সাদা কালো যুগের টেলিভিশনে আমজাদ হোসেনের ঈদের বিশেষ নাটক ‘জব্বার আলী’ নাটকের জবা-কুসুম, রোকন-দুলালের মায়ের কথা নিশ্চয়ই দর্শক ভোলেননি। এই নাটক সহ অসংখ্য কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী জাহানারা আহমেদ। তিনি এখন কেমন আছেন? বর্তমান কি করছেন? জাহানারা আহমেদ বলেন, ভালো আছি। তবে বয়স হয়েছে। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। কিছুদিন আগে আমার বড় একটা অপারেশন হয়েছে। তাই ওয়াকার নিয়ে আমাকে চলাফেরা করতে হয়। দীর্ঘদিন পর্দায় দর্শক আপনাকে দেখতে পায় না? শেষ কবে অভিনয় করেছিলেন নাটকে? এ অভিনেত্রী বলেন, অনেক বছরই হলো! বিটিভি’র ৪২ পর্বের ‘লকেট’ নাটকে অভিনয় করেছিলাম।
তারপর অভিনয় থেকে বিরতি। ইচ্ছা কি করে না অভিনয়ে ফিরতে? এ অভিনেত্রী বলেন, অবশ্যই করে। একজন শিল্পী আমৃত্যুই অভিনয় করে যেতে চান। কিন্তু মাঝে মাঝে শরীরে বিভিন্ন অসুখ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বার্ধক্যকে তো অস্বীকার করার জো নেই। আপনি প্রথম কবে কোন নাটকে অভিনয় করেছিলেন? জাহানারা বলেন, আমার অভিনয়ের হাতেখড়ি বেতার দিয়ে। পরবর্তীতে বিটিভিতে অডিশন দেই। সেই ৬৫ বছর আগের কথা। বিটিভির ইতিহাসের প্রথম ধারাবাহিক ‘সকাল সন্ধ্যা’ নাটকের ইতিহাসের সাক্ষী আপনি। ভাবতে কেমন লাগে? এই অভিনেত্রী বলেন, কি যে দুর্দান্ত সাহস প্রয়াত নাট্যকার মমতাজ হোসেন ও প্রয়াত বরকত উল্লাহর! ওই সময় ধারাবাহিক নাটকে এতো শিল্পীদের একত্রিত করা, সবার সিডিউল ম্যানেজ করা, স্ক্রিপ্ট তৈরি করা, ভাবতেই অবাক লাগে। এ নাটকের সবার কথা মনে পড়ছে। প্রয়াত রওশন জামিল আপা, পীযূষ,আফরোজা বানু, সাজিয়া আফরিন, শিপলু, রওশন আরা হোসেন, রিনাসহ অনেকের কথা মনে পড়ে গেল।
বিটিভি যখন ডিআইটি বিল্ডিংয়ে ছিল তখন থেকেই তো আপনি বিটিভিতে অভিনয় করতেন?
বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী জানালেন, তখন একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেতে অনেক পরীক্ষা দিতে হতো। কত রিহার্সেল করতে হতো। নাটকগুলোতে কিন্তু প্রাণ থাকতো। একেকটি নাটককে মনে হতো নিজের সন্তানের মতো। কত চেষ্টা আর ভালোবাসা থেকে তৈরি হতো ওইসব নাটক। অবজারভার পত্রিকার তৎকালীন প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত ওবায়দুল হকের ‘দুই দিগন্ত’ নাটকে আমার হাতেখড়ি। আমি প্রখ্যাত সব অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে ‘দুই দিগন্তে’ অভিনয় করেছি।
আপনি তো অভিনেত্রীর বাইরে একজন নাট্যকার? আপনার রচিত কোনো নাটক বিটিভিতে প্রচার হয়েছে? এ অভিনেত্রী বলেন, অবশ্যই হয়েছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে বনমল্লিকা, সিরিয়াল নেকলেস সহ আরও নাটক।
বিটিভিতে যখন প্যাকেজ নাটক শুরু হলো তখন আমার রচিত ‘চিরকুট’ নাটক প্রচারিত হয়। ফেলে আসা সোনালী সময় আর ফিরে আসবে না। প্রযুক্তি আমাদের মেধা-মননকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে। মানুষ চন্দ্রজয় করেছে কিন্তু ছোটবেলায় সেই ছড়া ‘আয় আয় চাঁদ মামা’ বিলীন হয়ে গিয়েছে রকেটের বিকট শব্দের মাঝে।
মতিন খান
২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৫:৫৪জাহানারা আপার অভিনয় ছিল অসাধারণ