× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাউল সেজেও রক্ষা হলো না খুনির

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

‘আমার ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল, চলবে আর কতোকাল, ভাবি শুধু একা বসিয়া, রে দয়াল-এভাবে আর চলবে কতো কাল’- এই গানটির মডেল হতে গিয়ে কপাল পুড়েছে তিন খুনসহ একাধিক মামলার আসামি বাউল রূপধারণকারী হেলাল উদ্দিন ওরফে সেলিম ফকিরের (৪৫)। সত্যিই ‘এভাবে আর চলবে কতোকাল’ গানের সঙ্গে বাস্তবে মিলে বহু অপরাধ করেও পার পেলেন না সেলিম। ধরা পড়েছেন র‌্যাবের জালে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে নিজ এলাকা বগুড়াতে একটি মুদির দোকান দেয় হেলাল হোসেন। এরপর জড়িয়ে পড়ে খুন, চুরি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে একে ৩টি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে হেলালের কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এসব হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় সাজার হাত থেকে বাঁচতে বাউলের ছদ্মবেশ ধারণ করে সে।
ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে। একপর্যায়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনে গিয়ে নিজের নাম-পরিচয় পাল্টে ফেলে নতুন সংসার গড়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ গানের মডেল হয়ে কপাল পুড়ে তার।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামি মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত হেলাল ৩টি হত্যাকাণ্ডসহ একটি চুরির মামলা এবং একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলার আসামি বলে স্বীকার করেছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন  ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ গানের মডেল হিসেবে অভিনয়ের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হয় স্থানীয়রা। এরপর তার বিষয়ে র‌্যাবকে জানানো হয়। ছয় মাস ধরে র‌্যাবের গোয়েন্দারা তার অবস্থান শনাক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাবের এই মুখপাত্র জানান, ২০০১ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় আদালত হেলালকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও দুইটি হত্যা মামলা রয়েছে। যার একটি ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলা রয়েছে। চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যা মামলায় হেলাল ২১ বছর বয়সে এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সেলিম দুর্ধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়। এ ছাড়া ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হন হেলাল ওরফে বাউল হেলাল। নারী নির্যাতন আইনেও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
অপরাধ সংগঠনের সময় নিজেও জখম হয়েছেন হেলাল। ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর সে লুলা হেলাল নামে পরিচিতি পায় সবার কাছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলালের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে চুরির মামলা এবং ২০১৫ সালে জামিন পাওয়ার দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হলে সে সুকৌশলে এলাকা ত্যাগ করে। এরপর ফেরারি জীবনযাপন শুরু করে হেলাল। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তীতে কমলাপুর থেকে ট্রেনে চট্টগ্রামে চলে যায়। সেখানে আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করার পর ট্রেনে করে সিলেটের শাহজালাল মাজারে যায়। সেখানে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে হেলাল। এভাবে সে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে।
৭ বছরের ফেরারি জীবনে সর্বশেষ চার বছর কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। এ সময় রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে জীবিকা নির্বাহ করতো হেলাল। ৫ বছর আগে হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। তখন শুটিংয়ের একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ শিরোনামের বাউল গানের মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।
বগুড়া জেলায় সেলিম অপরাধ করার সময় তাকে কেউ প্রশ্রয় দিয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তাকে প্রশ্রয়ের এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তাকে প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসসি আনম ইমরান খান ইমন ও এএসপি মো. আল-আমিন প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর