× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আহা জীবন

মত-মতান্তর

ইমরান আলী
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার
ছবি- জীবন আহমেদ

এটাই বুঝি জীবন!  মুহূর্তেই সব ফিকে হয়ে যায়। টর্নেডোর মতো উলট পালট করে দেয় জীবন। একটি ফিডার। শিশুর দুধ খাওয়ার বাক্স। পুড়ে যাওয়া লঞ্চে পড়ে আছে। কিন্তু শিশুটি এখন কোথায় কে জানে। ফিডারের ঠিক পাশেই পুড়ে যাওয়া বর্ণমালা শেখার বই। ফিডারের দুধ অর্ধেকও ফুরায়নি।

চারদিকে আগুন। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই লঞ্চের সবকিছু। আগুন লেগেছে কোনো এক শিশুর রঙিন জুতায়। পুড়ে ছারখার জুতার এ পাশ ওপাশ। গলেছে প্লাস্টিকের ফিতা। সেই সঙ্গে শিশুর জীবনটাও।

লোহাও পুড়ে হয়েছে কৃষ্ণবর্ণ। আর মানব শরীর! একেকটা শরীর আগুনে জ্বলে জ্বলে কঙ্কাল হলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো চারদিকে হাড়গোড়। সুগন্ধার বাতাসে জীবনপোড়া গন্ধ। পানির অভাবে আগুন নেভে না। আহা নিয়তি! অথৈ পানির উপর ভেসেও সেখানে পানি মিললো না বুঝি।

প্রায় পঞ্চাশোর্ধ ইসমাইল তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আগুন থেকে বাঁচতে ঝাঁপ দিলো পানিতে। কিন্তু সে জানে না কোথায় তার স্ত্রী কোথায়ই বা তার ছোট্ট মেয়েটি। নির্বাক দাঁড়িয়ে ইসমাইল নদীর তীরে। ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেল! এই বুঝি জীবন!

দশ বছর বয়সী আদরের কন্যাকে নিয়ে কোটি জনতার শহরে বেড়াতে এসেছিলেন বশির। রঙের এ শহর। মেয়েটি কিছু চকলেটও কিনেছিল বাড়ি ফিরে তার বান্ধবীদের দেবে বলে। বাড়ি ফেরা আর হলো না। লঞ্চে তার শরীরেও আগুন লাগে। তাকে বাঁচানোর জন্যই মেয়েকে পানিতে ফেলে দেন বশির। কিন্তু তাকে আর বাঁচাতে পারেননি। নিজেও পুড়েছেন আগুনে। মেয়ে আর ফিরলো না। বাড়ি যাওয়া হয়নি বশিরের। হাসপাতালে পোড়া শরীরে কাতরাচ্ছেন। চোখে তার মেয়ের জন্য জল। জ্ঞান হারাচ্ছেন একটু পর পর। পেছনে আগুন। সামনে অথৈ পানি। অতটুকু মেয়ে বাঁচে আর কি করে! রঙের শহরে বেড়াতে এসে জীবনের সব রঙ পুড়ে ছাই হবে কেই বা জানতো!

দুর্ঘটনা কত রকম করেই না আসে। গণমাধ্যম থেকে জানা গেল আগুন ধরার আগেই টের পেয়েছিল যাত্রীরা। কিন্তু কারও আর্তি, কারও আশঙ্কার বাণী পৌঁছেনি কর্তৃপক্ষের কানে। পৌঁছেই বা কী হবে। কত দুর্ঘটনাই তো ঘটছে প্রতিনিয়ত। ঘটনা ঘটে যায়। তদন্ত হয়। বের হয় কতকিছু। নানান সব দুর্ঘটনা শেষে জানা যায় অনেক কিছুর পারমিশন ছিল না। অনেক কিছুর হয়তো মেয়াদই ছিল না। এমন আরও কতরকম কিচ্ছা-কাহিনী। সে যাই হোক, এই হলো সাধারণের নিয়তি।

শরীর পোড়ে আগুনে, ডোবে পানিতে, থেতলে যায় একেকটা জীবন পিচঢালা সড়কে, গাড়ির চাকার নিচে। আরও কত কি যে হয়! তাতে কী কারও হুঁশ হয়? না। মাঝে শুধু ক’টা দিনের বিরতি। ফের ঘুরেফিরে আসে এমন সব দুর্ঘটনা। তদন্ত চলে। নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্টরা। এরপর কী হয়? আবারো গুনতে থাকি কয়টা লাশ পাওয়া গেল। কয়টা উদ্ধারের বাকি!
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর