× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামের নালাগুলো যেন মরণফাঁদ এবার তলিয়ে গেল পথশিশু

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নালাগুলো যেন এখন মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। অরক্ষিত এইসব নালা ও খালে পড়ে প্রতিনিয়ত মানুষজন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তবে এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। এবার শহরের একটি নালায় পড়ে মোহাম্মদ কামাল নামে এক পথশিশু নিখোঁজ হয়েছে। আর ঘটনার তিনদিন হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি। জানা গেছে, সোমবার বিকালে রাকিব নামে আরেক শিশুর সঙ্গে মিলে বোতল কুড়াতে গিয়ে ১০ বছর বয়সী এই শিশুটি ষোলশহরের চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসের সামনের নালায় পড়ে যায়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরের দিন (মঙ্গলবার) বিকালে। এরপর ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয়রা শুরু করেন তল্লাশি।
তবে গতকাল বুধবার বিকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোনো হদিস মেলেনি। শিশু কামাল ষোলশহর স্টেশনে থাকা ভবঘুরে মোহাম্মদ কাউসারের ছেলে। চার ভাই- বোনের মধ্যে সবার ছোট কামাল। তার জন্মের পর মারা যায় মা। কামালের বাবা মোহাম্মদ কাউসার বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কামালের নালায় পড়ে যাওয়ার খবর পাই। তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। একটা লোক আমাকে বললো তার কাছে মিডিয়া আর ফায়ার সার্ভিসের নম্বর আছে। আমি বললাম আপনার যা করার করেন। এরপর সবাই এসে নালায় নেমে তার খোঁজ করছে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘শিশুটি নালায় পড়েছে সোমবার বিকেলে। আমরা খবর পাই পরের দিন সন্ধ্যায়। এরপর থেকে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের ডুবুরিদলের পাশাপাশি রেসকিউ টিম ও বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। ময়লা আবর্জনা বেশি থাকার কারণে উদ্ধার কাজে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আশা করছি আমরা তার খোঁজ পাবো।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট-বড় প্রায় দেড় শতাধিক নালা আছে। যাদের অধিকাংশই ওপরে ঢাকনা নেই। আর আছে ছোট-বড় অনেক খাল। এদের অধিকাংশই অরক্ষিত। এর ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ড্রেন ও খালে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ছে নগরবাসী। চলতি বছরের ১৯ জুন নগরীর চান্দগাঁওয়ে সিএনজি অটোরিকশা নালায় পড়ে তিন যাত্রী মারাত্মক আহত হন। এর মাত্র ১১ দিনের মাথায় ৩০শে জুন সকালে ষোলশহর চশমা হিলে অরক্ষিত খালে সিএনজি অটোরিকশা তলিয়ে গিয়ে এক নারীসহ ২ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ই আগস্ট মুরাদপুরে নালায় পড়ে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ নিখোঁজ হয়। যার এখনো হদিস পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ২৭শে সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ এলাকার একটি নালায় পড়ে সেহেরীন মাহবুব নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়।
দীর্ঘদিন ধরে শহরের নালাগুলো অরক্ষিত থাকা নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসে বলেন, ‘নালা নর্দমার ওপর স্ল্যাব বসানো বা পাশে ওয়াল দেয়ার দায়িত্ব তো আমাদের না। এটি দেখবে সিটি করপোরেশন। আপনারা তাদের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলুন।’ এই বিষয়ে চসিক’র জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী মানবজমিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি নালার পাটাতন খোলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সাল নাগাদ। এই অবকাঠামো নির্মাণের কাজ যেহেতু সিডিএ’র আওতাধীন, তাই এখানে চসিকের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে প্রকল্পের আওতামুক্ত নালা ও খাল যেগুলো আপনারা অরক্ষিত বলছেন,  সেগুলোতে আমরা স্ল্যাব বসাচ্ছি, ওয়াল দিচ্ছি।’ নালাগুলোতে ময়লার স্তূপ থাকা ও পানি নিষ্কাশন যথাযথ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘ইদানীং ফলফ্রুট, সিরামিকসহ বিভিন্ন পণ্য প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে ককশিটের ব্যবহার অত্যধিক বেড়ে গেছে। ব্যবহার শেষে এগুলো ফেলা হচ্ছে নালায়।এগুলোর কারণে অন্যান্য ময়লা আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমি মেয়র মহোদয়কে অবহিত করবো। এই ককশিটের ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবো।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর