সিলেটে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন অনলাইনভিত্তিক পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’র রাইডাররা (ডেলিভারিম্যান)। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে সিলেট নগরীর ধোপাদীঘিরপারস্থ দারাজ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে সিলেট অফিসে তালাবদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ ‘দারাজ’র রাইডাররা। সিলেটে দারাজ কার্যালয়ের সামনে শতাধিক ডেলিভারিম্যান অবস্থান নিয়ে অবিলম্বে তাদের প্রাপ্য মাসিক বেতন, ওভারটাইমের পারিশ্রমিকসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ ঢাকা অফিসের কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন বলে হুঁসিয়ারি উচ্চারণ করেন। ‘দারাজ’র রাইডারদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- মাসিক বেতনের কোনো নিয়ম-নীতি নেই। প্রতি মাসে রাইডারদের প্রাপ্য বেতনের চাইতে কম দেয়া হয়। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিউটির নিয়ম থাকলেও তাদের দিয়ে ওভারটাইম করানো হয়, কিন্তু ওভারটাইমের পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। ডেলিভারির সময় ফোনের খরচ ও ডেলিভারির পর্যাপ্ত খরচ দেয়া হয় না।
কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই নতুন নতুন নিয়ম রাইডারদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় এবং অফিসে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়। দুই ঈদ ছাড়া আর কোনো ছুটি তাদের দেয়া হয় না। মহামারি করোনার সংক্রমণের সময় কোনো ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হয়নি, এমনকি কোম্পানির পক্ষ থেকে সামান্য মাস্কও তাদের দেয়া হয় না। অতিরিক্ত কাজ করানো এবং মানসিক চাপে রাখা হয়। ১৬টি বাইসাইকেল ক্রয়ের জন্য রাইডারদের কাছ থেকে চাকরি হারানো ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ৯৩ হাজার টাকা নেয়া হয়। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের জন্য টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত হঠাৎ বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া গত নভেম্বর মাসে টানা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করানো হলেও রাইডারদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ অবশেষে আন্দোলনে রূপ নেয়। ‘দারাজ’র রাইডার ইমরান আহমদের পরিচালনায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- সোহেল আহমদ, রাজীব আহমদ, আনোয়ার হোসেন, আরিফ আহমদ, তারেক আহমদ, আতিকুর রহমান, তমাল দাশ, ফাহিম আহমদ, সাহিদুর রহমান, আব্দুল কাদির, রাজন আহমদ, আবির হোসেন, শাকিব আহমদ, এমরান আহমদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড- এর চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) এ. এইচ. এম. হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, দারাজ দেশের সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দারাজে প্রত্যেক কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। এমনকি করোনাকালীন সময়ে যখন ব্যসায়িক খাত ও প্রতিষ্ঠান সমূহ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে, এর মধ্যেও আমরা সকল কর্মীর বেতন যথা সময়ে প্রদান করেছি। পারস্পারিক চুক্তির মাধ্যমে দারাজের কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং দারাজ সে অনুযায়ী কর্মীদের বেতন ও ভাতা প্রদান করে থাকে। গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের জন্য দারাজ অ্যাপে একটি নির্দিষ্ট ফিচার রয়েছে যা দিয়ে রাইডাররা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, এর জন্য রাইডারদের নিয়মিত ইন্টারনেট ডেটার খরচ দেয়া হয়। দারাজে রাইডারদের প্রতিষ্ঠানের পরিবহন নীতি ও ব্যবস্থা অনুযায়ী ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, যার ব্যয়ভার সম্পূর্ণ দারাজ বহন করে। তবে, রাইডাররা চাইলে নিজস্ব বাহন ব্যবহার করতে পারেন। তবে, দারাজ এক্ষেত্রে কোনো ব্যয়ভার বহন করে না। প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী দারাজে রাইডাররা কাজ করেন।