× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এক্সক্লুসিভ / নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মার্কিন দূত- মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের জবাবদিহিতায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

প্রথম পাতা

তারিক চয়ন
১৮ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার তিন বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। বিদায়ের আগমুহূর্তে মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব ছাপা হলো আজ:

মানবজমিন: দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে কীভাবে দেখেন?

আর্ল মিলার: দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক প্রভাব বাড়ানোতেই আমার মনোযোগ। চীনের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেখানেই, যেখানে না করলেই নয়। চীনের সঙ্গে আমরা সেখানেই একসঙ্গে কাজ করি, যেখানে কিছু করার সুযোগ থাকে।

প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছিলেন। আমি মনে করি, সেটা এই অঞ্চলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রেসিডেন্ট কেনেডি বলেছিলেন, একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য মুক্ত ও স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের নিজেদের ব্যবস্থা বেছে নেয়ার বিষয়ে স্বাধীন, যতক্ষণ না তা অন্যের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।


মানবজমিন:শিগগিরই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আপনি কি আশাবাদী? এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান কি?

আর্ল মিলার: যুক্তরাষ্ট্র এটা বুঝে যে, ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দান বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের উপর বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বাংলাদেশের উদারতা এবং মানবতার প্রশংসা করি। আপনারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার শীর্ষ অগ্রাধিকারের একটি ছিল- রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে বাংলাদেশকে সাহায্য করা। সংকট মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত মানবিক সহায়তার দিক থেকে অবদান রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান করেছি। ওই সহায়তার বেশির ভাগই খরচ করা হয়েছে বাংলাদেশের ‘হোস্ট কমিউনিটি’র ৪ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষিত অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১৫৮ মিলিয়ন ডলারই বরাদ্দ করা হয় বাংলাদেশের কর্মসূচির জন্য।

সংকটের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়ে আসছে: রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষেরা যেন স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণভাবে ও স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন এবং এই দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ীদের যেন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। বার্মার (মিয়ানমারের) সামপ্রতিক ঘটনাগুলো এসব ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান করা হয়নি। বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তিদের অনেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী। এই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রশংসা করি, বিশেষ করে এই সময়ে যখন তাদের প্রতি ঝুঁকি বেড়েছে।

মানবজমিন: জিএসপি সুবিধা কেন প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং এটি ফিরে পেতে বাংলাদেশের কি করা দরকার? বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া কি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকারকে প্রভাবিত করবে?

আর্ল মিলার: জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে, বাংলাদেশকে অবশ্যই মার্কিন কংগ্রেসের আইনে বর্ণিত শ্রমিকদের অধিকার সহ জিএসপি পাওয়ার যোগ্য হওয়ার শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

জিএসপি লাভের যোগ্যতা নির্ধারণ করে কংগ্রেস এবং বাংলাদেশ বর্তমানে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার মানদণ্ড পূরণ করছে না। এই মানদণ্ড- সমস্ত জিএসপি সুবিধাভোগী দেশের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য যেগুলোর মধ্যে রয়েছে: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার রক্ষা এবং

বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ রক্ষা অধিকারের মতো বিষয়গুলো।
বাংলাদেশে শ্রম অধিকার রক্ষার জন্য কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের দুই দেশের সরকার প্রতি বছর বেশ কয়েকবার বৈঠক করে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের বলছে যে, আসছে বছর বা তারপর শ্রম আইনের আরও সংশোধনী আনা হবে। আমাদের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা জিএসপি পাওয়ার মানদণ্ড পূরণ করার নির্দেশনা দিতে প্রস্তুত।

আমি মনে করি, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, মার্কিন আইন বেশির ভাগ টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, ফুটওয়্যার এবং লেদার অ্যাপারেলের ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা দেয়া থেকে বিরত রাখে। সেটা যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই এবং তার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ মার্কিন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। কিছু এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কে পণ্য আমদানি করা হয়। তবে ওই যোগ্যতা অর্জনের জন্য দেশটিকে অবশ্যই জিএসপি পাওয়ার যোগ্য হতে হবে।

মানবজমিন: সামপ্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত কি মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে?

আর্ল মিলার: আমাদের আলোচনায় এসেছে এমন সব বিষয়েই আমাদের সম্পর্ক মজবুত এবং তা ক্রমবর্ধমান। মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে তা শক্তিশালী থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অনেক। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ভিত্তি। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা বিশ্বের যেখানেই বা যখনই ঘটুক না কেন।

মানবজমিন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে আপনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই নির্বাচনের প্রসঙ্গে আপনি বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ হবে।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি? যুক্তরাষ্ট্র এখানে কি ধরনের নির্বাচন দেখতে চায়?

আর্ল মিলার: যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়। প্রত্যেক যোগ্য প্রার্থীর প্রচারণার সমান সুযোগ থাকা উচিত। প্রত্যেক যোগ্য ভোটারের নির্বাচনে সমান সুযোগ থাকতে হবে। নিজ নিজ রাজনৈতিক দল বা আদর্শ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। সব পক্ষকে অবশ্যই সহিংসতা এড়াতে এবং তার নিন্দা জানাতে হবে। সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে তাদেরই লাভ হয় যারা গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে না; আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পছন্দকে গুরুত্ব দেই।

গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারস্পরিক সহনশীলতা। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বৈধ অংশগ্রহণকারী হিসেবে মেনে নেয়া এবং পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে নির্বাচন করা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর