যেকোন সময় ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। ওই অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বাজা শুরু হয়ে গেছে। হামলা হলে দেশকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রেখেছে প্রায় ৮৫০০ সেনা সদস্যকে। তাদেরকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বল্প সময়ের নোটিশে মোতায়েন করা হতে পারে তাদেরকে। এমন তথ্য পেন্টাগনের। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পরিবার পরিজনকে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
জনগণকে ইউক্রেন ও রাশিয়া সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কিয়েভে দূতাবাসের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার শুরু করেছে বৃটেন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে যুদ্ধংদেহী একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ওই অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও তাদের মিত্রদের অভিযোগ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেকোনো সময়ে ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারেন। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অভিন্ন কৌশল নির্ধারণের জন্য সোমবার ইউরোপিয়ান মিত্রদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যে ৮৫০০ সেনাকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, তাদেরকে মোতায়েনের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। সেখানকার প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ান সেনাদের গতিবিধি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাটো সামরিক জোট তাহলেই এসব সেনাকে মোতায়েন করা হবে। নিজে থেকে ইউক্রেনে এসব সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করতে এরই মধ্যে সেখানে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা বা বিবেচনা করছে ন্যাটোভুক্ত কিছু দেশ। এর মধ্যে আছে ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রায় ৯০ টন ‘প্রাণঘাতি সহায়তা’ বা মারণাস্ত্র এসে পৌঁছেছে ইউক্রেনে। সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের আত্মরক্ষায় ব্যবহৃত হবে তা।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁন্দ্রেজ দুদা এবং ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফোন করা হয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতা উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং চার্লস মিশেলকেও। পরে বাইডেন বলেছেন, এসব নেতার সঙ্গে আমি খুবই সুন্দর মিটিং করেছি। ইউরোপিয়ান সব নেতাই সর্বসম্মত মত দিয়েছেন।
ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার শত্রুতা বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক ঐক্যের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা। ইউক্রেনে যদি রাশিয়া অনুপ্রবেশ করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে অনাকাঙ্খিত পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ সক্রিয় করতে একমত হয়েছেন তারা। এর আগে সোমবার বরিস জনসন সতর্ক করেছেন, তার কাছে ভয়াবহ গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে। তাতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি ‘লাইটনিং রেইড’ পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। তিনি আরো বলেন, পরিষ্কার গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার ৬০টি যোদ্ধা গ্রুপ অবস্থান করছে। একটি ‘লাইটনিং ওয়ার’-এর পরিকল্পনা আছে তাদের।
এর প্রেক্ষিতে আমরা ক্রেমলিনকে, রাশিয়াকে পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তা হবে এক বিপর্যয়। এরও আগে বৃটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেনে মস্কোপন্থি একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ করেছে। এক্ষেত্রে পুতিনের পছন্দের তালিকায় থাকা চারজন ব্যক্তির নামও প্রকাশ করেছে তারা। তার মধ্যে অন্যতম ইউক্রেনের সাবেক এমপি ইয়েভহেন মুরায়েভ। তিনি নিজে এমন অভিযোগকে বাজে কথা বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন অভিযোগকে মিথ্যা তথ্যের প্রচার বলে অভিযোগ করেছে।
ক্রেমলিনের বক্তব্য, তারা ন্যাটোকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। এ জন্য তারা আইনগত নিশ্চয়তা চায় যে, ন্যাটো আর পূর্বমুখী বিস্তার ঘটাবে না। বিশেষ করে প্রতিবেশী ইউক্রেনে। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য বানানো হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বিষয়টি ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে নয়। উত্তেজনাটা হলো রাশিয়ান আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে।
সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়ে গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে আলোচনায় বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তাতে রাশিয়া আশা প্রকাশ করেছে যে, আবেগকে প্রশমিত করা উচিত। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সৃষ্টি করে যে উত্তেজনা তা প্রশমিত করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল-এর মূল্যের বড় পতন হয়েছে। ইউক্রেনে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে অর্থনৈতিক ভয়াবহ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কয়েক মাস ধরেই স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির প্রস্তুতি চালিয়ে আসছে ইউক্রেন। কিয়েভকে রক্ষার জন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী একজন নারী চিকিৎসক মার্তা য়ুজকিভ যোগ দিয়েছেন তাতে। তিনি বলেছেন, অবশ্যই আমি উদ্বিগ্ন। আমি একজন শান্তিকামী নারী। যুদ্ধ শুরু হোক এটা চাই না। কিন্তু যদি কোনোওভাবে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে দেশকে প্রতিরক্ষা দিতে আমাকে প্রস্তুত থাকা উচিত।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়াকে কেড়ে নিয়েছে রাশিয়া।
এরপর সেখানে গণভোট দিয়েছে। তাতে ক্রাইমিয়াবাসী পশ্চিমে রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে সেখানে ইউক্রেনের দাবি অবৈধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীরা রাশিয়া সীমান্তের কাছে পূর্ব ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করে। এ নিয়ে সেখানে সংঘাতে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষের জীবন গেছে। ২০১৫ সালে শান্তিচুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন থেকে অনেক দূরে এখনও।