× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১৬ দফা 'ঢাকা ঘোষণা'য় শান্তি সম্মেলন সমাপ্ত

অনলাইন

কূটনৈতিক রিপোর্টার
(২ বছর আগে) ডিসেম্বর ৬, ২০২১, সোমবার, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

১৬ দফা 'ঢাকা শান্তি ঘোষণা'র মধ্য দিয়ে সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন -২০২১ এর। সেখানে মোটাদাগে সব রকম সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। ঢাকা ঘোষণায় সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়। এতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অপুষ্টি, অশিক্ষার বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়া হয়। গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আইনের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্ব নাগরিক দর্শনকে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়৷ রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দু'দিনব্যাপী সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন।
এদের মধ্যে ৫৯ জন সশরীরে এবং ৪০ জন প্রতিনিধি ভার্চুয়ালি অংশ নেন। রোববার অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।৪-৫ ডিসেম্বরের ওই সম্মেলনে শান্তি স্থাপন করা এবং সদস্য হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শান্তির অগ্রগতি হিসেবে সম্মেলনের থিমকে স্বীকার করা হয়। ঘোষণায় মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী প্রশংসা করে বলা হয়, আমরা স্মরণকরি যে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের যাত্রা মানুষের মুক্তির জন্য একটি বৈধতা। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত অঙ্গীকারের জন্য শ্রদ্ধা জানাই কারণ তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার জুড়ে শান্তির জন্য অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদর্শিত সক্ষম নেতৃত্বের প্রশংসা করি। শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে তার উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘে তার শান্তির সংস্কৃতি দর্শন গৃহীত হয়েছে।আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ ও নিহতদের স্মৃতি স্মরণ করি এবং গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কাছে কখনো মাথা নত না করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। আন্তর্জাতিক অপরাধের পাশাপাশি সেই অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতাকে বাধাগ্রস্ত করে দায়মুক্তির সংস্কৃতি। আমরা এই ধরনের কাপুরুষোচিত নিপীড়ন এবং অন্যায়ের অবসান ঘটাতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদেরকে অঙ্গীকারবদ্ধ করি। আমরা মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য আমাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি, শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারের প্রতি। আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকারের জন্য করা অমূল্য কাজকে স্বীকার করি। আমরা যুদ্ধ এবং শান্তি উভয় সময়েই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সমুন্নত দেখতে চাই। আমরা শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং সহায়তার নীতির সঙ্গে সংযুক্তি চাই। আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ মেনে পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক বিশ্ব অস্ত্র প্রতিযোগিতার গণবিধ্বংসী সমস্ত অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি পরিত্যাগ এবং সব ধরণের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করি। আমরা গণতন্ত্র, সুশাসন এবং আইনের শাসনের গুরুত্বের ওপর গুরুত্ব দেই শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য। জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকাকে আমরা মূল্যায়ন করি। জনগণের ন্যায্য দাবি ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি আওয়াজ তুলি। আমরা ঔপনিবেশিকতা, অবৈধ দখলদারিত্বের নিন্দা জানাই। যে কোনো অজুহাতে অননুমোদিত ক্ষমতা দখলের বিরোধিতা করি। আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা, শান্তি বিনির্মাণ এবং ভূমিকা স্বীকার করি। আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কর্মীদের তাদের উৎসর্গের জন্য প্রশংসা করি। আমরা পরিবর্তিত বিশ্বের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কর্মসংস্থানের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সামাজিক শৃঙ্খলার অগ্রগতিতে বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমরা স্বীকার করি। আমাদের ‘কাউকে পিছিয়ে না রাখার’ প্রতিশ্রুতি পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে চাই। অবশ্যই নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বর্ধিত সুযোগ তৈরি করতে হবে। শিশুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা ও শোষণ প্রতিরোধে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে চাই আমরা। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং আদিবাসীদের বিশেষ চাহিদার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে সমাজে তাদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই। আমরা জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে সব ধরনের সহিংসতা এবং অপব্যবহারের নিন্দা করি। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা করি। আমরা আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ভাষাকে ঐতিহ্য হিসেবে পুরস্কৃত করি এবং লালন করি। আমরা শিক্ষা, নৈতিক অধ্যয়ন, বিজ্ঞান, কলা, সঙ্গীত, সাহিত্য, মিডিয়া, পর্যটন, ফ্যাশন, স্থাপত্য এবং প্রত্নতত্ত্ব সীমানাকে সম্মান এবং লালনপালনে বিশ্বাসী। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা, বাস্তুচ্যুতি এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা এবং সকলের জন্য টিকার নিশ্চয়তা চাই।আমরা এই সত্যটি হারাতে পারি না যে বিশ্বের কোথাও শান্তির অনুপস্থিতি আছে। আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার ভূমিকা স্বীকার করি জনগণের মধ্যে আস্থা, বোঝাপড়া এবং ঐক্য গড়ে তোলার জন্য। আমরা একটি বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আশাকরি যা উন্নতি লাভ করে আমাদের সমগ্র গ্রহের বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে তুলবে।আমরা প্রেম, সমবেদনা, স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনের জন্য সহনশীলতা, উদারতা, সহানুভূতি এবং সংহতিকে মেনে চলি। আমরা এই বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে গম্ভীর শপথ নেই শান্তি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং টেকসই এর কারণগুলিকে অগ্রসর করার বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার। আমরা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে তাদের আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। শান্তির জন্য আদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
আবুল কাসেম
৫ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার, ৯:৩৯

ষোল দফা ঢাকা ঘোষণার সঠিক বাস্তবায়ন বিশ্বশান্তির জন্য অপরিহার্য। কারণ আমরা শান্তি চাই। ভারত বিভক্তির মাধ্যমে হাজার মাইলের ব্যবধানে দুইটা ভূখণ্ডে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়। তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠে। আজকেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয়, আদর্শিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য, বিভেদ সৃষ্টি করছে। ফলে অশান্তিও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে হবে। জাতিসংঘ এবং অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে শান্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবুও শান্তি ফিরে আসছেনা। কারণ মানুষের কাজে কর্মে এবং অনেকের বিশ্বাসেও মোটাদাগে একটি মৌলিক গলদ আছে, যে জন্যে শান্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে। মানুষকে কে, কেন, কোন উদ্দেশ্যে বা কি কারণে সৃষ্টি করেছেন; নাকি মানুষের কেউ সৃষ্টিকর্তা নেই, কারো হস্তক্ষেপ ছাড়া অবলীলায় বা কোন দুর্ঘটনাক্রমে মানুষ সৃষ্টি হয়ে গেছে এ সম্পর্কে বিশ্বের সকল মানুষের চিন্তার ঐক্য থাকা দরকার। এই বিষয়টির সুরাহার উপর নির্ভর করে মানুষ শান্তিতে নাকি অশান্তিতে সহাবস্থান করবে। চিন্তার জগতে আদর্শিক মতানৈক্য বিভ্রান্তি ও বিভেদ বিশ্ব বাসীকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেউ সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে খাঁটি ধারণা রাখার পরেও তাঁর বিধিনিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেনা। বিশ্বাস ও কাজের অমিলহেতু তাদের জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। কেউ সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, মনে করে মানুষের এবং এই বিশ্ব জগতের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। সেই হিসেবে মানুষ নিজের কর্মের জন্য কারো কাছে দায়ী নয় এবং কারো কাছে জবাবদিহি করতেও বাধ্য নয়। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তারা বিশ্বাস করেননা। জবাবদিহি হীন বিশ্বাস তাদের নৈতিকতার বন্ধন খুলে দিয়ে বেপরোয়া জীবন যাপনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বিরাগীর পথ বেচে নিয়েছে। কেউ কেউ ধর্মনিরপেক্ষতার সুমধুর বানীর মোড়কে মনের অজান্তে, আবার কেউ সচেতনভাবেও সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য পরিহার করে সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যহত করে চলছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন এবং বহু রকম বাধার মুখে শান্তির বারতা ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মগ্রন্থ আছে সবগুলোই স্বীকার করে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন বিশ্বজগত ও মানুষের সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টির পেছনে রয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ'তোমরা আল্লাহর সাথে কেমন করে কুফরীর আচরণ করতে পারো। অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন এবং অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করবেন। তারপর তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের জন্য সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করলেন। তারপর ওপরের দিকে লক্ষ করলেন এবং সাত আকাশ বিন্যস্ত করলেন তিনি সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন। সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াতঃ২৮-২৯। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সকল বস্তু মানুষের কল্যানের জন্য সৃষ্টি করেছেন। নির্দিষ্ট সময় পরে মানুষকে আবার আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। মূলত মানুষকে পয়দা করা হয়েছে শুধু মাত্র তাঁরই দাসত্ব করার জন্য। তিনি বলেন, 'আমি মানুষ ও জ্বীন জাতিকে আমার দাসত্ব করা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।' সূরা আয যারিয়াত-৫৬। আল্লাহর দাসত্ব বা ইবাদতের পরীক্ষায় কে কতোটা উত্তম ভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে সেই পরীক্ষা নিতে চান তিনি মানুষের কাছ থেকে। সেইজন্য মানুষকে জীবনের অস্তিত্ব দেয়ার পরে আবার মৃত্যুও ঘটানো হবে। মানুষ কোনো জিনিস তৈরি করলে কিছুনা কিছু খুঁত থেকে যায়। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো প্রকার খুঁত নেই, শতভাগ ত্রুটি মুক্ত। ইরশাদ হচ্ছে, 'তিনি জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর দ্বারা তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন কর্মক্ষেত্রে তোমাদের মধ্যে কে বেশি উত্তম। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল। তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরী করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি? তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে।' সূরা আল মুলক, আয়াতঃ২-৪। দুনিয়ার জীবনের পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন। ইরশাদ হচ্ছে, 'তিনিই যথাযথভাবে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, হাশর হয়ে যাও, সেদিনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথা যথার্থ অকাট্য সত্য। আর যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন রাজত্ব হবে একমাত্র তাঁরই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন এবং তিনি প্রজ্ঞাময় ও সবকিছু জানেন।' সূরা আল আনয়াম-৭৩। যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে নেক কাজের মাধ্যমে উত্তম পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং যারা খারাপ কাজ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি উভয়কে পুরষ্কার ও শাস্তি দেয়ার জন্যই পরকালীন জীবনের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। ইরশাদ হচ্ছে, 'আর সেদিন আমি জাহান্নামকে সেই কাফেরদের সামনে আনবো, যারা আমার উপদেশের ব্যাপারে অন্ধ হয়েছিল এবং কিছু শুনতে প্রস্তুতই ছিল না। তাহলে কি যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তারা একথা মনে করে যে, আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দাদেরকে নিজেদের কর্ম সম্পাদনকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে? এ ধরনের কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি। হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা? তারাই, যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম সবসময় সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো এবং যারা মনে করতো যে, তারা সবকিছু সঠিক করে যাচ্ছে। এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ্বাস করেনি। তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোন গুরুত্ব দেবো না। যে কুফরী তারা করেছে তার প্রতিফল স্বরূপ এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলদের সাথে যে বিদ্রূপ তারা করতো, তার প্রতিফল হিসেবে তাদের প্রতিদান জাহান্নাম। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য থাকবে ফেরদৌসের বাগান। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং কখনো সে স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে তাদের মন চাইবে না।' সূরা আল-কাহাফ, আয়াতঃ১০০-১০৮। কিন্তু, স্বার্থান্ধ, ধুরন্ধর ও মিথ্যাশ্রয়ী কিছু মানুষ ধর্মগ্রন্থের মূল শিক্ষা বিকৃত করে বিশ্বের মানুষকে উল্টো পথে চলতে বাধ্য করছে। অশান্তির আসল কারণ এখান থেকেই শুরু। ব্যক্তিগত, দলীয়, জাতিগত, ধর্মীয় আদর্শগত এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভেদ, বৈষম্য ও স্বার্থ চিন্তা থেকে মানুষের মধ্যে বিভক্তি ও মতানৈক্যের পথ তৈরি করে দিয়েছে। এই স্বার্থ চিন্তা এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে, মানব জাতির সমগ্র প্রভাবশালী অংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে বিকৃতি ও ভাঙ্গন সুষ্টিতে মূখর। আর যারা বিকৃতি ও ভাঙ্গনের কাজে লিপ্ত নেই তারাও সৃষ্টি ও বিন্যাসের চিন্তামুক্ত। সমাজ সংস্কার ও গঠনের প্রচেষ্টারত ব্যক্তিদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। এছাড়া বর্তমান যুগে সমাজ জীবন পরিগঠন ও ভাঙ্গার বৃহত্তম শক্তি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকারগণ। আর যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকে সেখানে জনগনের উপযুক্ততা বা অনুপযুক্ততা ব্যক্তিদের হাতে শাসন ক্ষমতা সোপর্দ করার ওপরই সরকারের উপযুক্ত বা অনুপযুক্ত পূর্ণতঃ নির্ভরশীল। ভাঙ্গার কাজে যারা লিপ্ত থাকে তারা জনগণ যাতে কোনদিন নির্ভুল নির্বাচনের যোগ্য না হতে পারে সেজন্যে জনগণকে প্ররোচিত করার কাজে যতো শক্তি ও অর্থ ব্যয় করে অন্য কাজে ততো ব্যয় করে না। তাই যতোক্ষণ পর্যন্ত মানুষ আপন সৃষ্টিকর্তার পরিচয় চিনতে না পারবে এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে গাফেল থাকবে ততোক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেনা। ফলে শান্তির জন্য সম্মেলনের উদ্দেশ্যও পুরোপুরি সফল হওয়ার সন্দেহ রয়ে যায়। সুতরাং, পৃথিবীর সকল মানুষকে একই চিন্তাধারার অনুসারী হওয়া আবশ্যক ও গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাটাই আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেনঃ'বলঃ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের। তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ‌ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না। আর আমাদের কেউ আল্লাহ‌ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। যদি তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাওঃ'তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যই মুসলিম (একমাত্র আল্লাহ‌র বন্দেগী ও আনুগত্যকারী)।' মানুষ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়, মানুষকে দাস বানাতে চায় এবং নিজেদের মনগড়া মতবাদ মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। এজন্যই পৃথিবীর বাতাসে বারুদের গন্ধ। দ্বন্দ্ব সংঘাতে মানুষের জীবন থেকে শান্তির সুবাতাস তিরোহিত। তাই আমাদের টেকসই শান্তির জন্য সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে আদর্শের ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। এক আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তদনুযায়ী বিশ্ব ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে পারলে বিশ্বের দেশে দেশে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও বৈরীতার অবসান হতে পারে। কেউ কারো উপর খবরদারী না করে সকলেই আল্লাহ তায়ালার খবরদারী মেনে নিলে কারো অহংবোধে আঘাত লাগবেনা। ঢাকার 'শান্তি সম্মেলন' সফল হোক এবং বিশ্ববাসী শান্তির ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ লাভ করুক।

Anam Malik
৬ ডিসেম্বর ২০২১, সোমবার, ৯:০৮

বাংলাদেশের বাতাস দূষিত, পানি দূষিত, মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত, এখানে মানবজীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ও বিপন্ন। শান্তি আসবে কোথা থেকে? অনুগ্রহ করে প্রত্যেক বাংলাদেশী নারী ও পুরুষকে একটি বাংলা একাডেমির ইংরেজি-বাংলা অভিধান কিনতে বলুন এবং যতটা সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ শব্দ শিখুন। এটি তাদের জন্য প্রকৃত শান্তি, সাফল্য এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।

অন্যান্য খবর