মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের টার্গেট করে এয়ারলাইন্সগুলো অনৈতিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করছে। এর ফলে যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমবাজার বিদ্যমান, কেবলমাত্র সেইসব দেশে যাতায়তের ক্ষেত্রেই দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতা এবং অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। অনতিবিলম্বে টিকিটের দাম কমিয়ে এবং ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশে অপেক্ষামান বিদেশগামী যাত্রী সংকট সমাধানের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর সম্মিলিত সমন্বিত পরিষদের নেতারা। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘মধ্যপ্রচ্যসহ অন্য দেশে বিদেশগামী কর্মীদের এয়ার টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মো. ফখরুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত দুই বছর যাবত বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে। জনশক্তি রপ্তানি খাতের বদৌলতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনা তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ভর করেই গড়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি।
অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এবং রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কারিগর খ্যাত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকগণ পদে পদে অনৈতিক বাধা ও হয়রানির শিকার হয়ে আর্থিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতির উপর এর প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিদেশগামী কর্মী ও সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ যেসমস্ত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তন্মধ্যে বিমান টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতা, সেই সঙ্গে টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম। পূর্বে যে বিমান টিকিট এর মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সেই টিকিট এখন ৭৫-৯০ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতেও সুযোগ বুঝে অনেকবার এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে তখন থেকেই আমরা নানাভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে আসলেও, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিমান টিকেট নিয়ে বারবার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
ফখরুল ইসলাম বলেন, মধ্যপ্রাচ্য অর্থাৎ যেসমস্ত দেশে বাংলাদেশী শ্রমবাজার বিদ্যমান কেবলমাত্র সেইসব দেশে যাতায়তের ক্ষেত্রেই বিমান টিকিটের এমন দুষ্প্রাপ্যতা এবং অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। এয়ারলাইন্স গুলো তাদের ইচ্ছামত অতিরিক্ত ভাড়া প্রবাসগামীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কোন সংস্থা তদারকি করছে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত, শ্রীলংকার তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে বিমানের ভাড়া কয়েকগুন বেশী। ঢাকা থেকে ৬ (ছয়) ঘন্টার জার্নি রিয়াদে যেতে ভাড়া লাগে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা । অথচ ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ২৩ ঘণ্টার জার্নিতে ভাড়া লাগছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রী বাংলাদেশ বিমানে যাতায়াত করে। অবশিষ্ট প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রী বিদেশী বিমানে যাতায়াত করে থাকেন। দেশীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান নিজেদেরকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমান করার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে অপ্রয়োজনীয় মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো বিমানকে অনুসরন করে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। এতে বিদেশেী এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে নিষ্পেষিত হচ্ছে প্রবাসগামী নিরীহ কর্মীরা। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে দেশ।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানকে দায়ী করে বায়রার সাবেক নেতারা বলেন, বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখাতে টিকিটের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে বিদেশি বা স্থানীয় বিমান কোম্পানি তাদের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে সিন্ডিকেট ও এজেন্টরা লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে গ্রামের কৃষক সন্তান, খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানরা অতিরিক্ত টাকায় টিকিট কিনতে হিমসিম খাচ্ছেন। ফলে যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানো অভিবাসী কর্মীদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যা নিরসনে কোন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে কোনো অগ্রিম টিকিট ইস্যু না করে সব এয়ারলাইন্সের অবিকৃত আসন দৃশ্যমান রাখা, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য লেবার ফায়ার চালুর দাবি করেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, সাবেক মহাপরিচালক আলী হায়দার চৌধুরী, অর্থ সচিব ফখরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।