× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী /মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে

প্রথম পাতা

সংসদ রিপোর্টার
২৭ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার

বিএনপি প্রথম লবিস্ট নিয়োগ করেছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য। দেড় লাখ ডলার ব্যয়ে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজের জন্য ৮টি প্রতিষ্ঠানকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। লবিস্টের জন্য ব্যয় করা এই অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া বিবৃতিতে এতথ্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বিএনপি’র প্রতি ধিক্কার জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ও বিএনপি’র সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার ও বিএনপি’র মধ্যে মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে দেশের অনিষ্ঠ করা যাবে না মন্তব্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান, কী করেন সে খোঁজ নেয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করে বিএনপি নেতার ছেলে সিজার।
তারা জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজাও হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় ১২টি আন্তর্জাতিক এনজিও জাতিসংঘের পিস কিপিংয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। তারা চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও স্পেকুলেশন তুলে ধরে বলেছেন, র‌্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভঙ্গ করছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এক নম্বর পিস কিপার। সবচেয়ে বেশি সৈন্য আমরা শান্তিরক্ষায় পাঠাই। আমরা ভালোভাবে কাজটা করি বলেই বাংলাদেশ থেকে তারা সৈন্য নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের র‌্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এই অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে তাদের শান্তিরক্ষায় না নিতে বলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ই নভেম্বর তারা এই অনুরোধ করে। দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। জাতিসংঘ তাদের উত্তরে বলেছে, যখনই কোনো লোককে শান্তিরক্ষায় নেয়া হয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে তারপর তারা কাজটা দেয়। সুতরাং এসব অপপ্রচার দুরভিসন্ধিমূলক কাজ জনগণের বিরুদ্ধে। র‌্যাব একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, এ রকম ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন বুঝতে পেরে তারাও দুঃখিত হবেন, তারাও লজ্জা পাবেন। দেশের অমঙ্গল ডেকে এনে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিএনপি নানামুখী অপচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ দলের নেতারা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলেছেন, দেশের সব রকমের সাহায্য বন্ধ করতে। আমেরিকার নিরাপত্তা বাংলাদেশের কারণে বিঘ্নিত হবে।

দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধী বিচার যখন চলে তখন ইউনাইটেড স্টেট গভমেন্টকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেই বিচার ভুল প্রমাণিত করার জন্য চেষ্টা করে ‘পিস এন্ড জাস্টিস’ নামের জামায়াত-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠান। তারা এক লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। তারা যুদ্ধাপরাধী মামলা বন্ধ করার জন্য পরবর্তীতে কন্ট্রাক্ট পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আউট রিচ নামে আবার লবিস্ট নিয়োগ করে। শুধু জামায়াত নয়, বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার খরচ করেছে। তারা প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার খরচ করেছে। এগুলো আমেরিকার ওয়েবসাইটে আছে সবাই দেখতে পাবেন। বিএনপি ‘একিন গভমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও হুইফ্রেড তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করে। এরপর তারা একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেবেন বলে নিয়োগ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুবই তাজ্জবের বিষয় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তাদের (বিএনপি) কিছু প্রতিনিধি আমেরিকায় গেছেন। সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেন। সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করা অন্যায় না। লবিস্ট কি কারণে নিয়োগ হয়েছে, সেটা মুখ্য বিষয়। লবিস্টের টাকা কোথা থেকে গেল? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাদের লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন, এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন যেগুলো দেশের মানুষ জানলে শুধু দুঃখিত না, তারা ধিক্কার দেবে। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। তারা চিঠি দিয়ে আমেরিকানদের বলেছে, তোমরা সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দাও। বন্ধ করলে কি হবে? এতে দেশের নাগরিক দুই বেলা খেতে পারে, গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ পায়, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তা ব্যাহত হবে। তারা দেশের উন্নয়ন বন্ধের জন্য আমেরিকা সরকারকে বলছে। নিশ্চয়ই বিএনপির কর্মীরা কেউ চাইবেন না, এ দেশের অমঙ্গল হোক। এ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হোক।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে বিবৃতিতে র‌্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই র?্যাবের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে। র?্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কিছু সময় লাগবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমেরিকানদের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবো, আমার বিশ্বাস র?্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন উইথড্র করবে। প্রসেস কালকে হবে না। সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।’ আব্দুল মোমেন বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের অপপ্রচারের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তারা আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি, সেই সঙ্গে পৃথিবীতে বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে, তাদেরও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করছে যে র?্যাব খুব খারাপ প্রতিষ্ঠান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র?্যাব জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দেশে সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে। মানব পাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। এই বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের মিথ্যা তথ্য দেয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, র?্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে তার জন্য তারা পৃথিবীর টেররিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং টেররিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র?্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকে স্বয়ং আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এ রকম দেশ, যেখানে খুব উত্তপ্ত ছিল, সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সরকারকে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘লবিস্ট’ নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর