× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জনশক্তি রপ্তানিতে ভোগান্তির মাঝেও স্বস্তি

শেষের পাতা

এম এম মাসুদ
২৪ জানুয়ারি ২০২২, সোমবার

করোনা মহামারির ধাক্কা। অভিবাসী কর্মীদের বিমানবন্দরের সেবাসহ টিকিট পেতে ভোগান্তি। ভ্যাকসিন নিতে দুর্ভোগ। এ রকম অসংখ্য যন্ত্রণার পরেও শুধু গত ডিসেম্বর মাসেই রেকর্ড ১ লাখ ৩১ হাজার দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশি অভিবাসীকর্মী বিদেশ গিয়েছেন। এটি দেশের জনশক্তি রপ্তানির ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ শ্রম অভিবাসনের রেকর্ড হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে, সে সময় ১ লাখের কিছু বেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমান। এদিকে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর কর্মী নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যাচ্ছেন সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারির চরম সংকটকালে মুখ থুবড়ে পড়ে বিদেশে চাকরির বাজার।
তবে ২০২১ সালের আগস্ট নাগাদ তা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তারপর থেকেই অব্যাহত রয়েছে কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ফলে প্রায় মহামারি পূর্ব সময়ের মাত্রায় ফিরছে জনশক্তি রপ্তানি। মহামারি হানা দেয়ার আগে, প্রতি মাসে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিদেশ যেতেন, বেশিরভাগই যেতেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। ২০২১ সালে প্রায় ৬ লাখ ১৭ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে নতুন কর্মী নিয়োগের এ সংখ্যা ছিল ৭ লাখের বেশি। ভ্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধের কড়াকড়িতে ২০২০ সালে এই সংখ্যা মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজারে নেমে আসে বলে বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে করোনার কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস (বোয়েসেল)। গেল বছরে বাংলাদেশিদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। মোট বৈদেশিক চাকরির ৭৪ শতাংশই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। এরপর যথাক্রমে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সিঙ্গাপুর, জর্ডান ও কাতার। ডিসেম্বরে সর্বোচ্চসংখ্যক বা ৮৭ হাজার ২১২ জন কর্মী সৌদি আরবে যান। আমিরাতে যান ১৪ হাজার ৯২৬ জন। ওমানে ১৪ হাজার ৯২২, সিঙ্গাপুরে ৬ হাজার ৫৩৬, জর্ডানে ১ হাজার ৯৭১ এবং কাতারে গিয়েছেন ১ হাজার ৪৩০ জন।

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবে থমকে থাকা শ্রমবাজার আবারো চালু হওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গত বছর রেমিট্যান্স যোদ্ধারা রেকর্ড ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এতে মহামারি কবলিত দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে বেশ সহায়তা করেছে। তারা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতির চাঙ্গাভাব, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিধিনিষেধের কড়াকড়ি শিথিল হওয়ায় বিদেশে কর্মসংস্থান প্রত্যাশীরা তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে পারছেন। এ ছাড়া সৌদি কোম্পানিগুলোতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের নিয়োগের কোটা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোও এই রেকর্ড বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ) বা রামরু’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা দেড়গুণ বেড়েছে। সংস্থাটি তাদের ‘লেবার মাইগ্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ ২০২১: অ্যাচিভমেন্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলেছে, ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী দেশের বাইরে গেছেন। তাদের মধ্যে ৬৮ হাজার ৫৭৯ জন নারী। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৯৯ জন কর্মী দেশের বাইরে যান। এতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে মহামারিপূর্ব পরিস্থিতিতে ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী দেশের বাইরে যান। তবে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ অভিবাসীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম হতে পারে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, মহামারিকালে ৪ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী দেশত্যাগ করতে পারেননি। এখন তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। শ্রমিক অভিবাসনের প্রবণতা ধীরে ধীরে মহামারি পূর্ব অবস্থানে ফিরছে, যা আমাদের জন্য সুখবর। তিন বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেয়ায় আগামী মাসগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রামরু’র তথ্যানুসারে, ২০২১ দেশের মোট অভিবাসী কর্মীদের ৭৪ শতাংশই হলেন অদক্ষ। গেল বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিএমইটি প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে রামরু জানিয়েছে, ২০২১ সালে আধা দক্ষ কর্মী রপ্তানিতে নিম্নগামী প্রবণতা দেখা যায়। এ সময় মোট বিদেশগামী কর্মীর ৩.০৬ শতাংশ ছিলেন আধা দক্ষ, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৪ শতাংশ। সে তুলনায় বেড়েছে অদক্ষ কর্মীদের বিদেশ যাত্রা। ২০২১ সালে ৭৪ শতাংশ স্বল্প-দক্ষ কর্মী দেশের বাইরে যান, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। ২০২১ সালে বিদেশ যাওয়া দক্ষ কর্মীর পরিমাণ ২৩.৩ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪৪ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২শে নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬৪৬ জন অভিবাসী কর্মী (৪ হাজার ৪৪৭ জন নারীসহ) আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এ বছর দূতাবাসগুলো অবৈধ অভিবাসীদের এই নথি দিয়েছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪ লাখ ৮ হাজার অভিবাসী গত বছর মহামারির সময় দেশে ফিরে এসেছেন। অর্থাৎ মহামারির মধ্যে (অভিবাসী কর্মীদের) চাকরি হারানোর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, গেল বছরে শ্রমিক অভিবাসন ছিল মহামারির আগের সময়ের চেয়ে সামান্য কম। তবে চলমান মহামারির কথা বিবেচনায় নিলে, এই হার মন্দ বলা যায় না। কোভিডের কারণে নির্দিষ্ট কিছু খাতে দক্ষ কর্মীর অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, দক্ষ কর্মীদের বিদেশ যাত্রা কমে যাওয়ায় এটাই প্রমাণ হয়, বাংলাদেশ সে সুযোগ নিতে পারেনি।

এদিকে রেমিট্যান্সের ওপর দেয়া প্রণোদনা আগের ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়। তাসনীম সিদ্দিকী মনে করেন, সরকারের এ উদ্যোগে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। তবে তিনি প্রণোদনা ৪ শতাংশ করার পরামর্শ দেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর