× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভার্চ্যুয়াল কার্ড নিয়ে দারাজে প্রতারণা, তদন্তে সিআইডি

প্রথম পাতা

আল-আমিন
২৩ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার

অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের বিরুদ্ধে ভার্চ্যুয়াল কার্ড প্রতারণার বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বিক্রয় করেছে ভার্চ্যুয়াল পণ্য। এতে সরকার ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। এই কার্ড ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে টাকা পাচার করেছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভার্চ্যুয়াল কার্ড ব্যবহারের অনুমতি না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ম্যানিলন্ডারিং মামলার উদ্যোগ নিচ্ছে সিআইডি। তারা ইতিমধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দিয়েছেন। দারাজের কোন ভার্চুয়াল কার্ডের মাধ্যমে ১০০ থেকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত পণ্য বিক্রয় হয়ে থাকে। এই কার্ড দিয়ে ক্রেতা যেখান থেকে ইচ্ছা দারাজের পণ্য কিনতে পারবেন।

এতে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছে বেশি। যে পণ্য বিক্রয় করা হয়েছে তার কোনো কর পায়নি সরকার। কারণ যে কোনো পণ্য বিক্রয়ে সরকারকে শুল্ক দিতে হয়। সরকারকে কর ফাঁকি দেয়া এবং বেশি লাভের জন্য অতি চালাকির পথ বেছে নিয়েছে দারাজ তা মনে করছে সিআইডি। প্রতিষ্ঠানটি টেলিভিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু, সিআইডি’র পক্ষ থেকে দারাজের কয়েকজনকে তলব করার পর সেই বিজ্ঞাপনের মাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যে সব কর্মকর্র্তাকে সিআইডি তলব করেছিল তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন কোনো রুলস নেই যে, তারা কার্ড ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু, সিআইডি ওই কর্মকর্তাদের বলেছে, আইন না থাকলেই কি অপরাধ করা যাবে এমন কথা কোথায় আছে?  করবিহীন যে পণ্য বিক্রয় হয়েছে তারা কেন ভ্যাট দিলেন না এমন প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে সিআইডি’র সদর দপ্তরের অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইকোনমিক কারেন্সি) মো. হুমায়ুন কবীর মানবজমিনকে জানান, ‘ভার্চ্যুয়াল কার্ডে পণ্য বিক্রয়ের বিষয়ে দারাজের কয়েকজন কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। তাদের এই অবৈধ পণ্য বিক্রয়ের বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হলে কোনো যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছি। তিনি জানান, ভার্চ্যুয়াল পণ্য বিক্রয় করার মধ্য দিয়ে সরকারকে কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলমান আছে।  
এ বিষয়ে দারাজের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা তিশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিআইডি’র সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক যখন অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারির বিষয়টি উঠে আসে ওই সময় দারাজের বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। বিশেষ করে ভার্চ্যুয়াল কার্ডে কর  না দেয়ার প্রতারণার বিষয়টি উঠে এলে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। দারাজে বিক্রি হওয়া ভার্চ্যুয়াল পণ্যের মধ্যে রয়েছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, বিভিন্ন চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশন, সফ্‌টওয়্যারের অ্যাক্টিভিশন এবং সাবস্ক্রিপশন, গিফ্‌ট কার্ড, গেম্‌স ও তার ডেভেলপমেন্ট টুল্‌স, গুগল প্লেস্টোর ও অ্যাপ্‌স স্টোরের গিফ্‌ট কার্ড। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি ব্যাংকের ভার্চ্যুয়াল কার্ড, ফিক্সড কার্ড এবং রিচার্জেবল কার্ড বিক্রি করে থাকে। এটি বিক্রির কোনো অনুমতি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাক ও সিআইডি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে দারাজের তিন কর্মকর্তাকে তলব করে সিআইডি’র ফাইন্যান্সিয়াল বিভাগ।
সূত্র জানায়, ওই তিন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তারা কোন নিয়মে এই ভার্চ্যুয়াল পণ্য কেনা-বেচা করছেন? তারা বলেছেন যে, এই পণ্য বিক্রয়ে গ্রাহকদের চাহিদা রয়েছে তাই তারা বিক্রয় করছেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, দেশের কোন কোন নিয়মে এটি বিক্রয় করছেন তারা। তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়াও সরকারকে যে তারা কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন সেটি কোন নিয়মে করেছেন তারও কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, দারাজ গত দেড় বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় করেছে। যার বেশির ভাগই অবৈধ। ভার্চ্যুয়াল পণ্য কিনতে সহজেই বিদেশে টাকা পাচার করা হয়। বাংলাদেশে ভার্চ্যুয়াল পণ্যের ৯০ ভাগই দারাজের। বাকি ১০ ভাগ বিক্রি হয় বিভিন্ন ই-কমার্স এর মাধ্যমে। এফ-কমার্স বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তাদের এই ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, দারাজ ভার্চ্যুয়াল কার্ড বিক্রির বেশির ভাগ অর্থ বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়। সিআইডি বলছে এটা এক প্রকারের হুন্ডি। এতে দেশের টাকা পাচার হবে বিদেশে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দারাজের এক ভার্চ্যুয়াল পণ্য ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তিনি একটি ১ হাজার ডলারের কার্ড কিনেছেন। পরে তিনি পণ্যটিও ক্রয় করেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর