দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে চুরি হওয়া স্বাস্থ্যের ১৭টি ফাইলের এখনো হদিস মেলেনি। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশে নথিগুলো চুরি করা হয়েছে তার তদন্তের কোনো কিনারা করতে পারেনি সিআইডি। তদন্তে কোনো ক্লু না পাওয়ায় অন্ধকারে আছে তারা। চুরির পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি’র কর্মকর্তারা। নথি চুরির সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তকারীরা বলছেন, ৩ বিষয়কে ঘিরে তারা তদন্ত করছেন।
তার মধ্যে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ভেতর থেকেই ওই ফাইল সরানো হয়েছে। তবে কে ওই ফাইলগুলো সেখান থেকে সরিয়েছে তাকে চিহ্নিত করা যায়নি। দুই নম্বর যে বিষয়টি নিয়ে সিআইডি তদন্ত করছে তা হলো- ফাইলগুলো সরিয়ে দুর্বৃত্তদের কী লাভ হয়েছে তা তারা খতিয়ে দেখছেন। এছাড়াও বাইরের কোনো চক্র এ চুরির সঙ্গে জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ৩টি বিষয় ঘিরে মূলত বর্তমানে তদন্ত চলছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল রেকর্ড তারা করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের নিচতলায় ২৯ নম্বর কক্ষ থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭ নথিসহ একটি ফাইল হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে গত বছরের ২৮শে অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নাদিরা হায়দার। জিডিতে বলা হয়, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ক্রয় সংক্রান্ত শাখা-২ এর কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার ও আয়েশা, ২৭শে অক্টোবর কাজ শেষ করে ফাইলটি একটি কেবিনেটে রেখে গিয়েছিলেন। ওই ফাইলের ভেতরে ১৭টি নথি ছিল। পরদিন অফিসে গিয়ে ওই ফাইলটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সচিবালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চুরির ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র ওপর।
এ বিষয়ে সিআইডি’র সদর দপ্তরের এডিশনাল ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন মানবজমিনকে জানান, ‘স্বাস্থ্যের চুরি হওয়া ফাইলের তদন্তের অগ্রগতি হয়নি। তবে শিগগিরই ওই চুরির ঘটনার মহারথিদের আমরা আইনের আওতায় আনবো।’
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, যে কক্ষ থেকে ১৭টি নথি চুরি হয়েছে সেখান থেকে এর আগে একবার নথি গায়েব হয়েছিল। ওই কক্ষের নথিপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও সতর্ক হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, তারা নথি নিরাপত্তার কথাটি আমলে নেননি। এ কারণে এমন ঘটনার আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন যে, যারা আগে একবার এমন চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা দ্বিতীয়বারও চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সেই বিষয়টিকেও তারা তদন্তের মধ্যে এনেছেন।
সূত্র জানায়, যারা এই চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকতে পারে যে, নথিতে কোনো কেনা-কাটার টেন্ডার যদি থাকে তাহলে তা টেন্ডারবাজদের আগে জানানো। যাতে করে তারা আগাম টেন্ডার ড্রপ করতে পারে এবং টেন্ডারটি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করতে পারে। এজন্য চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্রটি টেন্ডারবাজদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়েছে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।
যেখান থেকে নথিগুলো চুরি হয়েছে সেগুলো ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার ১৭টি ছিল। চক্রটি টার্গেট করেই সেগুলো চুরি করেছে। নথি চুরির পর সচিবালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদারসহ তিনজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে সিআইডি’র কাছে দাবি করেছেন। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও তাদের সিআইডি’র কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।