কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের সুধী গ্রামের দিনমজুর মো. জঙ্গু মিয়ার ৪ সন্তানের মধ্যে সবার বড় মোহাম্মদ ইয়াসিন (২১)। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় অভাবের সংসারের হাল ধরতে শিশু বয়সেই ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিল সে। বছরের পর বছর রাজধানীতে চলেছে তার জীবনযুদ্ধ। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন হওয়ায় ইট-পাথরের নগরীতে অবিরত ছুটতে হয়েছে ইয়াসিনকে। এরপরও ধরা দেয়নি সচ্ছলতা নামের মিছে মায়া! এ পরিস্থিতিতে মাত্র দুই মাস আগে কর্মচারী হিসেবে কাজ নিয়েছিল কাপ্তানবাজারের ভূঁইয়া স্টোরে। কিন্তু গতকাল ভোরের আগুন চিরদিনের মতো থামিয়ে দিয়েছে ইয়াসিনের স্বপ্ন-সাধনাকে। আগুনে মালামাল ও আসবাবপত্রের সঙ্গে পুড়েছে ইয়াসিনের সংগ্রামী শরীর-মন। ধ্বংসস্তূপের মাঝে এককোণে পড়ে ছিল তার আগুনে পোড়া মৃতদেহ।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ইয়াসিনের লাশ নিয়ে আসা হয় সুধী গ্রামের বাড়িতে। এ সময় ছোট তিন ভাইবোন রুনা আক্তার (১৯), মোরসালিন (১৫), তৃনা (১০), বাবা জঙ্গু মিয়া ও মা নাজমা আক্তারের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের পরিবেশ। সচ্ছলতার খোঁজে গিয়ে এভাবে লাশ হয়ে ছেলে বাড়ি ফিরবে, তা ভাবতে পারেননি জঙ্গু মিয়া। ছেলের শোকে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন মা নাজমা আক্তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে যেন এবার অকূল সাগরে পড়লো পরিবারটি।
স্বজনরা জানান, ইয়াসিনের পিতা জঙ্গু মিয়া একজন সহজ-সরল মানুষ। দিনমজুরের কাজ করলেও সেভাবে তিনি কাজ পান না। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় ইয়াসিন ৮/৯ বছর বয়সেই অভাবের তাড়নায় ঢাকামুখী হয়। ইয়াসিনের মা নাজমা আক্তার বিভিন্ন বাড়িঘরে ছোটখাটো কাজ করেন। এরপরও অভাব যেন পরিবারটির নিত্যসঙ্গী। সংসারের এমন অবস্থায় বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দায়িত্ব বাড়ে ইয়াসিনের। কিছুটা বেশি বেতনে মাত্র দুই মাস আগে সে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেয় কাপ্তানবাজারের ভূঁইয়া স্টোরে। সেখানেই শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘটে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় অর্ধশতাধিক দোকান। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার করা হয় পুড়ে মারা যাওয়া ইয়াসিনের লাশ। ইয়াসিনের এমন মৃত্যুতে পরিবারটির মাথার উপর একমাত্র ছায়াটিই যেন সরে গেছে। সচ্ছলতার স্বপ্ন কেবল অধরাই নয়, নতুন করে এক মহাবিপর্যয়ে পড়েছে পরিবারটি। অগ্নিকাণ্ডে নিহত ইয়াসিনের লাশ বাড়িতে আনার পর গুনধর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম রাসেল ইউপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে যান। সেখানে তিনি পরিবার ও স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি পরিবারটিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।