× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল /এতদিন কোথায় ছিলেন হারিছ চৌধুরী

প্রথম পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৩ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার

প্রায় ১৪ বছর আগে লাপাত্তা হয়েছিলেন তিনি। বলা হচ্ছিল তিনি বিদেশে চলে গেছেন। এরপর থেকেই তার অবস্থান নিয়ে ধূম্রজাল। গত দু’দিন ধরে খবর- তিনি মারা গেছেন। তাও অন্তত তিন মাস আগে। মৃত্যুর তিন মাস পর এই খবর চাউর হয়েছে। এই মৃত্যুর খবর নিয়েও ধূম্রজাল। কোথায় মৃত্যু হয়েছে।
কবরই বা দেয়া হয়েছে কোথায়? এই তথ্য কেউ দিতে পারছেন না। ঘনিষ্ঠজন ও প্রতিবেশীদের অনেকে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করছেন। কিন্তু দাফন কোথায় হয়েছে তা বলতে পারছেন না। ১৪ বছরের রহস্য জীবনের মতোই মৃত্যুটাও রহস্যে ঘেরা আলোচিত রাজনীতিবিদ হারিছ চৌধুরীর। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এক সময়ের রাজনৈতিক সচিব। সেই সময়ের ক্ষমতাধর এই নেতা এক এগারোর পটপরিবর্তনের পর গাঢাকা দেন। এর থেকে কোথায় ছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর কেউ খোলাসা করতে পারেনি। বলা হচ্ছে দেশ ছেড়ে তিনি ভারতে পালিয়েছিলেন। পরে তিনি পাকিস্তান ও ইরান ভ্রমণ করেছেন। সেখান থেকে লন্ডন যেতে পারেন। লন্ডনে গত আগস্টে তিনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তার মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য জানিয়েছেন দেশে অবস্থানরত তার ঘনিষ্ঠরা। তাদের কেউ বলছেন, তিনি লন্ডনে মারা গেছেন এবং লন্ডনেই দাফন করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, তিনি কোনো এক মাধ্যমে দেশে ফিরে এসেছিলেন। ঢাকায় অবস্থানকালেই তার মৃত্যু হয়। ঢাকার কোনো একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি সূত্রগুলো নিশ্চিত করলেও কোথায় দাফন করা হয়েছে এটি কেউ বলতে পারছেন না। এতে অনেকে প্রশ্ন করছেন তার এই মৃত্যুর খবরটি আসলে সত্য কিনা?
বিএনপি’র এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন হারিছ চৌধুরী। দলের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন আমলের শুরুতে দেশ থেকে পালিয়ে যান বলে তখন প্রচার হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতকই ছিলেন। তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ হয়নি। হারিছ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব দিঘীরপাড় গ্রামের দর্পণ নগর গ্রামে। পারিবারিকভাবে অনেকেই বলেছেন- পলাতক হওয়ার পর হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ সময় ভারতের আসামের করিমগঞ্জে নানাবাড়ীতে অবস্থান করেছেন। মাঝেমধ্যে তিনি লন্ডনে তার স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে দেখা করতেও গেছেন। তবে- কখনো গোপনে দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। দেশে থাকা স্বজনরাও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়টি সব সময় এড়িয়ে গেছেন। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আড়ালে থাকা বিএনপি’র এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে সব সময়ই রহস্য ছিল। প্রায় তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে এলাকায় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি চাউর হলেও তখন মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বজনদের কেউ নিশ্চিত করেননি। বরং বিষয়টি এড়িয়ে যান তারা। গতকাল সকালে গণমাধ্যমের কাছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তারই চাচাতো ভাই ও সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রায় ৩ মাস আগে লন্ডনের একটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ভর্তি থাকা অবস্থায়ই তিনি মারা যান। তার মরদেহ লন্ডনে দাফন করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সময় তিনি (আশিক চৌধুরী) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি খবরটি শুনেছেন।’ বিলম্বে কেন মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী জানান, ‘আমরা জানি তিনি মারা গেছেন। তখন তো কেউ আর আমাদের জিজ্ঞেস করেনি। এখন জিজ্ঞেস করায় বলছি।’ হারিছ চৌধুরীর আত্মীয় ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন জানিয়েছেন, ‘হারিছ চৌধুরী মারা যাওয়ার খবর তারা শুনেছেন অনেক পরে। পারিবারিকভাবে শুনেছেন। দেশের বাইরে কোথাও মৃত্যু হয়েছে। তবে- কোথায় তিনি মারা গেছেন; সেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেননি। কিংবা জানার আগ্রহও দেখাননি।’ এদিকে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাইয়েরও মৃত্যু হয়েছে। তাকে নিজ বাড়ি কানাইঘাটে দর্পণ নগরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। ওই জানাজায় অংশ নেয়া কানাইঘাটের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক জানিয়েছেন, জানাজার পর সবাই বলাবলি করছিল; ভাইয়ের শোকে মারা গেছেন ভাই। আর ওই ভাই বলতে হারিছ চৌধুরীকেই তখন বোঝানো হয়েছিল। গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তারা জানান, কানাইঘাটের দর্পণ নগরে হারিছ চৌধুরীর পারিবারিক গোরস্থানে গত তিন মাসে মারা যাওয়া একাধিক ব্যক্তির দাফন করা হয়েছে। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কয়েকজন মারা যান। তিন মাস আগে হারিছ চৌধুরীর ভাবী সম্পর্কে এক আত্মীয় মারা যাওয়ার দু’দিন আগে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা  জেনেছিলেন। তখন তাদের পারিবারিক কবরস্থানে একটি নতুন কবর নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী ছিলেন। ওই কবরটি কার? এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও হারিছ চৌধুরীর স্বজনদের কাছ থেকে কোনো তথ্য মিলেনি। হারিছ চৌধুরীর আত্মীয়, একই এলাকার বাসিন্দা ও সিলেট জেলা বিএনপি’র সিনিয়র নেতা আবুল কাহ্‌হের চৌধুরী গতকাল গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, হারিছ চৌধুরী ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। গোপনে ঢাকায় তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তখন তার মেয়েও ঢাকায় অবস্থান করছিল। সেটি তিনি পারিবারিকভাবে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। পারিবারিক অপর একটি সূত্র বলছে-বিদেশি তাবলীগ জামাতের সঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন হারিছ চৌধুরী। সিলেটের বাইরে কোনো এক জেলায় বিদেশি তাবলীগ জামাতের সঙ্গে থাকা অবস্থায় হারিছ চৌধুরী মারা যান। মারা যাওয়ার পর ওই এলাকায়ই তাকে দাফন করা হয়েছে। তবে ঠিক কোন এলাকায় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও দাফন হয়েছে সেটি কেউ বলতে পারেননি। সিলেট জেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতা গতকাল জানিয়েছেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তারা শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে সুনির্র্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। এদিকে এক সময় সিলেটেও প্রভাবশালী ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ওই সময় সিলেট ও কানাইঘাটের রাজনীতিতে এককভাবে শাসন করেছেন তার স্বজনরা। ওই সময় তার আত্মীয় আবুল কাহ্‌হের চৌধুরী, চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরীও বিএনপি’র রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। হারিছ চৌধুরী পলাতক হওয়ার পর থেকে তাদের সেই প্রভাব কমে আসে। মঙ্গলবার আশিক চৌধুরী তার ফেসবুকে হারিছ চৌধুরী ও তার ছবি দিয়ে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন- ‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধনে...।’ আর এই স্ট্যাটাসের কমেন্টসে অনেকেই হারিছ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। তার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার পরই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Mohamed Sajedur Rahm
১৫ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ৪:২২

What is the reason for these controversies behind his death? If he has died, everybody has the right to know and make DOA for him

Dr Shameem Hassan
১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১০:১৩

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দাকে নির্ধারিত স্থানে মৃত্যুদান করতে চান; তখন (তাকে) সেখানে (যাওয়ার জন্য) সেই বান্দার কোনো না কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।’ এটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উক্তি নয়। এটি কোরান কারীমের একটি সুরার আয়াতের অংশ বিশেষ।

শওকত আলী
১৩ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৩:২০

‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’। আল্লাহ ছাড়া মৃত্যু থেকে কেউই বাঁচতে পারবেন না। কিন্তু কার মৃত্যু কোথায় হবে- এ কথা কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। হয়তো একদিন আগে বা একদিন পরে সবাইকে চলে যেতে হবে। কিন্তু হারিছ চৌধুরী গংরা পালিয়ে কি বেঁচে থাকতে পেরেছে? কেউ পারবে না। দুর্নীতি, ঘুষ কিংবা হারাম পথে অর্থ উপার্জন করে নিজের আমলকে কেন আমরা নষ্ট করে দেবো? আর পালিয়ে গিয়ে জেল- জরিমানা হতে ক্ষণিকের জন্য বেঁচে থাকলেও আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দাকে নির্ধারিত স্থানে মৃত্যুদান করতে চান; তখন (তাকে) সেখানে (যাওয়ার জন্য) সেই বান্দার কোনো না কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।’

অন্যান্য খবর