× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশে মদের চাহিদা ও উৎপাদন বেড়েছে

দেশ বিদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২২ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার

দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অ্যালকোহল বা মদের চাহিদা ও উৎপাদন বেড়েছে ব্যাপক হারে। সরকারি কয়েকটি সংস্থা এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত ৫ বছর ধরে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মদের চাহিদা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে অ্যালকোহলের চাহিদা বাড়ছে। দেশের একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং বলছে, গত ৬ মাসে তাদের উৎপাদিত দেশি মদের বিক্রি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নতুন বছরে তারা তাদের উৎপাদন আরও বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করা বিদেশি প্রকৌশলী এবং কর্মীদের মধ্যে চাহিদার কারণে অ্যালকোহলের চাহিদা এবং উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে আমদানিও।
জানা গেছে, গত ৫ বছরে সরকারের বিদেশি মদ আমদানির ওপর রাজস্ব আয় হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।
দেশে বিদেশি মদ আমদানির মাত্র ৫ শতাংশ বাণিজ্যিকভাবে হওয়ায় রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমেছে। এই অবস্থায় মদ আমদানিকে আরও উন্মুক্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী , ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে ২ কোটি ১৮ লাখ লিটার বিদেশি মদ আমদানি করা হয়। এরমধ্যে মাত্র ১১ লাখ লিটার বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা হয়। বাকি মদ আমদানি করে ৬টি ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ। মদ আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় খুব কম হলেও এই ব্যবসার বাণিজ্যিক বিক্রেতারা বর্তমানে ব্যাপক মুনাফা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
এনবিআর’র তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মদ আমদানিতে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। একই সময়ে দেশে মদ আমদানি হয় ২৮ লাখ লিটার। এর মাত্র ৪ শতাংশ বা ১ লাখ লিটার শুল্ক দিয়ে আমদানি করা হয়। বাকি ২৭ লাখ লিটার আমদানি হয় শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউজের মাধ্যমে। সূত্র মতে, সমপ্রতি শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে তৈরি একটি সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে এনবিআর ও বেসরকারি ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসগুলোর মধ্যে রেষারেষির কারণে কমে গেছে বিদেশি মদের সরবরাহ। এর জের ধরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায় দেশীয় ব্র্যান্ড কেরু অ্যান্ড কোংয়ের মদের চাহিদা। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি উৎপাদন বাড়ায়। এতে করে স্থানীয় মদ বিক্রিতে সরকারের আয়ও বেড়ে গেছে। সাধারণত প্রতি মাসে কেরু অ্যান্ড কো. এর মদ বিক্রি হতো ১২ হাজার ৫০০-১৩ হাজার কেইস। ধীরে ধীরে এ পরিমাণ বাড়ছে। গত বছরের অক্টোবর আর নভেম্বরে তা বেড়ে ১৮ হাজার ৫৭৯ আর ১৯ হাজার ৪৪৬ কেইসে দাঁড়ায়। সমপ্রতি প্রতি মাসে কোম্পানির উৎপাদন ২০ হাজার কেইস ছাড়িয়েছে। ডিসেম্বরে ২০ হাজারের বেশি কেস মদ বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত প্রতি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি বোতল, ৪৬৫ মিলিলিটারের ২৪টি বোতল এবং ১৮০ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে।
কেরু অ্যান্ড কো. এর তথ্য বলছে, কেরুর মদ বিক্রি করে গত নভেম্বরে সরকারের মাসিক রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। গত বছরের জুলাই মাসেই আয় ছিল এর অর্ধেকেরও কম; ২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির শুধু মদ বিক্রি করেই ১৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। এর আগের বছর আয় ছিল মাত্র ৩৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত বছর হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর ভিনেগারের বিক্রি বেড়ে যাওয়াও কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তবে, কোম্পানিটির চিনি ও অন্যান্য পণ্য বিক্রিতে বড় ক্ষতি হওয়ায় বছর শেষে মুনাফা ছিল ২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তারপরও এই মুনাফা এর আগের বছরের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি। এদিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২১ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে আয় হয় ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা ডিসেম্বরে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ১৪ লাখ টাকায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিস্টিলারিটি তার প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বেশি, ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাভের রেকর্ড করে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে লাভ করেছে ১২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটি পণ্য বিক্রিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) দিয়েছে ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আর গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে দেয় ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ২৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার মুনাফা করে, যা প্রতিষ্ঠানটির ৮৪ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড।
কেরু অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, মিলটি আধুনিকায়নে কাজ শুরু হয়েছে। বর্ধিত চাহিদা পূরণে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে ডিস্ট্রিলারি বিভাগটি ঢেলে সাজানো হবে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ আয় হয়েছে। পণ্য বিক্রি হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। চিনি কলসহ যেসব ইউনিটে লোকসান আছে তা কাটিয়ে উঠতে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার লিটার মদ বিক্রি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের কোম্পানি প্রায় ৪৭ লাখ লিটার মদ বিক্রি করেছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশে চাহিদা থাকলেও এখন আমদানিকৃত বিদেশি মদের সরবারহ অনেক কম। এতে দেশি মদের চাহিদা বেড়েছে।
১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মিলটি পরিচালনা করছে। এর রয়েছে ৬টি ইউনিট- সুগার, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যাল, কমার্শিয়াল ফার্ম, আকন্দবাড়িয়া ফার্ম (পরীক্ষামূলক) এবং বায়ো-ফার্টিলাইজার। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও অর্গানিক ফার্টিলাইজার ইউনিটই লাভের মুখ দেখেছে।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারি বিভাগে রয়েছে ৯ প্রকারের মদ: ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্রান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম এবং ওল্ড রাম। অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়ের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড় উৎপাদন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। দেশে এ মূহুর্তে ১৩টি ওয়্যারহাউজ ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মদ। এছাড়া দেশে অন্যতম বড় দুটি পর্যটন হাব কক্সবাজার আর কুয়াকাটায় নতুন দুটি বিক্রয় কেন্দ্র খুলতে যাচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোং। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলের পাশাপাশি আগামীতে তারা কাঁচের বোতলে মদ বাজারজাত করার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছে। গত ডিসেম্বরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ঘোষণা দিয়েছেন, কেরু অ্যান্ড কোংয়ের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে দর্শনার বর্তমান স্থানে দ্বিতীয় একটি ইউনিট হবে। অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ও বিয়ার তৈরির কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ১০২ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যা ২০২২ সালের শেষদিকে চালু হবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বৈধভাবে এক লাখ ৫ হাজার লিটারের মতো অ্যালকোহল আমদানি হয়েছে। বিয়ার আমদানি হয়েছে, প্রায় দেড় লাখ লিটারের মতো। কিন্তু অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানানিয়েছেন, দেশের বার এবং ওয়্যারহাউজগুলোতে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর