শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে দেশের ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘দেশের ৩৪ জন ভিসি বলেছেন- এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করলে সবাই পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ এই জিনিসটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভিসি আছে, যার আদর্শ অনেক বেশি, যার জন্য অন্যরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার ধারণা সেই শখ সহজে মিটবে না। আর এই ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের এই আন্দোলনের ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা মডিফিকেশন হয়েছে।
এটা নতুন করে বিশ্লেষণ করতে হবে যাকে ভিসি হিসেবে পাঠানো হয়েছে তিনি কি ভিসি হওয়ার যোগ্য কিনা! আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা বলতে ভালো লাগে না। তোমরা যা করেছো সেটার কোনো তুলনা নাই।
যে আন্দোলনটা তৈরি করেছো দেশের প্রত্যেকটা ইয়ং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে। অনেক বড় বড় মানুষ যোগাযোগ করেছেন সে জন্য আমি এখানে আসলাম।’
বুধবার ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে ভিসির বাস ভবনের সামনে অনশনস্থলে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক সাথে ছিলেন। এর আগে বুধবার ভোর রাত ৪টার দিকে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য এবং দাবি শোনার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে আসেন। এসময় জাফক ইকবাল দম্পতি অনশনরত শিক্ষার্থীদের সকল অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষার্থীদের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, বিদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী ফোন করেছে। তারা বলেছে যে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। স্যার আপনি বিষয়টি দেখেন। তোমাদের টাকা দেওয়ার কারণে তাদেরকে পুলিশ ধরছে। আমি তোমাদেরকে অফিসিয়ালি সবাইকে দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দিতে চাই। তোমাদেরকে সহযোগিতা করলে যদি আমাকে অ্যারেস্ট করে তাহলে করুক। আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কিনা? এসময় তিনি ১০ হাজার টাকার একটি প্যাকেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন।
এসময় অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে কিন্তু আমরা সিআইডি পুলিশ বুঝি না, আমাদের কথা দিয়েছে ছেলেদের ছেড়ে দিবে, তাদের কালকেই ছেড়ে দিবে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, পুলিশের প্রধান বেনজীর সাহেবকে বলবো আপনারা ছেলেদের গ্রেপ্তার করবেন না। কারণ দেশে যত বড় কিছু হয়েছে সব ছাত্ররা করেছে। ছাত্ররা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ হত না। ছাত্রদেরকে বিশ্বাস করেন। পুলিশ দিয়ে ছাত্রদেরকে পিটাবেন না। যেটা করেছেন সেটা অনেক বড় সর্বনাশ হয়েছে। এখন তদন্ত কমিটি, এটা সেটা করবেন, নানাভাবে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করা হবে। ছাত্ররা যে গুলি করেছে তার একটি ছবি দেখান। সবার কাছেই স্মার্টফোন আছে, সিসিটিভি থাকে। আপনি দেখান একটি ছবি যে ওরা গুলি করেছে, ওরা বহিরাগত।’ এসময় অনশন ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে কথা দিয়েছো বাচ্চাগুলোর অনশন ভাঙাবা, আশা করবো কথা রাখবা।’ এসময় সকল শিক্ষার্থী ‘জি স্যার’ বলে সহমত পোষণ করেন।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছো। আমি যখন দুপুরে কথা বলছিলাম আমি ধরেই নিয়েছিলাম এখানে একটি ডাক্তারের টিম আছে, নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে কিন্তু এখানে এসে খবর পেলাম শুধু যে ডাক্তার নাই সেটা না, যারা ছিল তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কি হতে পারে। এটা অলমোস্ট ছেলে মেয়েদের মার্ডার করার একটা পরিকল্পনা। আমি শুনে খুবই দুঃখ পেলাম, সম্ভব হলে আমি উপরের মহলকে বিষয়টি জানাবো। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম যে ডাক্তার ছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ক্যানোলা ঢুকিয়ে স্যালাইন দিচ্ছে। যাদেরকে এখানে আমি দেখেছি তাদের অবস্থা যদি এত খারাপ হয়, তাহলে বাকি ২০ জনের কি অবস্থা, তা ভাবতেই কষ্ট লাগছে। ফুসফুসে পানি চলে আসতেছে, এটা একটা সুপার মেডিকেল ইমার্জেন্সি। তাদের সাহায্য করা যাবে না, এর চেয়ে বড় অমানবিক কাজ হতে পারে না।’
এসময় ইয়াসমিন হক বলেন, ‘খাবার-দাবার সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হলের ডাইনিং এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সব দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এত ছাত্র খাবে কোথা থেকে। তোমরা একটু জাস্ট ভিসির বিদ্যুৎ কেটে ছিলে, যাতে তোমার কষ্ট সে বুঝতে পারে। আবার তোমরা তা দিয়ে দিয়েছো। খাবার বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ বানিয়ে এখান থেকে সরাবে, হোয়াট ইজ দিস? একটা ভিসি থাকা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিসি নিজে কেন পদত্যাগ করে না। এটা কি ইগোর সমস্যা নাকি?
এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভেতর যে ক্ষোভ আছে তা নিয়ে তিন বছর আগে যাওয়ার সময় আমি স্পষ্ট ভাষায় ভিসিকে চিঠি লিখেছিলাম। যাদের পুলিশ ধরেছে তাদেরকে কিছু করবে না। আমাকে কথা দেওয়া হয়েছে কালকে এদের কোর্টে তুলে ওদের জামিন দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে আর ডাকা হবে না। আমাদেরকে উপর লেভেল থেকে কথা দিয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না।’
ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা যেটা এচিভ করার কথা সেটা তোমরা এচিভ করেছো। বাংলাদেশের একটা বড় পলিটিক্যাল পার্টি এরকম তোমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাঝে কাজ করতে পারতো না। এ সময় আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জাফর ইকবালকে বলেন, স্যার আপনি আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ভয়ংকর লোকটার অধীনে যাতে আমাদের থাকতে না হয়। এখান থেকে দ্রুত যেন চলে যায়। আমরা তাকে এখানে দেখতে চাই না।
এসময় জাফর ইবকবাল বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তোমরা জানো না তোমরা কি করেছো। এসময় জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক বলেন, তোমার স্যার যেটা বলছেন, তোমাদের সাথে কথা না রাখা মানে তোমাদের স্যারের সাথে কথা না রাখা। এত উপরের মহল কথা দিয়েছে। তোমরা সিউর থাকো। এখন তোমরা অনশন ভাঙো ১ ঘন্টা অনশন রাখাও তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
তোমরা অনেক বড় কিছু করেছো, দেশের বড় পলিটিক্যাল পার্টিও মানুষের ভেতর যেতে পারেনি। এটা মনে করো না যে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। কোনো ব্যক্তি ভিসি থাকার পর যখন দ্বিতীয়বার থেকে যেতে চায় তখন ভালোভাবে যাচাই করে দেওয়া উচিৎ। তাহলে এমন ব্যক্তি আসবে না। আবার উনাকে ভিসি বানানোতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়েছে। তিনবছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ক্যাম্পাসের আসল পিকচার নেয়া উচিৎ। আমাদের ভিসি হতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমরা ভিসি হতে চাই নাই। আমরা কথা দিচ্ছি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। এসময় বুধবার সকালে সবার অনশন এক সাথে ভাঙানো হবে বলে জানান তিনি, এতে উপস্থিত সবাই সম্মতি প্রদান করে।
গত বুধবার (১৯ তারিখ) থেকে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ জন শিক্ষার্থী ১৬২ ঘন্টা অনশন থাকার পর শিক্ষার্থীরা ড. জাফর ইকবালের হাতে অনশন ভাঙেন।
জিলানী
২৬ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৭:১৭ডক্টর ইকবাল স্যার, ধন্য আপনি,ধন্য আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান ।আপনিই আর্দশ আমার ।