× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান, ২৬ বছর পর ফিরলেন চাঁন মিয়া

অনলাইন

নাজমুল হক শামীম, ফেনী থেকে
(২ বছর আগে) জানুয়ারি ১৬, ২০২২, রবিবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

২৬ বছর পূর্বে ভরপুর যৌবনে স্ত্রীর সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। খেয়ে না খেয়ে অনাদরে দিনমজুরের কাজ করে জীবন পার করে দেয়া সেই মানুষটি বৃদ্ধ বয়সে ফিরলেন স্বজনদের কাছে। ফেনীর সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘সহায়’র’’ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় জীবন সায়াহ্নে এসে বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া মুকমুল ইসলাম চাঁন মিয়া অবশেষে ফিরে যান আপন নীড় শেরপুর জেলায়।

শনিবার বিকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ছোট ভাই ও মেয়ের হাত ধরে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের খাজুরিয়া পাড়ার মন্ডল বাড়িতে ফিরে যায় চাঁন মিয়া।

ফেনীর সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা মিমি বলেন, গত বছরের ১০ই ডিসেম্বর সকালে অসুস্থ অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ছাগলনাইয়া থেকে চাঁন মিয়াকে স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি করায়। ভর্তির পর থেকে তিনি সহায় সংগঠনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হলে তার নাম পরিচয় জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। চাঁন মিয়া নিজের নাম বললেও স্ত্রীর সাথে অভিমানের জেরকে এখনো বহাল রেখে তার পরিবারের সদস্য ও বাড়ির ঠিকানা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সহায়’র ফেসবুক পেজে চাঁন মিয়া ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়।
গত ১৩ই জানুয়ারি বাবার ছবি দেখে তাকে চিনতে পেরে সহায়’র সাথে যোগাযোগ করে চাঁন মিয়ার মেয়ে। পরে মুঠোফোনে বাবার সাথে পরিবারের অন্য সদস্যদের আলাপ করে নিশ্চিত হন চাঁন মিয়া বেঁচে আছেন।

চাঁন মিয়ার ছোট ভাই ব্যবসায়ী শাজাহান জানায়, তার ভাই মকুমুল ইসলাম চাঁন মিয়া তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। বাবা মহিদুল ইসলাম ও মা অম্বিয়া খাতুন। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের খাজুরিয়া পাড়া মন্ডল বাড়ির বাসিন্দা। দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে স্ত্রীর সাথে অভিমান করে ১৯৯৬ সালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান চাঁন মিয়া। গত ২৬ বছর যাবত ভাইকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও তাকে পায়নি।

তিনি আরও জানায়, চাঁন মিয়ার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী রিক্তা বেগম শেরপুরের ভুমি অফিসে অফিস সহায়ক হিসাবে একটি সরকারি চাকরি পান। তার উপার্জন দিয়ে তাদের পরিবার চলতো। গত দুই বছর রিক্তা বেগম অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বিছানায় বন্দি হয়ে আছেন।

সহায় সংগঠনের সহ-সভাপতি জুলহাস তালুকদার জানান, চাঁন মিয়ার এই বাস্তব কাহিনীটি গল্পকেও হার মানিয়েছে। বাড়ি থেকে বের হওযার পর মাঝের ২৬টি বছর কেটেছে অনাদর, অবহেলা আর বঞ্চনায়। কখনো বা দিন মজুরের কাজ কখনো বা ভিক্ষাবৃত্তি করে খাবার জুটিয়েছে চাঁন মিয়া। আধপেটা, আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে এই সময় টুকুতে তার রাত কেটেছে বাস স্টেশন, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন স্কুল বারান্দায়।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন জানান, চাঁন মিয়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ ও মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ায় বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়েছেন।

ছাগলনাইয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিমানি চাঁন মিয়ার ছিলনা কোন জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র। সেই কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কোন পরিচয় শনাক্ত করতে পারে নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর