× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৬ মাসে ১২৮ জন নিহত: সিপিডি

শেষের পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে অন্যান্য খাতের কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ৬ মাসে ৮২টি কারখানায় আগুন লেগেছে, যাতে মৃত্যু হয়েছে ১২৮ জনের। এতে দগ্ধ বা আহত হন ২৮৩ জন। সে হিসাবে প্রতি ২ দিনে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে। তবে বেশির ভাগই ঘটেছে ঢাকায়। বৃহস্পতিবার সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন। খ্রিশ্চিয়ান এইডকে সঙ্গে নিয়ে গবেষণাটি করে সিপিডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতের বাইরে অন্য খাতগুলোর কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। নিরাপত্তার অভাবের অন্যতম কারণ হলো- অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বিনিয়োগে আগ্রহী নন উদ্যোক্তারা। তবে সিপিডি মনে করে, এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, অগ্নিদুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ২৯টি ঘটেছে ঢাকায়। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে ১০টি, গাজীপুরে আটটি এবং চট্টগ্রামে আটটি দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত বছরের অক্টোবরে শিল্পখাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অগ্নিদুর্ঘটনার চিত্র খুবই উদ্ধেগজনক। এই দুর্ঘটনাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
গবেষণায় বলা হয়, মূলত হাসপাতাল, শপিংমল এবং শিল্পকারখানায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৬৩ শতাংশ দুঘর্টনাই অগ্নি সংক্রান্ত।
সিপিডি মনে করে, দুর্ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে শিল্পখাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। কলকারখানায় নিরপত্তা নিশ্চিত করতে বিডা গত বছরের অক্টোবরে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিপিডি।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের বাইরেও অন্যান্য খাতগুলো বর্ধনশীল। দুই দশক আগে পোশাক শিল্পের বহির্ভূত কারখানার সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার।
এফবিসিসিআই ৩২টি খাতে ৪২ হাজার প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয় বেশি শিল্পকারখানা হচ্ছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছে ইটভাটা, টেক্সটাইল, হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদি। এসব খাত ধীরে ধীরে বাড়ছে।
সিপিডি বলেছে, এদের বড় একটি অংশের কোনো নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন না হলেও এই কারখানাগুলো রপ্তানিমুখীর দিকে যাচ্ছে।
খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, গত বছর খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে রপ্তানি একশ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতে রপ্তানি বাড়ছে। চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, পাট, হালকা প্রকৌশলী, প্লাস্টিক শিল্পে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব খাতে রপ্তানি বাড়াতে হলে নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে।
গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাকের বাইরে ৪২ শতাংশ কারখানায় কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। মাত্র ৯ শতাংশ কারখানায় সেইফটি কমিটি আছে। এসব কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঘাটতিসহ বড় রকমের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়ে গেছে।
সিপিডি বলেছে, শুধু শিল্প কারখানা নয়, বরং এর বাইরে যে সব প্রতিষ্ঠানে বেশি লোকের সমাগম থাকে সে সব জায়গায় নিরপত্তা জোরদার করতে হবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে আগামী দিনে শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য অগ্নিদুর্ঘটনা একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। শিল্পকারখানায় যেভাবে পরির্দশন দরকার সে অনুযায়ী হচ্ছে না। নিরাপত্তার জন্য পরিদর্শন আরও বাড়াতে হবে। শিপব্লিডিং চা, প্রিন্টিং শিল্পে পরিদর্শন হয় না বললেই চলে। অথচ এসব খাতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি।
গবেষণায় বলা হয়, অনেক খাতে পরিদর্শন হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিদর্শন হলেও তা কার্যকর নয়। ফলোআপ পরিদর্শন একেবারেই হয় না। পোশাক খাতের বাইরে শিল্প কারখানাগুলোতে তুলনামূলক কম হলেও শিশু শ্রম রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানা পরিদর্শনের জন্য বিডার নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয় তারা ৫ হাজার কারখানার মধ্যে মাত্র ৮৭৫টি কারখানা পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকায় সবচেয়ে কম পরিদর্শন হয়েছে। অথচ, এখানে কারখানা ও অবকাঠামো সুবিধা অন্যান্য শহরের তুলনায় বেশি রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের কারখানা পরিদর্শন দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত বলে মনে করে সিপিডি।
সিপিডি মনে করে, বাংলাশে শুধু তৈরি পোশাক খাতের দেশ নয়। এর বাইরে আরও অনেক খাত আছে, যেগুলো ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই বাস্তবতায় এসব কারখানার কর্ম-পরিবেশের নিরাপত্তা বিধান করা গুরুত্বপূর্ণ। কর্ম-পরিবেশ নির্বিঘ্ন ও ঝুঁকিমুক্ত না করতে পারলে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যাবে না। কলকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর