× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘বেগমপাড়া’র কথা এবং মুরাদের কানাডায় জায়গা না হওয়ার নেপথ্যে

মত-মতান্তর

স্টাফ রিপোর্টার
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

ডা. মুরাদ হাসান। কেলেঙ্কারিতে আকস্মিক মন্ত্রিত্ব হারিয়ে এখন আত্মগোপনে। দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কানাডার বিমানবন্দরেও পৌঁছেছিলেন। কিন্তু জায়গা হয়নি সেখানে। বিমানবন্দর থেকেই কানাডার কর্তৃপক্ষ ফেরত পাঠায় তাকে। চেষ্টা করেছিলেন দুবাইয়ে থাকার। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে ফেরেন দেশে।
কেন কানাডায় জায়গা হলো না মুরাদ হাসানের? এ নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা।
দুনিয়ার নানা দেশের অনেক প্রভাবশালীই কানাডাকে বেছে নিয়েছেন তাদের সেকেন্ড হোম হিসেবে। এ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষকরে অর্থ পাচারের মতো ঘটনা বরাবরই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

কেন কানাডা গ্রহণ করলো না মুরাদ হাসানকে। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘‘কানাডা এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে সে দেশের সরকার এবং সরকার সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যখন কোনো বিদেশি নাগরিক সে দেশে সফর, পড়াশুনা বা কর্মসংস্থানের জন্য প্রবেশ করে, তার উপর কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) কঠোর নজরদারি রাখে। এক্ষেত্রে দুইটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয় তারা।

ওই বিদেশি নাগরিকের প্রবেশের কারণে যদি কানাডা তথা কানাডায় বসবাসকারী জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং তার দ্বারা কোনো সহিংসতা তৈরির সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সিবিএসএ ওই বিদেশি নাগরিককে কোনোভাবেই দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয় না।’’ কানাডীয় এক ইমিগ্রেশন কনসাল্টিং কোম্পানির কর্ণধার এম এল গনি এ ব্যাপারে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের এক চিত্রনায়িকাকে তিনি যেভাবে হুমকি দিয়েছেন বলে অডিও ভাইরালে শোনা গেছে, তা যেহেতু ওই চিত্রনায়িকার নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক, একই কারণে তা যে কোনো কানাডিয়ান নাগরিকের জন্যও বিপজ্জনক গণ্য করা যায়।’’

বেগমপাড়া আসলে কোথায়?
কানাডায় বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই অনেক কথাবার্তা চলছে। বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া বহু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। তাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই ‘বেগমপাড়া’। এ নিয়ে গত বছর বিবিসি বাংলায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, টরন্টোর পাশে লেক অন্টারিওর তীরে আরেকটি শহর মিসিসাগা। শহরের একটি বড় কন্ডোমিনিয়াম হঠাৎ করেই কানাডার গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় বছর দশেক আগে। সেই কন্ডোমিনিয়ামে মূলত থাকেন দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা বহু অভিবাসী পরিবার। এসব পরিবারের স্বামীরা কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। স্বামীদের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীদের নিঃসঙ্গ জীবন এবং কঠিন জীবন সংগ্রাম নিয়ে এক ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্বা তৈরি করলেন একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম। নাম ‘বেগমপুরা।’ 'বেগমপুরা' ছবি নিয়ে আলোচনা শুরু হলো কানাডার গণমাধ্যমে। আর এই ছবির সূত্র ধরে সেখানকার পত্র-পত্রিকাতেও প্রকাশিত হতে থাকলো অনেক ধরণের প্রতিবেদন। টরন্টো স্টারে ২০১১ সালে প্রকাশিত এরকম একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘কলোনি অব ওয়াইভস থ্রাইভস ইন মিসিসাগা।’

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে কাজ করেন ভারত বা পাকিস্তানের যেসব মানুষ, যাদের বেশিরভাগই মূলতঃ প্রকৌশলী, তারা জীবনের একটা সময় সপরিবারে কানাডায় চলে আসেন অভিবাসী হয়ে। কিন্তু এরা কানাডায় তাদের পেশাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে না পেয়ে আবার ফিরে যান মধ্যপ্রাচ্যেই, তবে পরিবার রেখে যান কানাডায়। মধ্যপ্রাচ্যে তারা ভালোই আয় করেন। সেই অর্থ তারা কানাডায় স্ত্রীদের কাছে পাঠান পরিবারের ভরণপোষণের জন্য। মিসিসাগার কয়েকটি কন্ডোমিনিয়াম, যেখানে থাকতেন এরকম বহু পরিবার, সেগুলো পরিচিত হয়ে উঠে বেগমপুরা নামে। যেখানে স্বামীর অনুপস্থিতিতে বেগম বা স্ত্রীরাই পরিবারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন একা হাতে। কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর জানান, এই বেগমপুরার কাহিনি থেকেই মূলতঃ প্রথম বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’র কথা চালু হয়।

শওগাত আলী সাগরই প্রথম ‘বেগমপাড়া’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন টরন্টো স্টারে প্রকাশিত বেগমপুরার কাহিনি তার এক লেখায় বর্ণনা করতে গিয়ে। এরপর বাংলাদেশের অনেকেই এই 'বেগমপাড়া' কথাটি ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিকদের কানাডায় পাড়ি জমিয়ে সেখানে দ্বিতীয় নিবাস স্থাপনের প্রতি ইঙ্গিত করে। শওগাত আলি সাগর বলেন,‘‘বেগমপুরার যে বেগমরা, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কথিত বেগমপাড়ার বেগমদের অনেক তফাৎ।

বেগমপুরার বেগমদের স্বামীরা পেশাজীবী, মধ্যপ্রাচ্যে কঠোর পরিশ্রম করে সেই অর্থ কানাডায় পাঠাচ্ছেন তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য। অন্যদিকে আমরা যে বেগমপল্লীর কথা বলি, সেটি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন অর্থে, যেখানে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ কানাডায় পাচার করে সেখানে আয়েশি জীবনযাপন করছে তারা সপরিবারে।’’ টরন্টোতে বা কানাডায় সেই অর্থে কী কোন সুনির্দিষ্ট এলাকা আছে, যেটিকে বেগমপাড়ায় বলা হয়? সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলছেন, এই বেগমপাড়া আসলে কানাডায় পাড়ি জমানো দুর্নীতিগ্রস্তদের স্ত্রীদের দ্বিতীয় নিবাস অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে এমন কোন সুনির্দিষ্ট এলাকা নেই, যেটিকে 'বেগমপাড়া' বলা হয়।

সাজ্জাদ আলি টরন্টোতে একজন রিয়েলেটর (রিয়েল এস্টেট এজেন্ট) হিসেবে কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে। তার মতে, এরকম বেগমপাড়া নামে হয়তো কোন এলাকা নেই, কিন্তু এমন জায়গা বাস্তবে রয়েছে, যেখানে এধরণের বহু বাংলাদেশি গিয়ে বসতি গড়েছেন। ‘‘বেগমপাড়া যে শুধু কথার কথা, লোকমুখে শোনা ব্যাপার, তা নয়। আমরা দেখি এখানে বাংলাদেশিরা অনেক সংখ্যায়, এমন সব জায়গায় বাড়িঘর কিনেছেন, যেটা একটু অভিজাত এলাকা। কিন্তু তাদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে তাদের এই সম্পদ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা এখানে তেমন কিছু করেন বলে তো আমরা দেখি না। কীভাবে তারা এক বা দুই মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কেনার ক্ষমতা রাখেন!’’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Paul
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:২৫

সকল মাতবর দেশগুলোই দুর্নীতির কবিতা আওড়ায় আর তারাই খুনি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, স্মাগলারদেরকে জায়গা দিয়ে নিরাপদে রাখে। ডাঃ মুরাদের মতো সবগুলাকে ঢুকতে না দিয়ে যার যার দেশে ফেরত পাঠালে দেশ আরো এগিয়ে যেত।

শামীম
১৫ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ১:১৮

আচ্ছা তাই নাকি? তা'হলে বংবন্ধুর হত্যাকারী মেজর নুর মত লোক এবং অনত তিন জন পলাতক যুদ্ধ অপরাধীরা কি করে কানাডায় থাকার যোগ্যতা পায়?

Siddq
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫৬

রাজউকের কিছু কর্মচারীর বেগমদেরও নিশ্চয় ওখানে পাওয়া যাবে।

Anwarul Azam
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৩:৫৮

চমৎকার। চমকে উঠতেই হয়। এওসব কান্ডকারখানা। কানাডা। চল চল কানাডা যাই।

Kazi
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:০৩

ঘুষ, দুর্নীতির পাচার করা অর্থ । এখানে তিনটি অপরাধ করছেন । আমলারা (1) ঘুষ খাচ্ছেন, (2) দুর্নীতির ও করছেন, সরকারি প্রকল্পে (3) টাকা পাচার করছেন । দুই মিলিয়ন সমান চৌদ্দ কোটি টাকা । গড়ে ৭০ টাকা ডলার হিসাবে ।

অন্যান্য খবর