স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধভাবে দখল হওয়া সমস্ত খালগুলোকে উদ্ধার করা হবে। উদ্ধারকৃত খালসমূহ সংস্কার করা হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি আধুনিক-দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য নগর উপহার দেয়া সম্ভব হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় রামচন্দ্রপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, যারা সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তারা স্বাভাবিক ভাবেই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে সব জায়গায় একটি মেসেজ চলে যাবে যে অবৈধভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র এখানকার খাল উদ্ধার হবে আর অন্যগুলো হবে না- এমনটা ভাবা উচিত হবে না। ঢাকা শহরের যত জায়গা দখল করে অবৈধ নির্মাণ করেছেন বা করার পাঁয়তারা করছেন তারা সতর্ক হবেন। কোনো দখলবাজদের বরদাশত করা হবে না।
জনগণের কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবকিছু করবে সরকার।
তিনি আরও জানান, রাজধানীর সকল খালগুলোর একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ তৈরি করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে একাধিক সভা করে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ঢাকা শহরের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধির হাতে দায়িত্ব দিলে খাল উদ্ধার করা সহজ হবে। কারণ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনগণ থাকে। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করলে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। সে উদ্দেশ্যেই রাজধানীর কিছু খাল ঢাকা ওয়াসার নিকট থেকে দুই সিটি করপোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দুই সিটি করপোরেশন জোরালো অভিযান চালিয়ে খাল উদ্ধারকাজ শুরু করেছে যার ফলাফল এখন দৃশ্যমান।
তিনি আরও বলেন, কয়েকজন মানুষের জন্য রাজধানীর দুই কোটি মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হতে পারে না। আর এটা কখনোই করতে দেয়া হবে না। রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে ট্রাক ও বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করার কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যেখানে যে পরিমাণ রাস্তার দরকার তা নির্মাণ করতে হবে। আবাসনের জায়গায় আবাসন হবে। সবার জন্য কল্যাণকর ঢাকা গড়তে যা যা দরকার তার সবই করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ঢাকা শহরে এখনো ৫৩টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। এসব খাল উদ্ধার করে যদি নৌ-চলাচল ও দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন করা যায় তাহলে মানুষ ভেনিস ঘুরতে না গিয়ে ঢাকা শহরে আসবে।
এসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, যত প্রতিবন্ধকতাই থাকুক না কেন জনগণের সহায়তায় জিআইএস ম্যাপ অনুযায়ী নগরীর প্রত্যেকটি খালই? উদ্ধার করা হবে। টানা ৩ দিনের অভিযানের ফলশ্রুতিতে অস্তিত্বহীন লাউতলা খালটি এখন দৃশ্যমান, স্থানীয় জনগণসহ যাদের আন্তরিক সহযোগিতায় অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে তাদের প্রতি রইলো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
তিনি বলেন, বসিলাবাসীর স্বার্থেই প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট লাউতলা খালটিকে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করে এতে পানি প্রবাহের সৃষ্টি করা হবে। অবৈধ দখলদারদের নামে কোনো বৈধ নোটিশ ইস্যু করা হবে না, বিনা নোটিশেই তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। তাই ইতিমধ্যে যারা অবৈধভাবে খাল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ দখল ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। মেয়র বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ডিএনসিসি’র আওতাধীন খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে, প্রত্যেকটি খালে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াক?ওয়ে নির্মাণ এবং যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সকল খালের উভয় পাশেই নির্ধারিত সীমানার কমপক্ষে ২০ ফুট পর্যন্ত কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। সময়ের চাহিদায় নগরীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলো সরিয়ে সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে।
এসময় ঢাকা-১৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান, ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক এবং স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।