সাম্প্রতিক সময়ের নিষেধাজ্ঞার সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন ই করা হলো না, দর্শকের মনে যথেস্ট খটকা আছে ।
পৃথিবীর কোনো মানুষই চিরঞ্জীব নয়। প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দিয়ে প্রিয়জনেরা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমরা ঠেকাতে পারছিনা। একেকজন মানুষের জীবনে মৃত্যু একেকটি ছোট কিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে।" সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত-৫৭। যারা কিয়ামতকে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে অস্বীকার করেছে তারা পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেছে। কিন্তু, মানুষের শিক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময় ছোটো ছোটো কিয়ামত সংঘটিত করছেন। ইরশাদ হচ্ছে, "অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি। কি সেই অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি? তুমি কি জান সে অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি কি? সামূদ ও আদ আকস্মিকভাবে সংঘটিতব্য সে মহা ঘটনাকে অস্বীকার করেছিলো।তাই সামূদকে একটি কঠিন মহা বিপদ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আর আদকে কঠিন ঝঞ্ঝাবাত্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। যা তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে আছে যেন খেজুরের পুরানো কাণ্ড। তুমি তাদের কাউকে অবশিষ্ট দেখতে পাচ্ছো কি?" সূরা আল-হাক্বাহ্, আয়াত১-৮। অবশেষে একদিন বড়ো কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ইরশাদ হচ্ছে, "অতঃপর যে সময় শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার। আর পাহাড়সহ পৃথিবীকে উঠিয়ে একটি আঘাতেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। সেদিন সে মহা ঘটনা সংঘটিত হয়ে যাবে। সেদিন আসমান চৌচির হয়ে যাবে এবং তার বন্ধন শিথিল হয়ে পড়বে।" সূরা আল-হাক্বাহ্, আয়াতঃ১৩-১৬। কিন্তু মানুষ বড়োই নির্বোধ। এই পৃথিবীকে চিরস্থায়ী মনে করে। বেপরোয়া হয়ে পড়ে। দুর্বলের ওপর খড়গহস্ত হয় সবল। আল্লাহর সৃষ্টি সুন্দর ও শান্তির পৃথিবীটা অত্যাচার নির্যাতনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। তাদের পরিনতিও হয় ভয়াবহ। অতীত ইতিহাসের বহু ঘটনা কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে। মদিনার শান্তিপূর্ণ কল্যান রাষ্ট্রের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে ধীরে ধীরে মানুষ আবারো স্বৈরাচারী হয়ে পড়ে। আদিপত্য বিস্তারের লড়াই শুরু হয় পৃথিবী জুড়ে। বৃটিশরা একসময় পৃথিবী ব্যাপী জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। বিচারবহির্ভূতভাবে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করা ও জনমানবহীন দ্বীপে নির্বাসিত করা হতো তাদের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের। আলজেরিয়ার স্বাধীনতাযুদ্ধ যখন চলে, এইতো গত শতকে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতাকামীদের ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিত বিমানে করে নিয়ে গিয়ে। নামিবিয়া ছিলো জার্মান ঔপনিবেশিক শাসনে ১৮৯৪ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত। সে সময় হেরেরো এবং নামা উপজাতি জায়গা জমি, ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু দখলে নিয়ে তাদেরকে নির্বাসনে পাঠানো হতো। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের নির্মুলের নির্দেশ দেন নামিবিয়ায় জার্মানি সেনাবাহিনী প্রধান লোথার ফন ট্রোথা। তাঁর নির্দেশে হাজার হাজার মানুষকে বন্দীশিবিরে ঢোকানো হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে বিচারবহির্ভূতভাবে। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চিলি, গুয়েতেমালা, এল সালভেদর, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়েসহ বিভিন্ন দেশে ‘অপারেশন কনডোর’ পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে ওই অঞ্চলে হাজারো মানুষ নিখোঁজ হয়। যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত কুখ্যাত ‘স্কুল অব আমেরিকাস’ গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রশিক্ষণ দেয়। ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের গল্প তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে। ইরাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ইরাকের মাটি তামা করা শেষ করে তারাই বলেছে ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী কোনো অস্র নেই। আমেরিকার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে ফিলিস্তিনের মানুষের সকাল শুরু হয় গুলি খেয়ে, রাতেও বিনিদ্র থাকতে হয় গুলির ভয়ে। রাশিয়া ও চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর লাখ লাখ বিরোধী মতের মানুষ হত্যা করা হয়েছে। মূলত আধিপত্যবাদীদের নীল নকশায় মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নেয়া হয়েছে। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতির স্বর্গ কাশ্মীর জ্বলছে। চীনের উইঘুর, মিয়ানমারের রাখাইন ও শ্রীলংকার মুসলিম জাতিসত্তার মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। বৃটিশ, আমেরিকা ও ফ্রান্স এবং কমিউনিস্ট, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইহুদিরা পৃথিবীতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠন করেছে দেদারসে। এরা আসলে পরকালের জীবনকে অস্বীকার করে চলছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তারা বলে, আমাদের এ পার্থিব জীবনই জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত হতে হবে না। আর যদি আপনি তাদেরকে দেখেন, যখন তাদেরকে রবের সামনে দাঁড় করানো হবে। তিনি বলবেন, এটা কি বাস্তব সত্য নয়? তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের রবের কসম। তিনি বলবেন, অতএব, স্বীয় কুফুরীর কারণে শাস্তি আস্বাদন কর।” সূরা আল-আন‘আম, আয়াতঃ২৯-৩০। কিয়ামত সংঘটিত হয়ে এই পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা পুনরায় সব মানুষকে জীবিত করবেন এবং পাপপুণ্যের হিসেব নেবেন। যারা পরকালীন জীবন বিশ্বাস করেনা তাদেরকে বলা হচ্ছে, “তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর পুনর্বার তিনি সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্য তুলনামূলক বেশি সহজ।” সূরা আর-রূম, আয়াতঃ২৭। “যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব।” সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াতঃ১০৪। সুতরাং, নশ্বর জীবনে আদিপত্য বিস্তার করে মানুষের জীবন বিষাক্ত করে তোলা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে নিষেধাজ্ঞার সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন করা হলো না, দর্শকের মনে একটু খটকা লাগবেই,
এ, কে, এম, জামসেদ
১৬ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ১১:৫২ভারত শুধুমাত্র বাংলদেশের ১টি দলকে পছন্দ করে। যুক্তরাষ্ট কি বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখে? এতদিন যুক্তরাষ্ট বাংলাদেশকে ভারতের চোখছে।