জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়ে গোপন করায় ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। একই কারণে এবার শাস্তি পেতে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক ব্যাটার ব্রেন্ডন টেইলর। প্রস্তাব গোপন করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ৪ পৃষ্ঠার বার্তায় নিজেই জানিয়েছেন টেইলর। তার দাবি, পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বিষয়টি দেরিতে আইসিসিকে জানান তিনি। যদিও আইসিসি এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিচ্ছে না টেইলরকে। কীভাবে জুয়াড়ির পাতা ফাঁদে পা পড়েছিল টেইলরের। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
টুইট বার্তায় যা বলেছেন টেইলরআমার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, ভক্ত-সমর্থক ও সাধারণ জনগণ প্রায় দুই বছর ধরে এই বোঝা বয়ে চলেছি আমি। আমাকে অন্ধকার এক জগতে নিয়ে গেছে এটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
সম্প্রতি কাছের বন্ধু ও পরিবারের কাছে ঘটনাটা খুলে বলি। তাদের থেকে যে সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে এটা নিয়ে শুরুতে একটু বেশিই বিব্রত বোধ করেছিলাম।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারতীয় এক ব্যবসায়ীর ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে যাই। স্পনন্সশিপ আর জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করেন তিনি। এ ভ্রমণের বিনিময়ে আমাকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ নিয়ে যে দুশ্চিন্তা হয়নি, সেটি অস্বীকার করবো না। তবে সে সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে প্রায় ৬ মাসের বেতন পাইনি আমরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারবে কি না- সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ ছিল। ফলে আমি ভারতে গেলাম, কথামতো আলোচনা হলো। হোটেলে শেষ রাতে ওই ব্যবসায়ী ও সহকর্মীরা আমাকে এক নৈশভোজে নিয়ে গেলেন।
আমরা মদ্যপান করছিলাম, এমন সময় আমাকে প্রকাশ্যে কোকেন নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়, যেটা তারাও নিচ্ছিল। বোকার মতো তাদের টোপ গিলে ফেলি আমি। অসংখ্যবার এরপর এটা নিয়ে ভেবেছি, সে রাতের ঘটনাপ্রবাহ মনে করে এখনো অসুস্থ বোধ করি। তারা আমাকে কীভাবে বোকা বানিয়েছিল!
পরদিন সেই লোকগুলো আমার হোটেল রুমে ছুটে আসে, আমার কোকেন নেয়া অবস্থার একটা ভিডিও দেখায়। এরপর বলা হয়, আমি যদি তাদের কথামতো আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করি, তাহলে তারা এ ভিডিও ছেড়ে দেবে। আমি ফেঁসে যাই। আর আমার রুমে ছয়জনকে দেখে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা জাগে। আমি ফাঁদে পা দিয়েছি বলে মনে হয়। মনে হচ্ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে ফেলেছি, যেটি আমার জীবন চিরতরে বদলে দেবে।
সে সময় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে বলা হয়, এটা স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য ‘আগাম’, বাকিটা ‘কাজ শেষে পাবে।’ আমি টাকাটা নিই, যাতে ভারত ছাড়তে পারি। আমার মনে হয়েছিল এ ছাড়া উপায় ছিল না, কারণ ‘না’ বলতে পারতাম না। আমার শুধু মনে হয়েছিল, সে জায়গা থেকে বের হতে হবে।
পুরোই এলোমেলো হয়ে পড়ি তখন। এরপর আমার শিঙ্গলস (একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ) ধরা পড়ে। মানসিক সুস্থতার জন্য এমিট্রিপটাইলিনের মতো কড়া ওষুধও দেয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগের ফল দেখতে চেয়েছিল, যেটি আমি দিতে পারিনি, দিতামও না। আইসিসিকে ব্যাপারটা জানাতে ৪ মাস সময় নিই। আমি জানি এটা একটু বেশি সময়। তবে আমার মনে হয়েছিল এভাবে আমি সবাইকে নিরাপদ রাখতে পারবো, বিশেষ করে আমার পরিবারকে। আমি নিজে থেকে আইসিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করি। আশা করেছিলাম, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার নিজের পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করতে পারলে তারা এই দেরি করার কারণটা বুঝতে পারবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা বোঝেনি। তবে নিজের মূর্খতার ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারব না আমি। দুর্নীতিবিরোধী অনেক সেমিনারে ছিলাম আমি, আমরা জানি, এমন সময়েই রিপোর্ট করতে হয়।
আমি জানি লোকে আমার কথা শুনতে চাইবে, কীভাবে এ পর্যায়ে এল ঘটনাটি। তবে অনেক দিনের জন্য নিজেকে ঠিক করতে আমাকে দূরে থাকতে হবে সবকিছু থেকে। আশা করি আমার গল্পটা যে শুনবে, সে উৎসাহিত হবে যে সহায়তা প্রয়োজন সেটা পেতে। আমি জানতাম না, সামনে এসে সব খুলে বললে কয়েক বছরের নরকবাস থেকে এতটা স্বস্তি দেবে। ড্রাগ আর নিকোটিন কাউকেই ছাড়ে না। আমার যে সমস্যা আছে, এটা স্বীকার করতে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে এসব।
আইসিসি আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। আমি তাদের সিদ্ধান্তে মাথা পেতে নিচ্ছি। আশা করবো আমার গল্প অন্য ক্রিকেটারদের ক্রিকেট জুয়ার ব্যাপারে আগাম পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।
আপনাদের এটাও জানাতে চাই। আমি একটা পুনর্বাসন সেন্টারে যাচ্ছি নিজেকে শুদ্ধ করতে ও জীবনের সঠিক পথে ফিরে আসতে। আমাকে এখন নিজের গল্পটা শোনাতে হবে। কারণ আমি জানি তারা আমার গল্প শুনতে চাইবে। তবে কয়েক সপ্তাহের জন্য আমি বাইরে চলে যাচ্ছি ও ভালো হতে চাচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি, এসব সামনে এগিয়ে আসা ও কথা বলা আমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবে যেখানে আমি কয়েক বছর ধরে আছি। শেষে এসে বলতে চাই, যাদেরকে দুঃখ দিয়েছি তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।