বিশ্বনাথ উপজেলার দক্ষিণ মীরেরচর গ্রামে প্রবাসী নারীকে ধর্ষণচেষ্টা, পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি ও মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও প্রভাবিত হয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন ওই নারী। গতকাল বুধবার সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন গ্রামের দরিদ্র কৃষক গৌস আলীর মেয়ে, সৌদি আরব প্রবাসী সালমা বেগম। গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ ছুটিতে দেশে ফেরেন তিনি। তার ৮ বোন ও ২ ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। আরেক ভাই জীবিত থাকলেও দুষ্কৃতকারীদের ভয়ে বাড়িছাড়া। বয়স্ক বাবা-মা ও বোনদের নিয়ে সালমা বেগমের সংসার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি ও গ্রামের কিছু দুষ্কৃতকারী দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সদস্যদেরকে ইভটিজিংসহ নানাভাবে হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্যাতন করে আসছে। জায়গা জমিতে চাষাবাদে বাধাসহ নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বৃদ্ধ মা ও বাবাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করিয়েছে।’ সালমা বেগম আরও অভিযোগ করেন, ‘গত ১৯শে সেপ্টেম্বর মা-বাবা ও বোনের জামিন হলে তাদের নিয়ে সিলেট থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে এলাকার রাসেল, রাব্বী, রাসান নামের কয়েকজন যুবক ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আমাকে জোর করে খাইতাপুল সংলগ্ন একটি ছনবনের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বোন সিএনজি ভাড়া দিতে পেছনে আটকা পড়ায় সে ও দুজন পথচারী আমার চিৎকার শোনে এগিয়ে আসে এবং দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।’ প্রবাসী এই নারী আরও বলেন, ‘মা-বাবা স্থানীয় কিছু লোকজনকে জানিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি ওয়ার্ডে ভর্তি হই। এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে প্রথমে আমার মামলা নেয়নি। পরে, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি এজাহারভুক্ত হয়। এ বিষয়ে র্যাব ৯-এ একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ‘কিন্তু ঘটনার সত্যতা পেলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকের যোগসাজশে প্ররোচিত হয়ে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি। আসামি রাসেল মিয়া, রাব্বী, রাসান মিয়া, ইকরাম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমার কলেজপড়ুয়া একটি বোনকেও ওরা নানাভাবে হয়রানি করছে।’ সালমা বেগম মামলার ৩ থেকে ৬ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে একাধিকবার গরু চুরি করার চেষ্টা, হাঁস ও মুরগি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। চাষাবাদের ট্রাক্টরটিও চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান। তিন মাস পর বাবনা নদী থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে সেটি উদ্ধার করা হয়। এ অবস্থায় কোনো উপায় না দেখে তিনি থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তার উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ দেন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২রা ডিসেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন। একই টিমে ছিলেন ধর্ষণচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমাদের পক্ষের লোকজনের কথা ঠিকমতো না শোনে বিবাদী পক্ষের বাড়ির সামনে বসে কিছু সংখ্যক লোকের জবানবন্দি নেন। পরে আমাদের অনুরোধে বাড়িতে গেলেও তাড়াহুড়ার কারণে মাত্র দুজনের বক্তব্য শোনে চলে যান।’