প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। এই বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচনা করেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। গত আগস্টে নির্বাচিত রইসিকে বুধবার ক্রেমলিনে আপ্যায়িত করেন পুতিন। ২০১৭ সালের পর ইরানের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’দিনের জন্য মস্কো সফর করছেন রইসি।
এ সময়ে মস্কোতে পুতিনের মুখোমুখি বৈঠকে বসেন তিনি। একটি ওভাল বা ডিম্বাকার বিশাল টেবিলের দু’প্রান্তে দুই নেতা মুখোমুখি বসেন। পুতিনকে রইসি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ইরানের জন্য কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
ইরান বিশ্বাস করে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং তা শুধু বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ফলে আঞ্চলিক এবং বিশ্বে এই দুই দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। উন্নত হবে নিরাপত্তা।
সন্ত্রাস মোকাবিলা, সংগঠিত অপরাধের বিষয় তুলে ধরে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে দুই দেশ একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে। সিরিয়ায় তারা যে সফল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা আফগানিস্তান এবং ককেসাসেও ব্যবহার করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে তার দেশে গৃহযুদ্ধে সমর্থন করে যাচ্ছে ইরান ও রাশিয়া।
রইসি আরো বলেন, ককেসাস ও মধ্য এশিয়ায় যেকোনো অজুহাতে ন্যাটোর অনুপ্রবেশ হলে তাতে স্বাধীন দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ হুমকিতে পড়বে। এখানে বলে রাখা ভাল, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলো উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ঠিক আপনার মতো, আমাদের দেশও ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। বর্তমান ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে মার্কিন একত্ববাদের বিরুদ্ধে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বড় রকম সমন্বয় প্রয়োজন। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ২০ বছরের সহযোগিতা বিষয়ক একটি নতুন চুক্তির খসড়া হস্তান্তর করেছে রাশিয়াকে। এই দুই দেশের মধ্যকার আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় গত বছর। তারপর থেকে তারা সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
মস্কোর উদ্দেশে তেহরান ছাড়ার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার এই সফর হতে যাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ইরান ও রাশিয়া রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা ও মহাকাশ বিষয়ক বিষয়গুলোতে সম্পর্ক বিস্তৃত করতে পারে।
ইরানের প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করে তার প্রশংসা করেছেন ভøাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্কেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। বলেছেন, জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন চুক্তি নিয়ে আপনার মতামত জানাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে পারমাণবিক চুক্তি ইস্যুতে এসব কথা বলেন পুতিন। ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবার তা পুনর্বহাল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমান আলোচনায় মস্কো মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদি এই চুক্তি পুনর্বহাল হয়, তাহলে ইরানের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বেশির ভাগ অবরোধ তুলে নেয়া হবে। বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি কমিয়ে দেবে। সিরিয়ায় দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার সরকার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের হুমকিতে আছে। তাকে সহায়তায় দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ ইস্যুতে ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইরানের সম্পর্ক। উভয় পক্ষ একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।