× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সার্ধশত জন্মদিনেও অমর অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস

শেষের পাতা

কাজল ঘোষ
২৮ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

আজকের যে দেশমাতৃকা বা স্বদেশের জন্য লড়াইয়ের কথা শুনি, যে স্বাধীন দেশে বাস করি, তা কিন্তু একদিন বা দু’দিনে সম্ভব হয়নি। তা সম্ভব হয়েছে অসংখ্য বিপ্লবীদের জন্য। প্রায় তিনশত বছর আগে এই দেশটি ছিল বৃটিশদের পদানত। সমগ্র ভারত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে ছিল। ব্যবসা করতে এসে ইংরেজরা এ দেশের শাসক হয়ে বসে। বৃটিশ রানী তার শাসন বাস্তবায়ন করে ভারতে ইংরেজ সেনাদের দিয়ে। কিন্তু সেই একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে দিয়েছিল আমাদের এখানকার একদল দামাল ছেলে। যারা ফিরিয়ে দিয়েছিল আমাদের স্বকীয়তাকে।
আজ তেমন একজন বিপ্লবীর জন্মদিন। অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাসের জন্মদিন। যিনি এই ঢাকাতেই গড়ে তুলেছিলেন অনুশীলন সমিতি। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বৃটিশ দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে। উইকিপিডিয়াপ্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাসের জন্ম আজ থেকে দেড়শত বছর আগে ১৮৭৭ সালের এই দিনে। তিনি পরলোকগমন করেন ১৯৪৯ সালের ১৭ই আগস্ট।
১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিপিন চন্দ্র পাল ও প্রমথ নাথ মিত্রের সফর পুলিন বিহারির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বিদেশি শৃঙ্খল থেকে ভারত মুক্তির জন্য প্রমথ নাথের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিন বিহারী দাস এগিয়ে আসেন এবং তার উপর ঢাকায় অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পড়ে। অবশেষে সেই বছরেরই অক্টোবরে ৮০ জন যুবক নিয়ে ঢাকায় পুলিন বিহারী গড়ে তুলেন অনুশীলন সমিতি। ধীরে ধীরে তার দক্ষতায় সমিতির পাঁচ শতাধিক শাখাও স্থাপিত হয় বিভিন্ন স্থানে। এরপর তিনি  সেই ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ন্যশনাল স্কুল’। যেখান থেকে তৈরি হতো বিপ্লবী। ঢাকার পূর্বতন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অ্যালেনকে সরানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। ১৯০৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর অ্যালেন যখন ইংল্যান্ডে ফেরার উদ্দেশ্যে গোয়ালন্দ স্টেশনে পৌঁছলেন তখন তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন।  কিছুদিন পরেই চারশত জন দাঙ্গাবাজ পুলিন বিহারীর বাড়িতে আক্রমণ করলে তিনি মাত্র কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ঐ দাঙ্গাবাজদের  মোকাবিলা করেন।
১৯০৮ সালে পুলিন বিহারীকে ভূপেশ চন্দ্র নাগ, শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তী, কৃষ্ণ কুমারমিত্র, সুবোধ মল্লিক, অশ্বিনী দত্ত সহযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মন্টোগোমারি কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়। কিন্তু শত অত্যাচার, শত নিষ্পেষণ তার বিপ্লবী সত্তাকে অবদমিত করে রাখতে পারেনি ইংরেজরা। ১৯১০ সালে জেলের অন্ধকার কুঠুরি  থেকে মুক্তি পেলে আবার তার বৈপ্লবিক কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯১০ সালের জুলাই মাসে ৪৬ জন বিপ্লবী সহযোগে পুলিন বিহারী দাশকে ঢাকা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরও ৪৪ জনকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিচারে পুলিন বিহারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং আন্দামানে সেলুলার  জেলে স্থানান্তর করা হয়।

১৯১৮ সালে পুলিন বিহারীর সাজা কিছুটা কমে এবং তাকে বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখা হয় এবং ১৯১৯ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করার  চেষ্টা করেন কিন্তু তখন তার  সেই সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ করার ফলে তার সদস্যরা এখানেও ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিনি ১৯২০ সালে ভারত  সেবকসংঘ নামে নতুন দল গঠন করেন। এরপর ব্যারিস্টার এস.আর. দাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হককথা’ এবং ‘স্বরাজ’ নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং  সেখানে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সমালোচনা করেন। সমিতির কাজ  গোপনে চললেও সমিতির সঙ্গে তার বিরোধ এরপর প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর সমিতির সঙ্গে তিনি সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন এবং ভারত  সেবকসংঘকে ভেঙে ১৯২২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর  নেন।

যেভাবে বেড়ে ওঠেন পুলিন বিহারী দাস:
মাদারীপুর মহকুমার লনসিং গ্রামের শিক্ষিত সচ্ছল মধ্যবিত্ত দাস পরিবারে নবকুমার দাসের পুত্ররূপে জন্ম পুলিন বিহারী দাসের। পিতা ছিলেন মাদারীপুর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল  কোর্টের উকিল। ১৮৯৪ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং  সেখানে শিক্ষা গ্রহণকালেই তিনি ঐ কলেজের গবেষণাগারের সাহায্যকারী তথা ব্যবহারিক শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাল্যকাল থেকেই পুলিন বিহারীর শরীরচর্চার দিকে ছিল প্রবল ঝোঁক এবং তিনি একজন দক্ষ লাঠিয়ালও ছিলেন। কলকাতায় সরলা  দেবীর আখড়ার সাফল্য দেখে তিনি ঢাকার টিকাটুলিতে ১৯০৩ সালে একটি নিজস্ব আখড়া চালু করেন। ১৯০৫ সালে তৎকালীন বিখ্যাত লাঠিয়াল মুর্তাজার কাছ  থেকে লাঠিখেলা ও অসি ক্রীড়ার  কৌশলও রপ্ত করেছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ওনার সম্মানে ‘পুলিন বিহারী দাশ স্মৃতিপদক’ নামে একটি পদক প্রচলন করেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর