দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের জন্য মরিয়া ছিল ভারত। তৃতীয় টেস্টে বিরাট কোহলিদের কড়া ভাষার প্রতিবাদই তার প্রমাণ দেয়। ভারতীয়দের চোখে ম্যাচের কিছু সিদ্ধান্ত সুষ্ঠুভাবে হয়নি কেপ টাউনে, প্রোটিয়াদের জেতাতে কাজ করেছে কোনো ‘অদৃশ্য হাত’। দৃষ্টির অগোচরে থেকে ম্যাচের কলকাঠি নেড়েছে সুপারস্পোর্টস! ভারতীয়দের অভিযোগ ডিন এলগারের রিভিউয়ের সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়নি এই হোস্ট ব্রডকাস্টার। এমন ঘটনায় মাঠেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলসহ ভারতের অনেক খেলোয়াড়। তবে ক্ষেপাটে আচরণেও শাস্তি পায়নি ভারত।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, বিতর্কিত ওই ঘটনা নিয়ে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন আইসিসির ম্যাচ অফিসিয়ালরা। কিন্তু আচরণবিধি ভাঙার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। যে কারণে কোনো প্রকার শাস্তি বা জরিমানার মুখোমুখি হবে না বিরাট কোহলির দল।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে হেরে সংবাদসম্মেলনে এসে কোহলি বলেন, ‘মাঠে যা ঘটেছে, আমরা তা বুঝেছি এবং মাঠের ভেতরের সবকিছু বিস্তারিত বাইরের লোকেরা জানে না। কাজেই, আমরা সীমা ছাড়িয়েছিলাম, এমন কিছু বলা ও ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করা আমার জন্য ঠিক হবে না।’
কোহলি বলেন, ‘আমরা যদি তখন তিনটি উইকেট তুলে নিতাম, তাহলে হয়তো ম্যাচের মোড় পাল্টে যেত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরো টেস্ট ম্যাচেই আমরা যথেষ্ট লম্বা সময় ধরে চাপ ধরে রাখতে পারিনি এবং এজন্যই হেরেছি। ওই একটি মুহূর্তকে খুব চমৎকার মনে হতে পারে এবং বিতর্ক তৈরি করার জন্য দারুণ। কিন্তু আমি সে বিষয়ে আগ্রহী নই। ওটা একটা মুহূর্ত ছিল, যা চলে গেছে এবং আমরা ম্যাচে মনোযোগ দিয়ে উইকেট নেয়ার চেষ্টা করেছি।’
ঘটনা কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ২১তম ওভারে অশ্বিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এলগার। ২১২ রানের লক্ষ্যে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় সংগ্রহ তখন ৬০/১। এলগারকে ফিরিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উল্লাসে মাতেন কোহলিরা। কিন্তু আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রিভিউয়ের পর দেখা যায় বল স্টাম্পের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে বেঁচে যান এলগার। এ নিয়ে স্টাম্প মাইক্রোফোনেই এলগারকে উদ্দেশ্য করে কোহলি বলতে থাকেন, ‘প্রতিপক্ষ নয়, তোমার দলের প্রতি নজর দাও যখন তারা বল শাইনিংয়ে ব্যস্ত থাকে। সব সময় আমাদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
লোকেশ রাহুলকে বলতে শোনা যায়, ‘১১ জনের বিরুদ্ধে পুরো দেশ।’ রাহুল মূলত এই সিরিজের ব্রডকাস্টার ‘সুপারস্পোর্টস’কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেছেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন সুপারস্পোর্টসের কারসাজিতেই রিভিউয়ে এমনটা দেখা গেছে। কারণ বল ট্র্যাকিং টেকনোলজি ‘হক আই’ হোস্ট ব্রডকাস্টার সুপারস্পোর্টসের দেয়া ডাটার ওপর ভিত্তি করেই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। স্পিনার রবি অশ্বিন তো বলেই বসেন, ‘ম্যাচটা জেতার জন্য সুপারস্পোর্টস তোমাদের আরো ভালো রাস্তা বেছে নেয়ার দরকার ছিল।’ এ নিয়ে ভারতীয় দলের বোলিং কোচ পরশ মামব্রে বলেন, ‘সবাই দেখেছে কি হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেক কিছু বলে ফেলে। খেলায় এমনটা হয়েই থাকে।’
কোহলিদের মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খোদ ভারতেরই সাবেক ওপেনার গৌতম গাম্ভীর বলেছেন, ‘কোহলি অপরিপক্ব। ভারতীয় অধিনায়ক স্টাম্প মাইকের সামনে এভাবে কথা বলছে, দৃশ্যটা খুবই অসুন্দর। এসব করে তুমি কখনো তরুণদের আইডল হতে পারবে না।’