× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গার্ডিয়ানের রিপোর্ট / জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকিতে সুন্দরবন বাড়ছে স্থানীয়দের নির্ভরশীলতা

শেষের পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
১৯ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার

খোলপেটুয়া নদীর তীরে থাকেন মোহাম্মদ সাবুদ আলী। তিনি তার জীবন পার করেছেন সুন্দরবনের একদম প্রবেশমুখের গ্রাম গাবুরাতে। কিন্তু কখনো সুন্দরবনকে আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি তার কাছে। এই বন বাংলাদেশের উপকূলবর্তী মানুষদের সাইক্লোন থেকে রক্ষা করে আসছে। এই মানুষগুলো বেঁচেও থাকে মূলত সুন্দরবনের উপরে নির্ভর করে। এখন যখন বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তখন এই বন স্থানীয়দের কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গাবুরার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এখানে সাইক্লোনে তাদের রক্ষাকারী বাঁধ ভেঙে গেছে।
সেখান দিয়ে লবণাক্ত জল প্রবেশ করে গ্রামের মাটিকে চাষাবাদের অযোগ্য করে তুলেছে। যারা এরপরেও এই গ্রামে রয়ে গেছেন তারা মূলত নৌকায় কাজ করে কিংবা দিনমজুর হিসেবে বেঁচে আছেন। যারা এগুলো করতে পারছেন না তারা সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ৫০ বছর পার করা আলী বলেন, আমরা এখন এই নদী আর বনের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছি। সবাই এখন মধু, মাছ ও কাঁকড়ার জন্য বনে যাচ্ছে।
সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সঙ্গে সারি ধরে নৌকা বাঁধা। এগুলোকে ঠিক করে সুন্দরবনের মধ্যে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্থানীয়রাও এখন বুঝতে পারছেন যে, বনের উপরে তাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ অঞ্চলে ব্যবসা ও পর্যটন বাড়তে থাকায় বনের আয়তন কমতে শুরু করেছে। এতে করে এ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার বনকে বাঁচাতে সেখানে প্রবেশে নতুন করে লাইসেন্সের নিয়ম করেছে। কিন্তু স্থানীয়দের কাছে এই পদ্ধতি একটি নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলী বলেন, একসঙ্গে হয়তো ১০০ লাইসেন্স পাওয়া যায়। অথচ ১০ হাজার মানুষ বনে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। তারা পরিবেশ বাঁচানোর নামে আমাদের জীবনকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে। এখানে ৫০ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। সাইক্লোনের কারণে মানুষেরা এখন অন্যত্র সরে যেতে শুরু করেছেন। ড্রেসডেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষক বিশ্বজিৎ মল্লিক। তিনি এই একই অঞ্চলে বড় হয়েছেন। তিনি বলেন, তার সময়েই বনের উপরে নির্ভরতা বাড়তে দেখেছেন তিনি। তবে এখন বাইরে থেকে ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে সেখানে। এতদিন সেখানে গ্রামবাসীরাই তাদের ছোট নৌকা দিয়ে যা পেরেছেন আহরণ করেছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের সম্পদের দিকে চোখ পড়েছে বড় ব্যবসায়ীদেরও। মল্লিক জানান, ৩০ বছর আগেও খুব বেশি মানুষ সুন্দরবনের উপরে নির্ভর করতো না। কিছু ছোট ছোট দল ছিল যারা সুন্দরবনে যেতো মাছ, কাঁকড়া ধরতে কিংবা গোলপাতা সংগ্রহ করতে। তবে তাদের সংখ্যা বেশি ছিল না। তখন তাদের সঙ্গে বনের সম্পর্ক ভালো ছিল। তারা জানতেন, তাদের সবকিছু নিয়ে আসা উচিত নয়। কিন্তু পর্যটন ও বড় ব্যবসা আসার সঙ্গে সঙ্গে এ অবস্থায় পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বড় ব্যবসার কারণে ছোট জেলেরা আর বাঁচতে পারছে না। বাংলাদেশি এই গবেষক জানান, সুন্দরবন এখনো অনেক গাছ ও সম্পদ তৈরি করছে। কিন্তু বনের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখা যাবে অনেক জায়গাই ফাঁকা হয়ে এসেছে।
সুন্দরবনের উপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকাই না শুধু, এই বনকে ভয়ও পান স্থানীয়রা। এখানে আছে দস্যুর দল যারা গ্রামবাসীদের আটক করে মুক্তিপণ নিয়ে থাকে। এ ছাড়া আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুমকিও। মানব বসতির কারণে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটি প্রায়ই লোকালয়ে হামলা চালায়। ৬১ বছর বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা এই বনকে ভয়ও পাই। আমার বড় ভাইকে বাঘ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে আমি এই বনকে ভয় পাই। আবার উল্টো দিকে গত ২০ বছর ধরে আমার পরিবার ক্রমশ সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা এখানে আসে সব কিছুর জন্য। তারা এখানে আসে কাঁকড়া ধরতে, মধু আহরণ করতে, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে। তিনি বলেন, আমরা সুন্দরবনের উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমরা এর উপর নির্ভর করেই বাঁচি আবার আমাদের মৃত্যুও হয় এই বনের কারণে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর