× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘ভ্যাকসিন জোনে’ লুৎফার নেতৃত্বে চুরি করতো ওরা

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

ওরা ৫ নারী। একই চক্রের সদস্য। এক সঙ্গেই নামতো অপারেশনে। কখনো লিফট, কখনো জটলা স্থানে ভ্যানেটি ব্যাগ চুরি করতো। ভিড়ের মধ্যে মাঝেমধ্যে লুটে নিতো স্বর্ণের চেইন কিংবা কানের দুল। কেউ টেরই পেতো না। চুরি বিদ্যায় দক্ষ তারা। তাদের টিম লিডার লুৎফা ওরফে রুবি।
অভিযোগের পর অভিযোগ এলেও কোনো হদিস মিলছিলো না তাদের। অবশেষে গোয়েন্দা নজরদারিতে এলো ফল। এক সঙ্গেই গ্রেপ্তার হয় চক্রের ৫ জন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের ‘ভ্যাকসিন জোন’। ওখানেই ফাঁদ পেতে ভ্যাকসিন নিতে আসা মহিলাদের মালপত্র চুরি করতো এরা। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চোরদের উপদ্রব বেশি। অনেক আগে থেকেই উপশহর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী পপি বেগমের নেতৃত্বে মহিলা চোর চক্র গড়ে উঠেছে। পপি চক্রের টার্গেটে থাকেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী কিংবা তাদের স্বজনরা। গত তিন বছরে হাসপাতালে চুরি করতে গিয়ে একাধিকবার ধরা পড়েছে পপি তার সহযোগীরা। গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছেন। এখন ওসমানী হাসপাতালের ভেতরে আর আগের মতো পপি চক্রের অবস্থান নেই। কিছু কিছু ঘটনার খবর এলেও পপি কিংবা তার সহযোগীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পুলিশের ধারণা ছিল; নতুন কোনো চোর চক্র অবস্থান নিয়েছে হাসপাতালে। এ ধারণাই সত্য হলো। পুলিশ জানিয়েছে, ১৫-২০ দিন ধরে প্রায় সময় আউটডোর থেকে অভিযোগ আসছিলো। আউটডোরে রয়েছে ভ্যাকসিন সেন্টার। এ ছাড়াও বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে রোগীরা আসেন। তাদের কাছ থেকে মালপত্র চুরি যাওয়ার খবর আসছিলো। বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আউটডোরের ভ্যাকসিন জোন সহ ডাক্তারের চেম্বার এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়। আর এই নজরদারিতে ধরা পড়লো এক সঙ্গে ৫ নারী চোর। তারা আউটডোরের নিচ তলার লিফটে কিংবা ভ্যাকসিন জোন এলাকায় ঘুরাফেরা করছিলো। বার বার লিফটে তারা উঠানামা করছিলো। অনেক সময় তারা ভ্যাকসিন গ্রহীতার ভ্যানেটি ব্যাগ চুরির চেষ্টা করছিলো। এসব দৃশ্য দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়। এরপর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে হাসপাতালের ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু আটক করা ৫ নারীই ছিল ধূর্ত। প্রথমে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। এবং কেউ ভ্যাকসিন, কেউ রোগী দেখাতে এসেছে বলে জানায়। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের আটক করলেও পুলিশের অব্যাহত জেরার মুখে বিকাল ৩টার দিকে তারা চুরির ঘটনা স্বীকার করে। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ৫ নারী  চোরের বাড়ি মাধবপুরের বাঘাসুরা গ্রামে। সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা। এরা হচ্ছে- জলিল মিয়ার স্ত্রী লুৎফা বেগম রুবি, মিলন মিয়ার স্ত্রী রুবিনা, মারুফ মিয়ার স্ত্রী মিলন বেগম, বিল্লাল মিয়ার স্ত্রী সালমা ও নুরুল হকের স্ত্রী হালিমা বেগম। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে তারা সিলেট শহরে বসবাস করে না বলে জানায়। তবে পুলিশের ধারণা- ওই ৫ নারী চোর সিলেট শহরের কোথাও না কোথায় বসবাস করে। বাইরে থেকে পুরুষ সিন্ডিকেট তাদের পরিচালনা করতে পারে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জয়নাল হোসেন জানিয়েছেন, ‘পূর্বে পপির নেতৃত্বে একটি চক্র মেডিকেল এলাকায় চুরি করতো। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পপি ও তার চক্রের সদস্যরা পিছু হটেছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে নতুন করে লুৎফা ওরফে রুবির নেতৃত্বে অন্য আরেকটি চক্র হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলো। এবং তারা টার্গেট করতো ভ্যাকসিন নিতে আসা লোকজনকে। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো। এখন হাসপাতালের ভেতরে কেউ অপকর্ম করলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে।’ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ওসমানীতে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা সংঘবদ্ধ নারী চোর চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে ওসমানী হাসপাতাল এলাকায়  রোগী ও তার স্বজনদের টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে আসছিলো। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত স্বর্ণালংকার চুরিকৃত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ নারী চোরকে গতকাল সিলেটের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর