দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। ফের একদিনে শনাক্ত ৫ হাজার ছাড়ালো। এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ২২২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। নতুন শনাক্তের ৭৭ শতাংশই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ১৪৪ জনে।
নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২২২ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪৭ জন সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৭১১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৩ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে ৮৫৪টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ৬৪২টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে ৫ পুরুষ এবং ৩ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৯৪ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৫০ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে ঢাকায় ৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে ৬ জন সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২ জন মারা গেছেন। নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরে রয়েছেন ৪ হাজার ৩ জন। যা একদিনে মোট শনাক্তের ৭৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৪ হাজার ১৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন, খুলনা বিভাগে ৮৯ জন, বরিশাল বিভাগে ২০ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৪৮ জন শনাক্ত হয়েছেন।
এক সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে ২২২ শতাংশ: দেশে অব্যাহতভাবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৮২ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ হাজার ২৮০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় সর্বশেষ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হিসেবে নতুন রোগী শনাক্তের হার ২২২ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত রোগী ৬১ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সম্পর্কিত ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের সব দেশেই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৩ জনে। আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ জনে। কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনা হবে জানান ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যেই এই টিকা কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাতেও আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই শিক্ষার্থীদের আমরা টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তাদের টিকা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজটি যেন শেষ হয়, আমরা শতভাগ টিকা দিয়ে দিতে পারবো। নাজমুল ইসলাম বলেন, এর পাশাপাশি যেসব পরিবহন শ্রমিক আছেন যারা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য কাজ করছে তাদেরও আমরা টিকা দিতে চাই। কাজেই এই সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা যদি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তাদের টিকা দেয়ার কাজটি আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।