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। বলেছেন, মানবাধিকার সুরক্ষায় তিনি অটল অবস্থানে থাকবেন। আরও বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে সফলতার গোপন কথাটি হলো সমতা, ভালো অর্থায়নসমৃদ্ধ একটি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ২০১৯ সালে নরডিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হন সানা মারিন। তবে সবচেয়ে কম বয়সীর এই খেতাবটি ছিল তার স্বল্প সময়ের জন্য।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, পরিবেশগত টেকসই উপায়ে উদার কণ্যালকর রাষ্ট্র এমন নীতি সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফিনল্যান্ড। ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য এ দেশটির সামনে রয়েছে উন্নয়ন ও রপ্তানির জন্য গ্রিন প্রযুক্তি। তিনি আরও বলেন, তার দেশ যখন সমতায় এসেছে তখন তা আরও ভালো করতে চেয়েছে। এপ্রিলে ইউএন সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক তার দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে। ফলে তা থেকে তিনি আরও সামনে এগুতে চান। দেশকে আরও উন্নত করতে চান। আরও সুখী করতে চান দেশবাসীকে। করোনা মহামারিকালে তিনি যে ব্যবস্থাপনা নিয়েছেন সেজন্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান। তার দেশে জনসংখ্যা মাত্রা ৫৫ লাখ। করোনাভাইরাসে সেখানে মারা গেছেন মাত্র ১৩০০ মানুষ। দেশটিতে পাঁচটি দল নিয়ে গড়া জোট সরকারের নেতৃত্বে আছেন সানা মারিন। সেই জোটের দলগুলোর নেতৃত্বে আছেন যারা, তারা সবাই নারী। কিন্তু এই জোটের মধ্যেও ফাটল দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে ফিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচার বিষয়ক কোম্পানি ওয়াইএলই একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, বিরোধী উদার-রক্ষণশীল ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি রয়েছে বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডানপন্থি জনপ্রিয় দল ফিনস পার্টি। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে সানা মারিন নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটরা। সম্প্রতি বেলারুশ থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সীমান্তের দিকে ধাবিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পোল্যান্ডের সঙ্গে বেলারুশের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বেলারুশের এ কর্মকাণ্ডকে ‘হাইব্রিড অ্যাটাক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে। এসব অভিবাসীকে বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ড, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়ার দিকে ধাবিত করানো হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের থামাতে ৮০০ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছেন সানা মারিন। বিরোধীরা চায়, এই সীমান্ত বন্ধ করে দিতে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন প্রধানমন্ত্রী মারিন।
তিনি বলেন, ফিনল্যান্ডের সীমান্তে কোনো সমস্যা নেই। তার ভাষায়, আমাদেরকে বলতে হবে, এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বেলারুশের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছি। কিন্তু একই সময়ে আমরা নিশ্চিত করেছি যে, এই অবস্থায় মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দিতে হবে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভবিষ্যৎ সরকার কি সমতার নীতিকে অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে নেবে কিনা- সে বিষয়ে তিনি কি ভাবছেন, যখন তার উদার সরকার এবং অধিক ডানপন্থি বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জবাবে সানা মারিন বলেন, আমি তো তাই মনে করি। কারণ, এটা একটা চলমান কাজ। আমরা সব সময় ফিনল্যান্ডে সমতার জন্য কাজ করেছি। আমি মনে করি ভবিষ্যতের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। সমতা শুধু নারী-পুরুষ অথবা লিঙ্গের মধ্যেই নয়। একই সঙ্গে সমতা থাকতে হবে সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোতে। আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি যে, মানুষের জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে না কাঠামো। ফলে কাজ করার জন্য অনেক কিছু আছে।
সম্প্রতি একটি আইন করে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পিতৃকালীন-মাতৃকালীন ছুটির নতুন একটি ব্যবস্থা আগামী আগস্টে কার্যকর হচ্ছে। এতে একজন পিতার ছুটি ৫৪ দিন থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৯৭ দিন করা হয়েছে। সানা মারিন বলেন, এই ধারণাটা এখান থেকে এসেছে যে, একটি নবজাতককে একজন পিতা ও একজন মাতার একই পরিমাণ সময় দেয়া উচিত। যাতে তারা দু’জনেই ক্যারিয়ারে একই রকম সুযোগ পান। একই সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে আমরা লিঙ্গগত ফারাক কমিয়ে আনতে চাই। তিনি জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ডে গৃহহীনদের জন্য গৃহায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাতে নেয়া হয়েছে হাউজিং ফার্স্ট কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে রাজপথে গৃহহীনের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে গৃহহীন কোনো মানুষই থাকবেন না তার দেশে। বৃটেনের রাজনীতিকরা তার এই মডেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। ফিনল্যান্ডে এমন তিনটি পাইলট প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। ২০১৮ সালে হাউজিং ফার্স্ট চালু হয়েছে। কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে এর অর্থ শেষ হয়ে যাবে। এমপিরা সতর্ক করে বলছেন, তারা এখন সমর্থন পাওয়ার প্রান্তসীমায় রয়েছেন। সানা মারিন বলেছেন, হাউজিং ফার্স্ট প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
তবে এখনো এ বিষয়ে অনেক কিছু করতে হবে। তিনি স্বীকার করেন, এখনো গৃহহীন মানুষ আছেন। আমাদের এখনো অনেক সমস্যা আছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরে তা বেশি। তা সত্ত্বেও আমরা অগ্রগতি করেছি।
২০৩৫ সাল নাগাদ ফিনল্যান্ড কার্বন নিরপেক্ষ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এই সময়সীমা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেঁধে দেয়া সময়ের চেয়ে ১৫ বছর কম।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর